পোষা পাখির রোগ ও চিকিৎসা-Diseases and treatment of pet birds
Diseases and treatment of pet birds

পোষা পাখির রোগ ও চিকিৎসা

শখ করে মানুষ পশু, পাখি পোষে। কারও পছন্দ কুকুর, কারও বা বিড়াল। আবার বিদেশি খাঁচার পোষাপাখি অনেকেরই প্রিয়। মানুষের মতো শখের পোষা প্রাণীর অসুখবিসুখ হয়। পোষা প্রাণীর চিকিৎসার জন্য এতদিন বেশ ঝামেলা পোহাতে হতো। কারণ, দেশে স্পেশালিস্ট পোষা প্রাণীর হাসপাতাল নেই। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই পোষা প্রাণীর চিকিৎসা করেন। কিছু ক্লিনিকও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু এসব জায়গায় পরিপূর্ণ চিকিৎসা বলতে যা বোঝায়, তা নেই। অপারেশন করার আধুনিক ব্যবস্থা নেই। রোগ নির্ণয়ের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না। ছোটখাটো সমস্যার সমাধান এসব জায়গায় গেলে হয়ে থাকে। পোষা প্রাণীপ্রেমীদের এসব সমস্যা অনেকটাই দূর করেছে কিছুদিন আগে চালু হওয়া টিচিং অ্যান্ড ট্রেনিং পেট হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, যা পেট হসপিটাল নামেই বেশি পরিচিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। আছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। পোষা প্রাণীদের থাকার জন্য বেড আছে। দেখভালের জন্য আছেন নার্স। এই হাসপাতালটি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির অধীনে রাজধানীর পূর্বাচল নিউটাউনের ১৮ নম্বর সেক্টরে প্লট ৫ বি, ১১৪ নম্বর সড়কে গড়ে উঠেছে।

পোষা পাখির কিছু রোগ ও চিকিত্‍সা

০১. আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে অসুস্থতা

লক্ষণ সমূহ :

শরীর ফুলিয়ে মুখ গুজে বসে থাকা

কম খাওয়া

আলো বা তাপ পছন্দ করা

চিকিত্‍সা

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

Adovas - 3ml in 1 liter water

Respiron + Multivit

Toycol, Tylocef (tylocin group) + Multivitamin

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

Nuxvom 200 (পাখিদের খাবার জলে ৪ ফোটা করে ৩ দিন মিশিয়ে দিতে হবে)

০২. শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতা

লক্ষণ সমূহ :

নাক দিয়ে জল পড়া

ঘড় ঘড় শব্দ করা

কাশি দেয়া

নাক ও মুখ দিয়ে আঠালো বস্তু পরা

জোরে শ্বাস নেয়া

মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া

চিকিত্‍সা

ক.ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

Adovas / Toycol, Tylocef (tylocin group) = হালকা ঠাণ্ডা কাশি হলে খাওয়াতে হবে

Tydocol / Tylosef + Oxycentin 20% / Tylodox + Respiron = বেশী ঠাণ্ডা বা কফ থাকলে

(পাখি বেশী দুর্বল হলে প্রয়োজনে Maxfort / Hyperchok Amino মাল্টিভিটামিন দেয়া যাবে)

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

প্রথমে Nuxvom 30 (পাখিকে সরাসরি ১ ফোটা ও খাবার জলে ৪ ফোটা করে ২ দিন মিশিয়ে দিতে হবে)

যদি নাক দিয়ে জল পরে Rush Tox 30 / শীতকালীন সমস্যায় Campfar 30

যদি শুকনা ও ঠাণ্ডা হাঁচি হয় তাহলে Dulcamra 30

যদি ঘড় ঘড় শব্দ করে ও কফ থাকে তবে Antim Tert 30

যদি শুধুমাত্র মুখ হাঁ করে শ্বাস নিতে থাকে তবে Spongia 30 অধিক কার্যকরী

০৩. পরিপাকতন্ত্রের অসুস্থতা (সবুজ পায়খানা)

লক্ষণ সমূহ :

গাঢ় সবুজ / শেওলা রং / পিত্ত রঙের পায়খানা

সবুজ পিচ্ছিল পায়খানা

Vent Area সবুজ হয়ে থাকা

সবুজ পায়খানার সাথে জলের ভাগ বেশী থাকা

পাখি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসা

চিকিত্‍সা

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

প্রথমে Esb 30 + Electrolite Saline ব্যাবহার করে দেখা যে পাখির পায়খানা স্বাভাবিক হয় কিনা

