দাগিগলা কাঠঠোকরা-Streak-throated woodpecker
দাগিগলা কাঠঠোকরা Picidae পরিবারের Picus গণের একটি পাখি। দাগিগলা কাঠঠোকরার গায়ের রং জলপাই-সবুজ। তার ওপর কালো রঙের ঢেউ। গলাটা সাদা। এর ওপর হলুদ-কালো মেশানো দাগ। এ জন্য এর নামের আগে দাগিগলা। পাখটি সবুজ-ডোরা কাঠঠোকরা নামেও পরিচিত।
ইংরেজি নাম: Streak-throated woodpecker
বৈজ্ঞানিক নাম: Picus xanthopygaeus
বর্ণনাঃ
দাগিগলা কাঠঠোকরা সবুজ রঙের মাঝারি আকারের কাঠঠোকরা এর দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি, ওজন ১১০ গ্রাম, ডানা ১৩ সেমি, ঠোঁট ৩.৩ সেমি, পা ২.৪ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সবুজাভ ও এতে কালোয় ঢেউ খেলানো; দেহতল ফ্যাকাসে সবুজাভ ও হালকা হলুদে মেশানো; কোমর জলপাই-হলুদ; সাদা ডোরাসহ সবুজাভ লেজ; সাদা থুতনি ও গলায় হালকা হলদে-ধূসর ডোরা; বুক, বগল ও পেটে জলপাই রঙের আঁইশের দাগ; ভ্রু-রেখা সাদা; কান-ঢাকনি ফ্যাকাসে ধূসর-বাদামি; ধূসরাভ-সাদা গালে কালো ছিটা-দাগ; চোখ ও ঘাড়ের মাঝখানটায় উপরিভাগে সাদা ডোরা রয়েছে; ঠোঁট শিঙরঙা; চোখ সাদা বা ফ্যাকাসে পাটল বর্ণের; পা ও পায়ের পাতা সবুজ এবং নখর ধূসর। কপাল ও চাঁদির রঙ ছেলেপাখির ক্ষেত্রে উজ্জ্বল লাল আর মেয়েপাখির ক্ষেত্রে কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনির পালকের গোড়া ধূসর।
স্বভাবঃ
দাগিগলা কাঠঠোকরা পাতাঝরা বন, প্রশস্ত পাতার বন, বাগান ওলোকালয়ে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় থাকে। গাছের কাণ্ডে জড়িয়ে ধরে অথবা মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদ্য সন্ধান করে জোড়ার পাখির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্যতীক্ষ্ণ সুরে ডাকে: কুয়িম্প..। দাগিগলা-কাঠঠোকরা’ অনেকটা বিরল প্রজাতির পাখি। অন্যান্য কাঠঠোকরাদের যেমন সচরাচর পাওয়া যায়, একে সহজে পাওয়া যায় না। এটি কিছুটা সবুজ রঙের দেখতে সুন্দর।
প্রজননঃ
জানুয়ারি-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা বাঁশঅথবা গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে ড্রাম বাজানোর মত আওয়াজ করে; এবং ওপরমুখিডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৫টি, মাপ ২.৬×২.০ সেমি।
খাদ্য তালিকাঃ
খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, উইপোকা, গোবরে পোকা, ফুল ও ফলের রস।
বিস্তৃতিঃ
বাংলাদেশের এরা ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী অঞ্চলের দেখা যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থাঃ
দাগিগলা কাঠঠোকরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।