ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী

ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী downlead now



ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী

যারা সত্যিই একটি ইসলামী সমাজ কায়েম করতে চান তাদের-


সর্বপ্রথম ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে, আমাদের জাতির মধ্যে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার মোটেই অভাব নেই। আসল অভাব আগ্রহ ও উদ্যোগ গ্রহণের এবং তার চাইতেও বেশী অভাব যোগ্যতার। এ কাজের জন্য যে মৌলিক গুণাবলীর প্রয়োজন অধিকাংশ লোকের মধ্যে তা অনুপস্থিত।


দ্বিতীয় যে বিষটির প্রতি তীক্ষ্ণ  নজর রাখতে হবে তা হচ্ছে আমাদের জাতির সমগ্র প্রভাবশালী অংশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজে বিকৃতি ও ভাঙ্গন সুষ্টিতে মূখর। আর যারা বিকৃতি ও ভাঙ্গনের কাজে লিপ্ত নেই তারাও সৃষ্টি ও বিন্যাসের চিন্তামুক্ত। সমাজ সংস্কার ও গঠনের প্রচেষ্টারত ব্যক্তিদের সংখ্যা মুষ্টিমেয়।


তৃতীয় যে বিষয়টি থেকে গাফেল থাকা উচিৎ নয় সেটি হচ্ছে, বর্তমান যুগে সমাজ জীবন পরিগঠন ও ভাঙ্গার বৃহত্তম শক্তি হচ্ছে সরকার। আর যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকে সেখানে জনগনের উপযুক্ততা বা অনুপযুক্ততা ব্যক্তিদের হাতে শাসন ক্ষমতা সোপর্দ করার ওপরই সরকারের উপযুক্ত বা অনুপযুক্ত পূর্ণতঃ নির্ভরশীল। ভাঙ্গার কাজে যারা লিপ্ত থাকে তারা জনগণ যাতে কোনদিন নির্ভুল নির্বাচনের যোগ্য না হতে পারে সেজন্যে জনগণকে প্ররোচিত করার কাজে যতো শক্তি ব্যয় করে অন্য কাজে ততো ব্যয় করে না।


এ তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে একটি ভয়াবহ দৃশ্য সৃষ্টি করে যা প্রথমাবস্থায় মানুষের মনে নিরুৎসাহের সঞ্চার করে এবং চারদিকের নৈরাশ্যের মধ্যে সে চিন্তা করতে থাকে, এখানে কোন কাজে সফলতা কি সম্ভব? কিন্তু এগুলোর বিপরীতে আরো কতিপয় বিষয় রয়েছে যেগুলো সামনে রাখলে নিরাশার মেঘ কেটে যেতে থাকে এবং আশার আলোকচ্ছটায় চতুর্দিক  উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।


প্রথমটি হচ্ছে আমাদের সমাজ কেবল অসৎ লোকের আবাসস্থল নয়, এখানে কিছু সংখ্যক সৎলোকও আছে। তারা কেবল সংশোধন ও চরিত্র গঠনের আকাঙ্খা মনে পোষন করে না, বরং তাদের মধ্যে আগ্রহ ও যোগ্যতা রয়েছে। আর এর মধ্যে কিছুটা অভাব থাকলেও সামান্য যত্ম ও প্রচেষ্টায় তা পরিবর্ধিত করা যেতে পারে।


দ্বিতীয় হচ্ছে, আমাদের জাতি সামগ্রিকভাবে অসৎপ্রবণ নয়। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার দরুন তারা প্রতারিত হতে পারে এবং প্রতারিত হয়ে আসছে, কিন্তু প্রতারণাকারীরা যে বিকৃতির সম্মুখীন করে তার ওপর তারা সন্তুষ্ট নয়। বিচক্ষনতার সাথে সুসংবদ্ধ ও অবিরাম প্রচেষ্টা চালালে দেশের জনমতকে অবশেষে সংশোধন প্রয়াসী শক্তিগুলোর সমর্থকে পরিণত করা যেতে পারে। সমাজে অসৎ শক্তিগুলোর প্রভাবের ফলে যে সমস্ত অনাচারের সৃষ্টি হচ্ছে জাতির বৃহত্তম অংশ খোদ তার পরিপোষক হলে অবশ্যি নিরাশার কথা ছিল। কিন্তু আসল পরিস্থিতি তা নয়।


তৃতীয় কথা হচ্ছে, বিকৃতির জন্য যার  কাজ করে যাচ্ছে তারা সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা লাভ করেছে কিন্তু দু’টি সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। এক.চারিত্রিক শক্তি, দুই- ঐক্যের শক্তি।


সর্বশেষ ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ আল্লাহ তায়ালার নিজের কাজ। এজন্য যারা প্রচেষ্টা চালায় তারা আল্লাহর সমর্থন লাভ করে তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তাদের ছবর ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে এবং বুদ্ধি ও বিচক্ষনতা পরিহার করলে চলবে না। এ ধরণের লোক যতই স্বল্প সংখ্যক হোক না কেন এবং তাদের সাজ-সরঞ্জাম-উপকরণাদি যতই সামান্য হোক না কেন অবশেষে আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থন তাদের সকল অভাব পূরণ করে দেয়।


