Purple Heron
বেগুনি বক
এটি আরডিডি পরিবারভুক্ত বড় আকৃতির জলচর পাখি। এর বৈজ্ঞানিক নাম এসেছে লাতিন আরদেয়া "বক" এবং পুরপুরা , "বেগুনী বর্ণ" থেকে।
ইংরেজি নাম: Purple Heron.
বৈজ্ঞানিক নাম: Ardea perpurea.
বর্ণনাঃ
বেগুনি বক আকারে বড়। দৈর্ঘ্যে ৭৮–৯৭ সেমি (৩১–৩৮ ইঞ্চি) থেকে দাড়ানো অবস্থায় উচ্চতা ৭০ থেকে ৯৪ সেমি (২৮ থেকে ৩৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে। বিস্তৃত ডানা প্রশস্ততা প্রায় ১২০–১৫২ সেমি (৪৭–৬০ ইঞ্চি)। অবশ্য আকারে তুলনায় এই পাখির ওজন অনেক কম, মাত্র ০.৫ থেকে ১.৩৫ কেজি (১.১ থেকে ৩.০ পা)। ধূসর বক অপেক্ষা এই বক আকারে কিছুটা ছোট। লালচে-বাদামী গাত্রবর্ণ এবং গাঢ় ধূসর পিঠ দ্বারা পূর্ণবয়স্ক বেগুনি বককে আলাদা করা যায়। এর বাদামী হলুদ ঠোট সোজা ও শক্তিশালী। চোখ হলুদ রঙের। এই বকের পা সামনের দিকে বাদামী এবং পেছনের দিকে হলুদাভ। বেগুনী বক সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্তই বেশি কর্মময় থাকে। বেগুনি বক অগভীর পানিতে খাবারের সন্ধান করে।
স্বভাবঃ
অতি পরিচিত ধূসর বকের মতো অনেকটা দেখতে হলেও বেগুনী বক আকারে কিছুটা ছোট। সাধারণত জলাশয়ের আশেপাশে এই পাখির বসবাস। এটি উপকূলে ঘন ঘন ম্যানগ্রোভ জলাভূমি হতে পারে তবে এটি সাধারণত মিঠা পানির আবাসস্থল বেছে নেয়, বিশেষ করে রিড বেড সহ অবস্থানগুলি। এটি মাটির ঘর, নদীর তীর, খাল এবং খাল পরিদর্শন করে। কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জে, এটি খোলা জায়গায়, শুষ্ক ঢালে বেশি দেখা যায়। প্রজননের সময় দল বেধে থাকতে দেখা যায়।
প্রজননঃ
বড় হ্রদের কাছে ঘন নল বনে নল ও ঘাসের সমন্বয়ে বেগুনি বক বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরির সরঞ্জামাদি পুরুষ পাখি সংগ্রহ করে। এরা গাছের ডালেও বাসা তৈরি করে থাকে। স্ত্রী পাখি ফ্যাকাসে নীল-সবুজ বর্ণের ২-৫টি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ২৫ দিন সময় লাগে। ৩ মাস বয়স হলে বেগুনি বকের বাচ্চা ওড়ার ক্ষমতা অর্জন করে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই বাচ্চার দেখাশোনা করে। বাচ্চা ১ বছর বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। বেগুনি বক সাধারণত ২৩ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
খাদ্য তালিকাঃ
মাছ, ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ, খোলসি মাছ, ছোট স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী এমনকি ছোট পাখিও খাবার হিসেবে গ্রহণ করে।
বিস্তৃতিঃ
এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সর্বত্র পাওয়া যায়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নদীচর-মোহনা-উপকূল-কাপ্তাই হ্রদ, বৃহত্তর খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের হাওর-বিলে দেখা মিলত। এরা আমাদের আবাসিক পাখি।
অবস্থাঃ
ধারণা করা হয় বর্তমানে প্রায় ২৭০,০০০ থেকে ৫৭০,০০০টি বেগুনী বক টিকে রয়েছে। ধীরে ধীরে অবশ্য এই সংখ্যা কমের দিকে। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন এই পাখিকে স্বল্প পর্যায়ের ঝুঁকিতে আছে বলে চিহ্নিত করেছে। যেহেতু এখন পর্যন্ত বেগুনি বক আদতেই খুব ঝুকির মুখে আছে কিনা তা পর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মূলতঃ জলাশয় সংকট বেগুনি বকের সংখ্যা ঝুঁকিতেথাকার প্রধান কারণ। বেগুনি বক আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ার মধ্যে হওয়া পাখির প্রজাতি নিয়ে করা চুক্তির মাঝে অন্তর্ভুক্ত।