ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - The essence of Islamic culture - Syed Abul A'la Maududi

ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী download now


সংস্কৃতির সংজ্ঞা

এ বিষয়ের মীমাংসা করতে হলে সবার আগেই প্রশ্নের জবাব পেতে হবে যে, সংস্কৃতি কাকে বলে? লোকেরা মনে করে যে, সংস্কৃতি বলতে বুঝায় কোন জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, শিল্প-কারিগরী, ললিতকলা, সামাজিকরীতি, জীবনপদ্বতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এগুলো সংস্কৃতির আসল প্রানবস্তু নয়, তার ফলাফল ও বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সংস্কৃতি বৃক্ষের মূলও নয় কাণ্ড নয়, তার শাখা-প্রশাখা ও পত্র-পল্লব মাত্র। এসব বাহ্যিক লক্ষণ ও খোলসের ভিত্তিতে কোন সংস্কৃতির মূল্যমান নির্ধারিত করা যায় না। তাই এগুলো বাদ দিয়ে আমাদেরকে সংস্কৃতির প্রাণবস্তু অবধি পৌছা দরকার, তার মূলভিত্তি ও মৌলিক উপাদান গুলো তালাশ করা প্রয়োজন।


সংস্কৃতির মৌলিক উপাদানঃ

এই দৃষ্টিতে কোন সংস্কৃতির ভেতর সর্বপ্রথম যে জিনিসটি তালাশ করা দরকার তা হচ্ছে এই যে, দুনিয়াবী জীবন সম্পর্কে তার ধারণা কি? এই দুনিয়ায় সে মানুষকে কি মর্যাদা প্রদান করে? তার দৃষ্টিতে দুনিয়া বস্তুটা কি? এই দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক কি? মানুষ এ দুনিয়াকে ভোগ-ব্যবহার করবে কিভাবে? বস্তুত জীবনের তামাম ক্রিয়া-কান্ডের ওপরেই এগুলো গভীরভাবে প্রভাবশীল হয়ে থাকে। এই দর্শন বদলে গেলে সংস্কৃতির গোটা স্বরূপ মূলগতভাবেই বদলে যায়।


জীবন দর্শনের সাথে দ্বিতীয় যে প্রশ্ন গভীরভাবে সম্পৃক্ত, তা হচ্ছে জীবনের চরম লক্ষ্য। দুনিয়ার মানবজীবনের উদ্দেশ্য কি? মানুষের এতো ব্যবস্থা, এতো প্রয়াস-প্রচেষ্টা, এতো শ্রম-মেহনত, এতো দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম কিসের জন্য? কোন অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে মানুষের ছুটে চলা উচিত? কোন লক্ষ্যস্থলে পৌছার জন্য আদম সন্তানের চেষ্টা-সাধনা করা কর্তব্য? কোন পরিণতির কথা মানুষের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি প্রয়াস-প্রচেষ্টা স্মরণ রাখা উচিত? বস্তুত এই লক্ষ্য ও আকাংখার প্রশ্নই মানুষের বাস্তব জীবনের গতিধারাকে নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত করে থাকে আর তার অনুরুপ কর্মপদ্বতি ও কামিয়াবীর পন্থা জীবনের অবলম্বিত হয়ে থাকে।


তৃতীয় প্রশ্ন এই যে, আলোচ্য সংস্কৃতিতে কোন বুনিয়াদী ও ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে মানবীয় চরিত্র গঠন করা হয়? মানুষের মন-মানসিকতাকে ছাঁচে ঢালাই করে? মানুষের মন ও মস্তিস্কে কি ধরনের চিন্তা সৃষ্টি করে? এবং তার ভেতর এমন কি কার্যকর শক্তি রয়েছে, যা তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষকে এক বিশেষ ধরনের বাস্তব জীবন ধারণার জন্য উদ্বুদ্ধ করে? এ ব্যাপারে কোন বিতর্কের অবকাশ নেই যে, মানুষের কর্মশক্তি তার চিন্তাশক্তিরই প্রভাবাধীন। যে চেতনা তার হাত ও পা-কে ক্রিয়াশীল করে তোলে, তা আসে তার মন ও মস্তিস্ক থেকে। আর যে আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা, তার মন ও মস্তিষ্কে চেপে বসবে, তার গোটা কর্মশক্তি ঠিক তারই প্রভাবাধীনে সক্রিয় হয়ে ওঠবে। অন্য কথায় তার মন-মানস যে ছাঁচে গড়ে ওঠবে, তার ভেতর আবেগ-অনুভুতি ও ইচ্ছা স্পৃহা ও ঠিক তেমনি পয়দা হবে এবং তারই আজ্ঞাধীনে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো কাজ করতে থাকবে। বস্তুত দুনিয়ার কোন সংস্কৃতিই একটি মৌলিক আকীদা এবং একটি বুনিয়াদী চিন্তাধারা ছাড়া প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনা। এ হিসেবে যেকোন সংস্কৃতিকে বুঝতে এবং তাঁর মূল্যায়ন করতে হলে প্রথমত তাঁর আকীদা ও চিন্তাধারাকে বুঝে তার উৎকর্ষ-অপকর্ষ পরিমাপ করা প্রয়োজন – যেমন কোন ইমারতের দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের কথা জানতে হলে তার ভিত্তির গভীরতা ও দৃঢ়তার কথা জানা আবশ্যক।