আপাতঃ নৈরাশ্যের পেছনে আশার এ আলোকচ্ছটা একটি আদর্শ ইসলামী সমাজের কেবল সম্ভাবনার উন্মেষ সাধনই নয় বরং তার সফল প্রতিষ্ঠারও দিগন্ত উন্মুক্ত করে। তবে প্রয়োজন হচ্ছে, যারা এ কাজের সত্যিকার আকাঙ্খা পোষন করে তাদের আশা ও আকাঙ্খার মন্জিল অতিক্রম করে কিছু করার জন্য অগ্রসর হতে হবে এবং সাফল্যের জন্য আল্লাহ যে নীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন সেই পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে হবে। আপনি কেবল অসৎ কাজ ও দোষত্রুটির সমালোচনা করে যাবেন এবং সেগুলো নিছক আপনার কথার জোরে শুধরে যাবে, এটা আল্লাহর নীতি নয়। আপনি হাত ও পায়ের শক্তি ব্যবহার না করা পর্যন্ত জংগলের একটি কাঁটা এবং পথের একটি পাথরও সরে না। তাহলে সমাজের দীর্ঘকালের দোষত্রুটিগুলো নিছক আপনার কথার জোরেই বা কেমন করে দূর হতে পারে? কৃষকের পরিশ্রম ছাড়া ধানের একটি শীষও উৎপন্ন হয় না। তাহলে নিছক দোয়া ও আশার মাধ্যমে কেমন করে সমাজে সততা ও সৎপ্রবণতার সবুজ শ্যামল শস্য উৎপাদনের আশা করা যেতে পারে? যখন আমরা ময়দানে নেমে কাজ করি এবং আল্লাহর নিকট সাফল্যের দোয়া চাই তখনই সমালোচনা কার্যকরী হয়। নিঃসন্দেহে ফিরিশ্তাদের আগমন ঘটে। কিন্তু তারা নিজেরা লড়বার জন্য আসে না। বরং যে সকল সত্যপন্থী খোদার পথে প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য লড়াই করতে থাকে তাদেরকে সাহায্য করতে আসে। কাজেই যাদের মনে কাজ করার আগ্রহ আছে তাদের মিথ্যা আশা-আকাঙ্খার পথ পরিহার করে সুস্থ মস্তিষ্কে এ কাজের যাবতীয় দাবী ও চাহিদা উপলব্ধি করা উচিৎ। অতঃপর তারা কি সত্যিই এ কাজ করবেন, না নিছক সমাজের বিকৃতি দেখে অশ্রুপাত করবেন এবং সমাজ গঠনের আকাঙ্খা হৃদয়ে পোষন করেই ক্ষান্ত হবেন, এ ব্যাপারে যথার্থ চিন্তাভাবনা করে তাদের সিদ্ধান্ত করা উচিৎ। কাজ করার সিদ্ধান্ত যিনি করবেন তিনি উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে নয় বরং সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবে চিন্তেই করবেন। সাময়িক উত্তেজনার বশে মানুষ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে এবং প্রাণ দান করতে পারে কিন্তু সাময়িক উত্তেজনার বশে একটি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে পৌছার জন্য সারা জীবন পরিশ্রম করা তো দূরের কথা মাত্র চারদিন কোন অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকা অথবা কোন সৎ কাজের উপর অটল থাকা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যারা সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজেদের সমগ্র জীবন গঠনমূলক ভাবে কাজে  নিয়োগ করতে প্রস্তুত হয় একমাত্র তারাই এ কাজ করতে পারে।


কাজ করার আগ্রহ ও উদ্দেশ্য গ্রহণের সাথে সাথে মানুষ সাধারণতঃ কর্মসূচীর প্রশ্ন উত্থাপন করে। কিন্তু তারা ভুলে যায়, কর্মের সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচীর মধ্যবর্তী স্থানে কর্মীর নিজের সত্তাই হচ্ছে কাজের আসল ভিত্তি ও নির্ভর। এ বিষয়টিকে বাদ দিয়ে কাজ ও কর্মসূচীর কথা বলা ঠিক নয়। কাজ করার জন্য কেবল সংকল্পই যথেষ্ট এবং এরপর শুধুমাত্র কর্মসূচীর প্রশ্ন থেকে যায়, এ কথা মনে করা ভুল। এ ভুল ধারণার কারণে আমাদের এখানে অনেক বড় বড় কাজ শুরু হয়েছে এবং পরে তা চূড়ান্ত লক্ষে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই কর্মসূচী ও পরিকল্পনা আসল নয়, আসল হচ্ছে এগুলোর বাস্তবায়নে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের চারিত্রিক গুণাবলী এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক গুণাবলী। কর্মসূচী ও পরিকল্পনার সাফল্য ও ব্যর্থতার মূলে এটিই আসল কার্যকর শক্তি। ব্যক্তির প্রতিটি দুর্বলতা কাজের ফলাফলকে প্রভাবিত করে এবং তার প্রতিটি গুণ কাজকে সুষমা-মন্ডিত করে। সে উন্নত ও উত্তম গুণাবলীর অধিকারী হলে একটি ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা ও বাজে কর্মসূচীকেও এমন সফল পরিচালনার মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষে উন্নীত করে যে মানুষ অবাক হয়ে যায়। বিপরীতপক্ষে তার যোগ্যতার অভাব থাকলে উত্তম কাজও পণ্ড হয়ে যায়। এমনকি অযোগ্য লোক যে কাজ সম্পাদনে ব্রতী হয় তার নির্ভুলতা সম্পর্কেও মানুষের মনে সন্দেহ জাগে। কাজেই সংস্কার ও গঠনমূলক বাস্তব পরিকল্পনা সম্পর্কে চিন্তা করার আগে এ কাজ সাধনের জন্য যে সব লোক এগিয়ে আসবে তাদের কোন্ ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে, কোন্ ধরণের গুণাবলী সমন্বিত হতে হবে এবং কোন্ ধরণের দোষ ত্রুটি থেকে তাদেরকে মুক্ত হতে হবে, উপরন্তু এ ধরণের লোক গঠনের উপায়-পদ্ধতি কি, এ ব্যাপারেও যথাযথ পর্যালোচনা করতে হবে।