দ্বিতীয়ত Oxycentin 20% অথবা Human Doxin 100 mg + Esb 30 + Electrolite Saline ব্যাবহার করা

(পাখি বেশী দুর্বল হলে প্রয়োজনে Maxfort / Hyperchok Amino মাল্টিভিটামিন দেয়া যাবে)

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা 

Nuxvom 30 ২ দিন দিয়ে অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে

অবস্থা পরিবর্তন না হলে IPIKAK 30 ২/৩ দিন দিতে হবে

তারপরেও ভালো না হলে Akonaite 30 ব্যাবহার করা যাবে

যদি কোনোভাবে অবস্থা নিয়ন্ত্রনে না আসে তবে Arcenic 30 ব্যাবহার করা যাবে । কোনও অবস্থাতেই আগেই Arcenic ব্যাবহার করা উচিত্‍ হবে না ।

০৪. পরিপাকতন্ত্রের অসুস্থতা (চুনা পায়খানা)

লক্ষণ সমূহ :

সাদা চুনের মতো পায়খানা

পায়খানায় জলের পরিমান বেশী

খাবার খাওয়ার পরিমান কমে যাওয়া

পাখির ঝিমান ভাব

চিকিত্‍সা

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

প্রথমে Esb 30 + Electrolite Saline ব্যাবহার করে দেখা যে পাখির পায়খানা স্বাভাবিক হয় কিনা

দ্বিতীয়ত Oxycenting 20% অথবা Human Doxin 100 mg + Esb 30 + Electrolite Saline ব্যাবহার করা

(পাখি বেশী দুর্বল হলে প্রয়োজনে Maxfort / Hyperchok Amino মাল্টিভিটামিন দেয়া যাবে)

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

প্রথমে Nuxvom 30 ২ দিন

দ্বিতীয়ত Pulsetula 30 ৫ দিন

০৫. পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্র উভয়ের অসুস্থতা (viral desease)

লক্ষণ সমূহ :

গাঢ় সবুজ / শেওলা রং / পিত্ত রঙের পায়খানা

সবুজ পিচ্ছিল পায়খানা

Vent Area সবুজ হয়ে থাকা

সবুজ পায়খানার সাথে জলের ভাগ বেশী থাকা

পাখি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসা

নাক দিয়ে জল ঝরা

ঘড় ঘড় শব্দ করা

কাশি দেয়া

নাক ও মুখ দিয়ে আঠালো বস্তু পরা

জোরে শ্বাস নেয়া

মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া

চোখ দিয়ে জল পরা

চোখ ফুলে যাওয়া

চিকিত্‍সা

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

Tylodox + Esb 30 + Electrolite Saline

অথবা

Human Doxln 100 + Esb 30 + Tylosef / Tydocol

অথবা

Oxycenting 20% + esb 30 + Toylosef + Electrolite Saline

অথবা

Tylodox + Esb 30 + Eletrolite Saline

বিশেষ দ্রষ্টব্য =

পাখি বেশী দুর্বল হলে প্রয়োজনে Maxfort / Hyperchok Amino মাল্টিভিটামিন দেয়া যাবে ।

পাখি সুস্থ হলে পরবর্তীতে Protexin বা টক দই বা Apple Cider Vinegar (ACV) প্রবায়টিক হিসেবে পাখিকে খাওয়াতে হবে ।

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

প্রথমে Nuxvom 30 ২ দিন

দ্বিতীয়ত Aconaite 30 ৩ দিন

পরবর্তীতে Arcenic 30 ৩ দিন

যদি পায়খানা ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু ঠাণ্ডা ভালো হয় নাই তবে Antim 30 দিতে হবে

যদি ঠাণ্ডা ভালো হয়েছে, কিন্তু পায়খানা সবুজ থাকে তবে IPIKAK 30 দিতে হবে

যদি ঠাণ্ডা ভালো হয়েছে, কিন্তু পায়খানা চুনা থাকে তবে Pulsetula 30 দিতে হবে

যদি চোখ দিয়ে জল পরে তবে Euphoresia 30 দিতে হবে

০৬. বদহজম

লক্ষণ সমূহ :

খাঁচায় ঝুলে থাকা

বমি বমি ভাব করা বা বমি করা

চঞ্চলতা কমে যাওয়া

কম খাওয়া

চিকিত্‍সা

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

Hemko P.H + Engime

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

Nuxvom 200 (বমি বমি ভাব করলে)

IPIKAK 30 (বমি করে ফেললে)

