লালশির-Eurasian Wigeon
লালশির,ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস বা দুবরাখাওরি হাঁস Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Anas (অ্যানাস) গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস।পরিযায়ী এই পাখিটি লালমাথা হাঁস নামেও পরিচিত।
ইংরেজি নাম: Eurasian wigeon or European wigeon, widgeon or wigeon
বৈজ্ঞানিক নাম: Anas penelope
বর্ণনাঃ
এ পাখি লম্বায় ৪২-৫২ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০-৬৭০ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা তামাটে। কপালের মধ্যখানে হলুদ সিঁথির মতো টান, যা কেবল প্রজনন ঋতুতে দেখা যায়। ডানায় সাদা পট্টি। ডানার নিচের দিকে ধূসর। পিঠে মিহি ধূসর রেখা। বুক হালকা বাদামি। পেট সাদা। লেজের নিচের দিকে কালো। লেজ সূচালো। স্ত্রী পাখির রঙ ভিন্ন। ওদের মাথায় হলদেসিঁথি নেই। নেই পিঠের ধূসর রেখাও। স্ত্রী পাখির দেহের অধিকাংশ পালক তামাটে। উভয়ের চোখ বাদামি। ঠোঁট ধূসর-নীল মিশ্রিত।
স্বভাবঃ
লালশির দলবদ্ধভাবে বসবাস করে এবং অপ্রজননকালীন মৌসুমে বিশাল বিশাল দলে বিচরণ করে। বড় সংরক্ষিত জলাশয়ে এদের সহজে দেখা যায়। শীতে এ দেশের উপকূলীয় এলাকার নদী, অগভীর হ্রদ, চরাঞ্চলে খালের নদী-মোহনা, হাওর, বিল ইত্যাদিতে বিচরণ করে। এরা দিবাচর ও সান্ধ্যচারী। ছোট থেকে মাঝারি দলে থাকে। এরা পায়ে হেঁটে বা অগভীর জলায় পানিতে মাথা ডুবিয়ে খাবার খায়। হাঁসা ‘হুইয়ো’ ও হাঁসি ‘কররর্-কররর্-কররর্’ স্বরে ডাকে।
প্রজননঃ
মে-সেপ্টেম্বরে প্রজননকালে হাঁসি সাইবেরিয়া ও অন্যান্য প্রজনন এলাকায় পানির কাছাকাছি ঝোপঝাড়সম্পন্ন এলাকার মাটিতে নল, ঘাস ইত্যাদির সঙ্গে বুকের পালক বিছিয়ে বাসা বানায় ও তাতে ৭-১০টি পীতাভ রঙের ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ২৪-২৫ দিন সময় লাগে। ডিম থেকে ফোটার অল্প সময় পরেই বাচ্চারা মায়ের সঙ্গে বাসা ছাড়ে। প্রায় ৪০ দিন বয়সে বাচ্চারা উড়তে শেখে।
খাদ্য তালিকাঃ
পোকামাকড়, ভেজা ঘাস, জলজ উদ্ভিদ।
বিস্তৃতিঃ
পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।
অবস্থাঃ
সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ১ কোটি ২৯ লক্ষ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।