পরবর্তী আলোচনায় এ বিষয়টিকে আমরা নিন্মোক্ত ক্রমানুসারে বর্নণা করবো-


১) এ উদ্দেশ্যে যারা কাজ করে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে ব্যক্তিগত যেসব গুণ থাকা উচিৎ।


২) তাদের মধ্যে সামষ্টিক পর্যায়ে যেসব গুণ থাকা উচিৎ।


৩) ইসলাম প্রচার, ইসলামী দাওয়াত সম্প্রসারণ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাফল্য অর্জনের জন্যে যেসব গুণ থাকা উচিৎ।


৪) ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে যেসব বড় বড় দোষ ত্রুটি থেকে তাদের মুক্ত থাকা উচিৎ।


৫) অভিপ্রেত গুণাবলীর বিকাশ সাধনে ও অনভিপ্রেত গুণাবলী থেকে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে মুক্ত রাখার জন্যে যেসব উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।


দুনিয়ায় ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবে প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর সাহায্যের  পর সাফল্যের দ্বিতীয় চাবিকাঠি হচ্ছে এ কাজ সম্পাদনের জন্যে প্রচেষ্টারত ব্যক্তিবর্গের নিজস্ব গুণাবলী। কতিপয় গুণাবলী ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে থাকতে হবে। কতিপয় গুণাবলী সামষ্টিক পর্যায়ে তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। কতিপয় গুণাবলীর সংস্কার ও গঠনমূলক কার্য সম্প্রসারণের জন্যে তাদের মধ্যে থাকতে হবে। আবার কতিপয় দোষত্রুটি থেকে যদি তারা নিজেদেরকে মুক্ত না রাখে তাহলে তাদের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। সবার আগে এ বিষয়গুলো অনুধাবন করতে হবে। ফলে যারা এ খেদমতের সত্যিকার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ তারা নিজেদের অনভিপ্রেত গুণাবলীর লালন ও অনভিপ্রেত গুণাবলী থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখার জন্য বিশেষভাবে সচেষ্ট হতে পারবে। সমাজ গঠনের জন্য এভাবে ব্যক্তি গঠন হচ্ছে প্রথম শর্ত। কারণ যে নিজেকে সজ্জিত ও বিন্যস্ত করতে পারে না সে অন্যকে সজ্জিত ও বিন্যস্ত করার ব্যাপারে কিছুই করতে পারে না।


ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী লেখক,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী বইয়ের লেখক,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী অডিও,ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গুণাবলী,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী বইয়ের নোট,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী বইয়ের লেখক,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী আলোচনা নোট,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী লেখকইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী অডিও,ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গুণাবলী,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী বইয়ের লেখক কে,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী বইয়ের লেখক,ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী অডিও,ইসলামী আন্দোলন ও সাফল্যের শর্তাবলী,ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গুণাবলী

ভাঙ্গা ও গড়া – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী। - Bhanga and ghara – Syed Abul A'la Maududi.
ইসলাম পরিচিতি – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - Introduction to Islam – Syed Abul A'la Maududi
শান্তিপথ – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - Shantipath - Syed Abul A'la Maududi
আসান ফেকাহ-মাওলানা ইউসুফ ইসলাহী - Asan Fekah - Maulana Yusuf Islahi
রাহে আমল - আল্লামা জলিল আহসান নদভি - Rahe Amal - Allama Jalil Ahsan Nadvi
তাওহীদ রিসালাত ও আখিরাত – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - Tawheed Risalat and Akhirat – Syed Abul A’la Mawdudi
দ্বীন প্রতিষ্ঠায় মহিলাদের দায়িত্ব – শামসুন্নাহার নিজামী
তাজবীদ শিক্ষা – ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি - Tajweed Education – Islamic Education Society
আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা.) – অধ্যাপক এ.কে.এম নাজির আহমদ - Ideal Man Muhammad (PBUH) – Professor AKM Nazir Ahmad
এবার ভিন্ন কিছু হোক-Ebar Vinno Kichu Hok