চতুর্থ প্রশ্ন এই যে, আলোচ্য সংস্কৃতি মানুষকে একজন মানুষ হিসেবে কি ধরনের মানুষ রুপে গড়ে তোলে? অর্থাৎ কি ধরনের নৈতিক ট্রেনিং- এর সাহায্যে সে মানুষকে তার নিজস্ব আদর্শ মোতাবেক স্বার্থক জীবন যাপনের জন্য তৈরি করে? কোন ধরনের স্বভাব-প্রকৃতি, গুনরাজি ও মন-মানস সে মানুষের মধ্যে পয়দা করে এবং তার বিকাশ বৃ্দ্ধির চেষ্টা করে? তার বিশেষ নৈতিক তালিম- এর সাহায্যে মানুষ কি ধরনের পরিণত হয়? সংস্কৃতির আসল উদ্দেশ্য যদিও সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন, কিন্তু ব্যক্তির উপাদান দিয়েই সে সমাজ সৌধনির্মিত হয়। আর সে সৌধটির দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে তার প্রতিটি পাথরের সঠিক রুপে কাটা, প্রতিটি ইটের পাকা-পোক্ত হওয়া, প্রতিটি কড়িকাঠের মজবুত হওয়া, কোথাও ঘুনে ধরা না লাগানো এবং কোথাও অপক্ক-নিকৃস্ট ও দুর্বল উপকরণ ব্যাবহার না করার ওপর। পঞ্চম প্রশ্ন এই যে, সে সংস্কৃতিতে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে মানুষে মানুষে কিভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়? তার আপন খান্দানের সঙ্গে, তার পাড়া-পড়শীর সঙ্গে, তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, তার সাথে বসবাসকারী লোকদের সঙ্গে, তার অধীনস্থ লোকদের সঙ্গে, তার উপরস্থ লোকদের সঙ্গে, তার নিজ সংস্কৃতি অনুসারীদের সঙ্গে এবং তার সংস্কৃতি বহির্ভূত লোকদের সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্ক রাখা হয়েছে? অন্যান্য লোকদের ওপর তার কি অধিকার এবং তার ওপর অন্যান্য লোকদের কি অধিকার নির্দেশ করে দেয়া হয়েছে? তাকে কোন কোন সীমারেখার অধীন করে দেয়া হয়েছে? তাকে আজাদী হলে কতখানি আজাদী দেয়া হয়েছে আর বন্দী করা হলে কতদূর বন্দী করা হয়েছে? বস্তুত এ প্রশ্নগুলোর ভেতর নৈতিক চরিত্র, সামাজিকতা, আইন-কানুন, রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সকল বিষয়ই এসে যায়। আর আলোচ্য সংস্কৃতি কি ধরনের খান্দান, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে, তা এ থেকেই জানা যেতে পারে।


এ আলোচনা থেকে জানা গেছে যে, যে বস্তুটিকে সংস্কৃতি বলে অভিহিত করা হয়, তা গঠিত হয় পাঁচটি মৌলিক উপাদান দ্বারাঃ


(১) দুনিয়াবী জীবন সম্পর্কে ধারণা,


(২) জীবনের চরম লক্ষ্য,


(৩) বুনিয়াদীআকীদাওচিন্তাধারা


(৪) ব্যক্তিপ্রশিক্ষণ এবং (৫) সমাজব্যবস্থা।


দুনিয়ার প্রত্যেক সংস্কৃতি এই পাঁচটি মৌলিক উপাদান দিয়েই গঠিত হয়েছে। বলাবাহুল্য, ইসলামী সংস্কৃতিরও সৃষ্টি হয়েছে এই উপাদানগুলোর সাহায্যেই। বর্তমান গ্রন্থে আমি ইসলামী সংস্কৃতির তিনটি উপাদান পর্যালোচনা করে বলেছি যে, এই সংস্কৃতি জীবন সম্পর্কে কোন বিশিষ্ট ধারণা, কোন বিশেষ জীবন লক্ষ্য এবং কোন মৌলিক প্রত্যয় ও চিন্তাধারার ওপর কায়েম করা হয়েছে এবং এগুলো কিভাবে তাকে দুনিয়ার অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে স্বতন্ত্র এক বিশেষ ধরনের সংস্কৃতির রুপ দিয়েছে। অবশিষ্ট দু’টি উপাদান সম্পর্কে এ গ্রন্থে কোন আলোচনা করা হয়নি। এর ভেতর ব্যক্তি সংগঠন সম্পর্কে আমার লিখিত “ইসলামী ইবাদতপর এক তাহকীকী নযর” এবং “খুতবাত’ *১ (২০ থেকে ২৮ নম্বর খোতবা) নামক পুস্তুক দু’খানি উপকারী হবে। বাকী “সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘ইসলামকা নেজামে হায়াত’ (ইসলামের জীবন পদ্ধতি) নামে প্রকাশিত আমার বেতার বক্তৃতা গুলোয় একটা মোটামুটি চিত্র পাওয়া যাবে।

ইসলামের হাকীকত – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - Islamer hakikat - Syed Abul A'la Maududi
ইসলাম পরিচিতি – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - Introduction to Islam – Syed Abul A'la Maududi
মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন – আব্দুল খালেক - Daily life of Muslims – Abdul Khalek
হাদীসের আলোকে মানব জীবন - মাওলানা এ.কে.এম ইউসুফ
ইসলামী জাগরণের তিন পথিকৃৎ – অধ্যাপক এ.কে.এম নাজির আহমদ - Three Pioneers of Islamic Awakening – Professor AKM Nazir Ahmad
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রাথমিক পুঁজি – অধ্যাপক গোলাম আযম
নামায রোযার হাকীকত – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - Namaz Rozar Hakikat – Syed Abul A’la Maududi
মাতা – পিতা ও সন্তানের অধিকার – আল্লামা ইউসুফ ইসলাহী
এবার ভিন্ন কিছু হোক-Ebar Vinno Kichu Hok
ফি যিলালিল কুরআন-Fi Zilal al-Quran