কালো গুন্দ্রী-Manipur Bush Quail
কালো গুন্দ্রী Phasianidae (ফ্যাসিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Perdicula (পের্ডিকুলা) গণের এক প্রজাতির অত্যন্ত দুর্লভ তিতির। কালো গুন্দ্রীর দুটি উপপ্রজাতি শনাক্ত করা গিয়েছে। উপপ্রজাতিগুলো হল- P. m. manipurensis, P. m. inglisi
ইংরেজি নাম: Manipur Bush Quail
বৈজ্ঞানিক নাম: Perdicula manipurensis
বর্ণনাঃ
এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৪ সেন্টিমিটার, ওজন ৪৩০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৪ সেন্টিমিটার, পা ৪.৮ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০ সেন্টিমিটার। পুরুষ ও স্ত্রী তিতিরের চেহারা ভিন্ন। পুরুষ কালো গুন্দ্রীর পিঠ ঘন কালো, মধ্যে মধ্যে সাদা ও মেটে তিলা, বগলের তিলাগুলো বেশ মোটা। মুখ কালো ও গাল সাদা, গলাবন্ধ লালচে। স্ত্রী কালো গুন্দ্রীর পিঠ ফিকে বাদামী ও মেটে বর্ণের। ঘাড়ের নিচের অংশ লালচে, কান ঢাকনি ও ভ্রু-রেখা হালকা পীত রঙের। চক্ষুরেখা কালচে। কাঁধ-ঢাকনি ও পিঠে হালকা পীত বর্ণের লম্বা ছিটা দাগ থাকে।
স্বভাবঃ
কালো গুন্দ্রী সমুদ্রসমতল থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। এরা চিরসবুজ বনের ধারে ঘন লম্বা ঘাসের ঘাসবনের স্থানীয় বাসিন্দা। যেসব ঘাসবনের আশেপাশে পানির উৎস রয়েছে, সেসব ঘাসবনে বেশি দেখা যায়। যেসব অঞ্চলে কালো তিতির দেখা যায়, ধরে নেয়া হত সেসব অঞ্চলে কালো গুন্দ্রীও রয়েছে। এই দুই প্রজাতির চমৎকার সহাবস্থান ছিল। কালো গুন্দ্রী ভোরে আর মেঘলা দিনে খোলা মাঠে খাবার খুঁজে বেড়ায়। উড়ে পালানোর চেয়ে ঘাসবনে লুকিয়ে পড়তে এরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এরা খুব লাজুক পাখি। সাড়া পেলেও ওড়ে না বলে এদের দেখা পাওয়াটা খুব কষ্টকর। এরা ৪-১২টির দলে ঘুরে বেড়ায়। দলে স্ত্রী তিতিরের সংখ্যা পুরুষ তিতিরের চেয়ে বেশি হয়। প্রজাতিটি পরিযায়ী স্বভাবের নয়। খাদ্যাভাব দেখা দিলে বা বাসস্থানের অভাব হলে এরা অন্য কোন স্থানে পাড়ি দেয়। এদের ডাক অনেকটা হুইট-টি-টি-টি-টিট এবং ডাক ক্রমে চড়তে থাকে।
প্রজননঃ
মার্চের শুরুতে এদের প্রজনন কাল। বাসা বানায় ঘাসবনে ও মাটির গর্তে। বাসা বানানোর উপকরণ হচ্ছে ঘাস ও পাতা। বাসা বানানো শেষে ৬-৭ টি ডিম পাড়ে।
খাদ্য তালিকাঃ
এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাসবীজ, বীজ, ছোট ফল, পোকামাকড়, কচি কাণ্ড ইত্যাদি।
বিস্তৃতিঃ
ভারতের অসম, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে (ডুয়ার্স) কালো গুন্দ্রী খুব সহজেই দেখা যেত। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ জেলার উত্তরাংশ পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি ছিল।
অবস্থাঃ
সারা পৃথিবীতে মাত্র ১৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস। আই. ইউ. সি. এন. কখনোই এই প্রজাতিটিকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করেনি। আই. ইউ. সি. এন. এর তালিকায় প্রজাতিটি সবসময়ই সংকটাপন্ন হিসেবে পরিচিত ছিল। সমগ্র পৃথিবীতে আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার থেকে পনের হাজার কালো গুন্দ্রী রয়েছে।