বিশেষ দ্রষ্টব্য = লেবু ও রসুনের রস মিশ্রিত হালকা লিকার চা অথবা গন্ধ মাদুলি পাতার রস এক্ষেত্রে বিশেষ উপকারি ও কার্যকর ।

০৭. Protozoal Problem - কৃমি ও উকুন (Air Seck Mites)

লক্ষণ সমূহ :

পাখিভ চঞ্চলতা কমে যাওয়া

Vent Area চুলকানো

পালক ঝরা

খাঁচার সাথে শরীর ঘষা

শরীরে ছোট ছোট পোকার অস্তিত্ব

চিকিত্‍সা

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

Acimec Oral Solution (১ লিটার পানিতে ১ মিলি মিশিয়ে ২ দিন - ১৫ দিন পর পর ১ দিন)

Quaviet (জীবাণু ও পরজীবী নাশক দিয়ে পাখির শরীরে স্প্রে করটে হবে । খেয়াল রাখতে হবে যেন পাখির চোখে না লাগে)

খ. হারবাল চিকিত্‍সা

নিম পাতা খেতে দেয়া

পাখির শরীরে নিম পাতা সিদ্ধ জল ভালো করে স্প্রে করা

নিম পাতা সিদ্ধ জল শুধুমাত্র কৃমি হলেই পাখিকে খেতে দিতে হবে

০৮. Canker / Trichamonasis (ক্যাঙ্কার / ট্রিচামনাসিস)

লক্ষণ সমূহ :

বাচ্চা পাখির খাদ্যনালী সরু হয়ে যাওয়া

পেট থেকে vent area 'র উপরিভাগ লালছে থেকে কালচে হয়ে যাওয়া

চিকিত্‍সা পদ্ধতি

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

Ronidazole গ্রুপের ঔষধ Ronin বা Ronivet

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

Nuxvom 30 (পাখিদের খাবার জলে ৪ ফোটা করে ২ দিন মিশিয়ে দিতে হবে)

Marksol 30 (জলে ৪ ফোটা করে ৫ দিন)

০৯. Physical Injury

লক্ষণ সমূহ :

মারামারি করে বা আঘাতের কারনে রক্তাক্ত হওয়া

ব্যাথা পাওয়া

পা ফেলতে না পারা

ডানা ঝুলে যাওয়া

খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটা

পায়ের হাড় স্থানচ্যুত (Disbalance) হওয়া

চিকিত্‍সা

হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

ক্ষত স্থানে Calendula Mother Tinqture দিয়ে ভালো করে wash করে দিতে হবে

Arnica 30 (খাবার জলে ৪ ফোটা করে ৫ দিন দিতে হবে)

যদি হাড় স্থানচ্যুত (disbalance) হয়, তবে Hyparicum 30 ব্যাবহার করতে হবে

১০. খিঁচলাগা রোগ

লক্ষণ সমূহ :

ঠাণ্ডা নাই, পায়খানা ভালো, তারপরেও ঝিমান ভাব

প্রথমে কিছুক্ষন স্বাভাবিক আবার কিছুক্ষন অস্বাভাবিক

খাঁচার এক কোনায় বসে থাকা

দ্রুত ওজন কমে যাওয়া

জোরে শ্বাস নেওয়া

খাওয়ার চেষ্টা করা কিন্তু কিছুই খেতে না পারা

চিকিত্‍সা

হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

Nuxvom 30

Browmia 30

১১. পক্ষাঘাত (Paralisis)

লক্ষণ সমূহ :

পাখি হঠাত্‍ উড়তে না পারা

পা অবশ হয়ে পরা

নড়াচড়া করতে না পারা

কিছুক্ষন পরপর অনবরত ঘার ঘুরানো

চিকিত্‍সা

ক. ভ্যাটেরিনারী চিকিত্‍সা

Vitamin B-complex ও Zinc

Calcium

খ. হোমিওপ্যাঁথি চিকিত্‍সা

Nuxvom 30 (পাখিদের খাবার জলে ৪ ফোটা করে ২ দিন মিশিয়ে দিতে হবে)

Costicum 30 (জলে ৪ ফোটা করে ৫ দিন)

হোমিওপ্যাঁথি ঔষধ ব্যাবহারের নিয়মাবলী

০১. হোমিওপ্যাঁথি ঔষধ খালি পেটে খাওয়াতে হয় । হোমিওপ্যাঁথি ঔষধ খাওয়ানোর ২ ঘণ্টা আগে খাবার ও পানি সরানো উচিত্‍ । হোমিওপ্যাঁথি ঔষধ খাওয়ানোর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা পর Seed Mix দেয়া উচিত্‍ ।

