পাহাড়ি তিতির-Rufous-throated Partridge
পাহাড়ি বাঁশবনের তিতির ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত বাম্বুসিকোলা (Bambusicola) গণের এক প্রজাতির ছোট তিতির। এরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় পাখি। এরা ‘লালগলা বাতাই’ নামেও পরিচিত। পাহাড়ি তিতিরের মোট ছয়টি উপপ্রজাতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এরা হচ্ছে- A. r. annamensis, A. r. euroa, A. r. guttata Delacour & Jabouille, A. r. intermedia, A. r. rufogularis, A. r. tickelli
ইংরেজি নাম: Rufous-throated Partridge
বৈজ্ঞানিক নাম: Arborophila rufogularis
বর্ণনাঃ
লম্বায় ২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৫৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির কপাল ধূসর। চাঁদিতে জলপাই-বাদামির ওপর কালো দাগ। ভ্রু ধূসর-সাদা। থুতনি ও গলায় লালচে গোলাপি রেখার ওপর কালো তিল। ঘাড় লালচে-কমলা। পিঠ সোনালী জলপাই-বাদামির মিশ্রণ। ঘাড়ের উপরের দিক ও বুকের মাঝখান বরাবর রয়েছে কালো ডোরা। বুক স্লেট ধূসর। কোমর থেকে লেজের নিচে কালো তিল। স্ত্রী পাখির থুতনি ও গলায় কালো তিল দেখা যায়। দেহের নিন্মাংশে রয়েছে অসংখ্য ফুটকি। উভয়ের চোখ বাদামি এবং পা লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতল সাদা। কাঁধ ঢাকনি ডোরাহীন।
স্বভাবঃ
সাধারণত এরা চিরসবুজ বনের আশপাশের জলাশয়ের কিনারে শিকার খুঁজে বেড়ায়। খুব ধীর লয়ে হেঁটে হেঁটে ঝরাপাতা উল্টিয়ে অথবা মাটিতে আঁচড় কেটে পোকামাকড় খুঁজে বের করে। বিচরণক্ষেত্রে বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। দলবদ্ধভাবে দেখা গেলেও খুব বেশিসংখ্যক সদস্য নিয়ে এরা দল বাঁধে না। দল বাঁধে বড়জোর ৮-১০ সদস্য নিয়ে। উড়তে তেমন পারদর্শী নয়। বছরের বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকলেও প্রজনন মৌসুমে এদের চেঁচামেচি বেড়ে যায় কিছুটা
প্রজননঃ
প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট। ঝোপ জঙ্গলের ভেতর মাটির প্রাকৃতিক গর্তে ঘাস-লতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন।
খাদ্য তালিকাঃ
প্রধান খাবার পোকামাকড়, শস্যবীজ, ছোট রসালো ফল, ঘাসের কচিডগা ইত্যাদি।
বিস্তৃতিঃ
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম পাহাড়ি তিতিরের প্রধান আবাসস্থল। এসব দেশের চিরসবুজ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন এদের পছন্দের আবাস।
অবস্থাঃ
ব্যাপকহারে আবাসন ধ্বংস ও বনাঞ্চল কেটে চাষাবাদের ফলে পাহাড়ি তিতিরের অস্তিত্ব সর্বত্রই হুমকির মুখে পড়েছে। তাই ই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।