মেটে রাজহাঁস বা ধূসর রাজহাঁস-Greylag goose
মেটে রাজহাঁস বা ধূসর রাজহাঁস Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Anser (আন্সের) গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রজাতির রাজহাঁস। পৃথিবীতে এই প্রজাতির ৩ টি উপপ্রজাতি আছে। এ গুলো হল A. a. anser A. a. rubrirostris A. a. domesticus
ইংরেজি নাম: Greylag goose
বৈজ্ঞানিক নাম: Anser anser
বর্ণনাঃ
মেটে রাজহাঁস আন্সের গণের অন্যসব হাঁসের তুলনায় বেশ বড় ও মোটাসোটা। এর শরীর গোলাকার, নাদুসনুদুস এবং ঘাড় ও গলা যথেষ্ট মোটা। মাথা ও ঠোঁট তুলনামূলক বড়। এর পা ও পায়ের পাতা গোলাপি এবং ঠোঁট গোলাপি বা কমলা। ঠোঁটের আগা হালকা ও সাদাটে। এর দৈর্ঘ্য ৭৪ থেকে ৯১ সেমি। ডানা ৪১.২ থেকে ৪৮ সেমি, লেজ ৬.২ থেকে ৬.৯ সেমি, ঠোঁট ৬.৪ থেকে ৬.৯ সেমি ও পা ৭.১ থেকে ৯.৩ সেমি। এর ওজন ২.১৬ থেকে ৪.৫৬ কেজি, এবং গড় ওজন প্রায় ৩.৩ কেজি । ডানার বিস্তার ১৪৭ থেকে ১৮০ সেমি । পুরুষ হাঁস সাধারণত স্ত্রী হাঁসের তুলনায় বড় হয়।
মেটে রাজহাঁসের গলা বেশ লম্বা। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও গলা হালকা ধূসর রঙের। কোমর কালচে ও উপরের লেজ-ঢাকনি সাদা। ডানায় সাদা চিকন ডোরা দাগ রয়েছে। দেহতল বাদামি-ধূসর। পায়ের পরে পেট অবসারণী-ঢাকনি পর্যন্ত সাদা। ওড়ার সময় ডানার ফ্যাকাসে সম্মুখভাগ স্পষ্ট চোখে পড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ রাজহাঁস দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ হালকা খয়েরি এবং পেটের পালকের বেড় অস্পষ্ট।
স্বভাবঃ
ধূসর রাজহাঁস নদী, হ্রদ, নিচু জলাবদ্ধ জমি, কৃষিজমি, আদ্র৴ তৃণভূমি ও সমুদ্র উপকূলে বিচরণ করে। এরা ছোট, মাঝারি ও বড় ঝাঁকে চলে। সাধারণত জলাশয়ে ঠোঁট ডুবিয়ে এরা খাবার খোঁজে। দিনের বেলায় চরে, তবে পূর্ণিমার রাতে সক্রিয় হতে পারে।
প্রজননঃ
এপ্রিল মাসে ধূসর রাজহাঁস নল বন ও ঘাসের ঝোপে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ২৭-২৮ দিনে ডিম ফুটে ছানা হয়। ছানাগুলো মা পাখির সঙ্গে জলে ও স্থলে চরে বেড়ায় এবং পরিযায়নের সময়ও মা পাখিকে অনুসরণ করে।
খাদ্য তালিকাঃ
খাবারের তালিকায় রয়েছে ঘাস, জলজ আগাছা, শামুক, গুগলি ও ফসলের কচি ডগা।
বিস্তৃতিঃ
বাংলাদেশে প্রধানত শীতকালে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমুদ্র-উপকূলবর্তী এলাকায় এদের দেখা যায়। এছাড়া ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বড় বড় হাওড় ও বিলে এরা পরিযায়ী হয়ে আসে। পাখিটি বাংলাদেশ ছাড়াও, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।
অবস্থাঃ
সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৫৪ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা বেশ সন্তোষজনক হারে বাড়ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।