বাংলা নীলকণ্ঠ-Indian roller
নীলকন্ঠ পাখি একটি অতি পরিচিত পাখি। পাখিটি ‘কোরাসিআইদি’ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।
বাংলা নাম: বাংলা নীলকণ্ঠ বা বাংলা নীলকান্ত বা দেশি নীলকণ্ঠ
ইংরেজি নাম: Indian roller
বৈজ্ঞানিক নাম: Coracias benghalensis
বর্ণনাঃ
পাখিটির দেহের তুলনায় মাথা একটু বড়। সৌন্দর্যের দিক থেকে অন্য পাখিরা এ পাখিটির ধারে-কাছেও নেই। এ পাখির শরীরে গাঢ় ও কিছুটা হালকা নীল ধরনের পালক রয়েছে। গলা ও বুকে খয়েরি ও বাদামি রঙের মিশ্রিত পালক। পিঠ পোড়ামাটি রঙের। লেজ গাঢ় নীল। পা ইট রঙের। ঠোঁট কালো। পায়ের আঙুলগুলো কালো ও হলুদ। কণ্ঠে নীলের কোনো অস্থিত্ব নেই। তারপরও পাখিটির নাম ‘নীলকণ্ঠ’ বা ‘নীলকণ্ঠী’। ‘নীলকণ্ঠ’ পাখি সাধারণত লম্বায় ৩৫ থেকে ৩৭ সেন্টিমিটার, ওজন ১৬৫ গ্রাম, ডানা ১৯ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ২.৭ সেমি, লেজ ১৩ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
স্বভাবঃ
বাংলা নীলকণ্ঠ পাতাঝরা বন, বনের প্রান্তদেশ, তৃণভূমি, ক্ষুদ্রঝোপ, খামার ও গ্রামাঞ্চল বিচরণ করে; পাতাহীন ডাল, বেড়ার বাঁশ অথবা বৈদ্যুতিক তারে একাকী বসে থাকে। নীরবে বসে এরা ধীরে লেজ ওপর-নিচে দোলায় ওনিচের ভূমিতে শিকার খোঁজে। ঘাসে বা ঝোপে আগুন দেওয়া হলে পোকা ধরার জন্য এরা পাশে বসে অপেক্ষা করে। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা উঁচু গলায় ও তীক্ষ্ণ সুরে ডাকে: ক্রাক.. ক্রাক..; ছেলে ও মেয়ে সমবেত ওড়ার মহড়া দেয়।
প্রজননঃ
নীলকণ্ঠ পাখির প্রজননকাল হলো বসন্তকাল। প্রতি বছর বসন্তকালে এরা ডিম পাড়ে। শুধু ডিম পাড়ার সময় নীলকণ্ঠ পাখি জুটি বাঁধে। এরা পাহাড়ের গায়ে ছোট গর্তে বাসা বাঁধে। সামান্য খড়কুটো দিয়েই তৈরি করে তাদের বাসা। বাসা তৈরির পর নীলকণ্ঠ দম্পতি দু-তিন দিন সময় নেয়। তারপর স্ত্রী নীলকণ্ঠ পাখি ডিম দেয়। সাধারণত একটি স্ত্রী নীলকণ্ঠ পাখি তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয় পাখিই ডিমে তা দেয়। ডিম পাড়ার ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
খাদ্য তালিকাঃ
পোকা, কীটপতঙ্গ, ব্যাঙ, সাপের বাচ্চা, টিকটিকি, অ্যাঞ্জন, গিরগিটি ইত্যাদি।
বিস্তৃতিঃ
নীলকন্ঠ পাখি সমগ্র ভারত, বাংলাদেশের গারো পাহাড়, হবিগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সমগ্র দঃক্ষিণ এশিয়াতে দেখা যায়।
অবস্থাঃ
বাংলা নীলকান্ত বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই বাংলা নীলকণ্ঠকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।