০২. পাখিকে ড্রপার দিয়ে ঔষধ খাওয়ালে পাখির Beack এর side থেকে দিতে হবে । সামনে দিয়ে দিলে ঔষধ ঠিক মতো খাওওান যাবে না বা ঔষধ পরে যাবে ।

০৩. ধৈর্য রাখতে হবে ।

০৪. প্রতিটা ঔষধের জন্য আলাদা আলাদা ড্রপার ব্যাবহার করতে হবে ।

পোষা পাখির যত্ন

১.খাঁচার পাখি স্বভাবতই নাজুক প্রকৃতির। এরা কোনো কিছুই ‘অতি’ সহ্য করতে পারে না। অতি রোদ, অতি বাতাস কিংবা অতি শীতে এদের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। ফলে পাখির খাঁচাটি এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে না, সরাসরি বাতাস এসে ধাক্কা দেয় না, শীত হানা দেয় না। বৃষ্টির ছাঁটেও এরা কাবু হয়ে যায়।

তাই বারান্দায় খাঁচা রাখলে তিন পাশে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের দেয়াল তৈরি করে দিতে পারেন।

২.খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বিশেষ করে পানির বেলায়। ফুটিয়ে ঠান্ডা করা পানি প্রতিদিন সকালে পাত্রে দিয়ে রাখুন। পানি নোংরা হওয়ামাত্রই আবার বদলে দিন। আর পানির পাত্রটি যেন প্রতিদিন পরিষ্কার থাকে, সেটাও নিশ্চিত করুন। পাখিদের গোসলের জন্য আলাদা পাত্রে দুপুরের দিকে পানি দিয়ে রাখুন। গোসল শেষে সরিয়ে ফেলুন।

৩.একেক পাখির খাবার একেক রকম। পাখি কেনার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে, গুগলে সার্চ করে জেনে নিন, আপনার পাখির খাবার কী। যেসব খাবার পাখির খাদ্যতালিকায় নেই, তা খাওয়াবেন না। এতে পাখির সমস্যা হবে। আর খাবারের গুণগত মানও যেন ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।

৪.অধিকাংশ পাখি সাধারণ খাবার থেকে ক্যালসিয়ামসহ আরও কিছু খনিজ উপাদান সঠিক মাত্রায় পায় না। তাই খনিজ উপাদানের জোগান দিতে কাটলফিশ বোনের টুকরা, মিনারেল ব্লক খাঁচায় রেখে দিতে হবে। কেবল ধান, গম, যব বা ভুট্টা খাওয়ালেই হয় না; শাক, বরবটি, অ্যালোভেরার রসের মতো খাবার দেওয়াও জরুরি। ফিশার্স লাভবার্ডকে যেমন সপ্তাহে এক দিন শজনেপাতা দিলে উপকার পাবেন।

৫.খাঁচায় থাকার ফলে পাখিদের ‘শরীরচর্চা’ ঠিকমতো হয় না। এর ব্যবস্থাও আপনাকে করতে হবে। খাঁচার ভেতর ছোট মই, দোলনা, ঝুনঝুনি, প্লাস্টিকের বল রেখে দিন। পাখিরা এসব নিয়ে খেলাধুলা করলে শরীর ও মন দুটোই ঠিক থাকবে। হ্যাঁ, পাখিদেরও মন খারাপ হয়। বিষণ্ন পাখি কিছু খায় না, অসুস্থ হয়ে পড়ে দ্রুত। এমনটা বেশি হয় পাখি কোনো অসুখে পড়লে কিংবা সঙ্গীর অভাবে।

৬.পাখির কাজই হলো অর্ধেক খাবার খাওয়া আর বাকি অর্ধেক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে নোংরা করা। এটা মেনে নিতে হবে। আর প্রাকৃতিক কর্ম তো আছেই। তাই পাখির খাঁচা প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হবে।

৭.পাখিদের বিরক্ত করবেন না। খাঁচার বাইরে থেকে খোঁচাখুঁচি করা, খাবার ছুড়ে দেওয়া, লেজ ধরে টান দেওয়া—একেবারেই করা যাবে না। পাখি ভয়ে থাকলে কিছুই খাবে না, অসুস্থ হয়ে পড়বে। পাখির সঙ্গে বরং কথা বলুন, আস্তে–ধীরে হাত দিয়ে খাবার দিন। অনেক পাখিই তীক্ষ্ণ ঠোট দিয়ে ঠোকর দেয়। পাখির সঙ্গে ভালো আচরণ করলে একসময় দেখবেন আপনাকে আর ঠোকর দেবে না, যা বলবেন তা–ই শুনবে।

ঠাণ্ডার হাত থেকে পাখিকে সুরক্ষিত রাখতেঃ

১। পাখির খাঁচা এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাস না লাগে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অথবা শৈত্য প্রবাহ চলাকালীন সময়ে ঘরের জানালা দরজা ঠিক ভাবে বন্ধ রাখতে হবে আর যারা বারান্দায় পাখি রাখেন তাদের অবশ্যই বারান্দা পলিথিন বা তাবুর কাপড় বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

২। প্রতিদিন পাখির খাঁচা ২/৩ ঘণ্টা এমন ভাবে রোদে রাখুন যাতে খাঁচার এক পাশে রোদ লাগে এবং অন্য পাশে ছায়া থাকে।

৩। রাতের বেলা পাখির খাঁচা অবশ্যই মোটা কাপড় বা হালকা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাতাস চলাচলের জন্য কিছু জায়গা থাকে (উপর থেকে ৪ অংশের ৩ অংশ কাপড় দিয়ে ঢাকা এবং  নিচের ১ অংশ খোলা )।

৪।  পাখির শীতকালিন সম্পূরক খাবারঃ মধু, আদা, তুলসি পাতা, পুদিনা পাতা এবং অপরিশোধিত এপেল সিডার ভিনেগার (Unfiltered ACV) পাখির ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করে এবং পাখির ঠাণ্ডার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিশুদ্ধ মধু, অপরিশোধিত এপেল সিডার ভিনেগার (Unfiltered ACV), তুলসি এবং টাটকা শাক সবজি ও ফলমূল পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অথবা ঠাণ্ডার চিকিৎসায় তুলসির দ্রবন/শরবত প্রতি ২ সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করা যাবে। (তুলসির দ্রবন/শরবত তৈরির প্রনালী)। এছাড়া অপরিশোধিত এপেল সিডার ভিনেগার (Bragg Unfiltered ACV) মিছ্রিত পানি প্রতি ২ সপ্তাহে টানা ৩ দিন ( ছোট আকারের পাখির জন্য ৫ মিলি ১ লিটার পানিতে, বড় আকারের পাখির জন্য ১০ মিলি ১ লিটার পানিতে) খেতে দিতে পারেন। আর পাখির শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সজনে পাতা নিয়মিত খেতে দিন।  সজনে পাতায় ভিটামিন , খনিজ পদার্থ , প্রোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্টস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগিক উপাদান বিদ্যমান যা আপনার পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং সহজেই ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হবে না। ( সজনে পাতার পুষ্টিগুণ )

৫। শীতকালে পাখির সীডমিক্সে তেল জাতীয় বীজ যেমন তিল/গুজি তিল, সূর্যমুখীর বীজ, ক্যানারি এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।

৬। পাখির খাঁচা, খাবারের পাত্র এবং পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং প্রতিদিন পরিষ্কার পাত্রে তাদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার খেতে দিন। এতে করে আপনার পাখি ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাস এর আক্রমন থেকে সুরক্ষিত, সুস্থ ও সবল থাকবে যার ফলে হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লাগার ভয় কমে যাবে।

সতর্কতাঃ

পাখির রেসপিরেটরি সিস্টেম(শ্বাসতন্ত্র) অত্যন্ত সংবেদনশীল। এরা ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। সুতরাং পাখিকে উষ্ণ/গরম রাখার জন্য কোন ভাবেই আগুন/কয়লা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও বেশ কিছু হিটার আছে যাতে ননস্টিকি আবরণ না থাকার ফলে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় আবার কিছু গ্যাস/কেরসিন হিটার আছে যা থেকে এক ধরণের গ্যাস তৈরি হয় যা আপনার পাখির জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। কিছু রুম হিটার আছে যা ব্যবহার করা নিরাপদ কিন্তু অবশ্যই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে এবং পাখির খাঁচার থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে।

খয়রা কাস্তেচরা-Glossy Ibis
ধানি তুলিকা-Paddyfield pipit
বাংলাদেশের পাখির তালিকা-List of birds of Bangladesh
লাল লতিকা হট্টিটি-Red-wattled Lapwing
কাও ধনেশ-Oriental Pied Hornbill
দাগিগলা কাঠঠোকরা-Streak-throated woodpecker
সোনালি গলা বসন্ত বউরি-Golden throated barbet
স্লেটমাথা টিয়া- Slaty-headed Parakeet
বড় কাঠঠোকরা-Buff-spotted flameback
তামাটে কাঠঠোকরা-Bay woodpecker