কানিবক-Indian Pond Heron
Indian Pond Heron

Indian Pond Heron

কানিবক

দেশি কানিবক আর্ডেইডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Ardeola  গণের এক প্রজাতির সুলভ জলচর পাখি। ভারতীয় উপমহাদেশে এরা একটি অতি পরিচিত পাখি।

বাংলা নাম: কানাবক, কোঁচবক, ধানপাখি, কানাবগি বা শুধুই কানিবক।

ইংরেজি নাম: Indian Pond Heron

বৈজ্ঞানিক নাম: Ardeola grayii

বর্ণনাঃ

এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৬ সেন্টিমিটার, ডানা ২১.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৬.৩ সেন্টিমিটার, পা ৬.২ সেন্টিমিটার ও লেজ ৭.৮ সেন্টিমিটার। ওজন গড়ে ২১৫ গ্রাম। অন্যসব বকের মতই পুরুষও স্ত্রী পাখি দেখতে অভিন্ন। অপ্রজননকালীন সময়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালচে বাদামি রঙের হয়। ঘাড়ে ও কাঁধে হলদে-পীতাভ লম্বালম্বি দাগ থাকে। দেহের পেছন দিক, কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ঢাকনি তুলনামূলক হালকা বাদামি।থুতনি ও গলা সাদা। সাদা বুকে লম্বালম্বি বাদামি দাগ থাকে। দেহতলের বাকি অংশ সাদা। নিচের ঠোঁট হলুদ; উপরের ঠোঁট কালচে ও ঠোঁটের আগা কালচে রঙের। ঠোঁট বেশ ধারালো। পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল হলদে-সবুজ। চোখ সবসময়ই কালো, বৃত্ত হলুদ। প্রজননঋতুতে এর মাথা হলদে-পীতাভ রঙ ধারণ করে। পিঠ ও ঘাড় মেরুন-বাদামি এবং অসংখ্য ঝালরের মত পালক দিয়ে দেহ সজ্জিত থাকে। মাথায় দু'টি বা তিনটি ফিতার মত সাদা ঝুঁটি থাকে। সতর্ক বা উত্তেজিত হলে এই ঝুঁটি কিছুটা জেগে ওঠে। ঠোঁট সবজে-হলুদ ও ঠোঁটের গোড়া থাকে নীল। ঠোঁটের আগা কালচে রঙেরই থাকে। পা ও পায়ের পাতা সবুজ রঙ ধারণ করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বুকে ফিকে বাদামি রঙের তিলা দেখা যায়। কাঁধ-ঢাকনিতে কিছুটা পীতাভ লম্বালম্বি দাগ থাকে। ডানার পালক উপরি-ঢাকনিতে ধূসর আভা রয়েছে। লেজ বৈচিত্র্যপূর্ণ বাদামি রঙে রাঙানো।

স্বভাবঃ

দেশি কানিবক হাওর, বিল, জলা, খাল, নদী, ধানক্ষেত ও প্যারাবনে বিচরণ করে। নিম্নভূমি এদের প্রিয় এলাকা হলেও সমুদ্রসমতল থেকে ২,১৫০ মিটার উচ্চতায় এদের দেখা গেছে। সচরাচর একা কিংবা ছোট বিচ্ছিন্ন দলে থাকে। অগভীর পানিতে মূর্তির মত ঠায় দাঁড়িয়ে শিকার করে। হঠাৎ করে ঠোঁট পানিতে ছুঁড়ে মেরে শিকার করে। কখনও কখনও পানির উপর হেঁটে হেঁটেও শিকার করে। মাটিতে বা গাছে থাকলে পরিবেশের সাথে খুব মিশে যায়, হঠাৎ করে শনাক্ত করা যায় না। ওড়ার সময় ঘাড় কিছুটা গোটানো থাকে। লেজের তলা দিয়ে পা দু'টি টান টান হয়ে বেরিয়ে থাকে। উড়লে ডানার সাদা রঙ স্পষ্টভাবে নজরে পড়ে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে চরলেও সন্ধ্যায় অনেকগুলো বক একই গাছে আশ্রয় নেয়। মানুষের হাতে বা অন্য কোন প্রাণীর কাছে ধরা পড়লে কিংবা বিপদে পড়লে চোখের মণিতে এরা ঠোকর মারে।

খাদ্যতালিকাঃ

মাছ, জলজ পোকামাকড়, চিংড়ি, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, ফড়িং, কচ্ছপের ছোট বাচ্চা, কেঁচো, সাপের ছানা, ঘাসের বীজ ইত্যাদি।

প্রজননঃ

জানুয়ারি থেকে আগস্ট কানিবকের প্রধান প্রজনন ঋতু। স্ত্রী ও পুরুষ বক দু'জনে মিলেই বাসা বানায়। গাছের সরু ডাল, কঞ্চি, পালক ইত্যাদি দিয়ে কোনরকমে বাসা সাজায়। বাসা বাঁধার জায়গা নির্ধারণ করতে ৩-৪ দিন ব্যয় করে। বাসায় ৩-৫ টি ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ সমুদ্রের জলের মত নীল, তাতে ফিকে-সবুজ আভা থাকে। ডিমের মাপ ৩.৮ × ২.৯ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষউভয়েই পালা করে ডিমে তা দেয়। ২৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। সদ্যোজাত ছানারা বাদামি রঙের হয়। পিঠের উপর হলুদাভ বাদামি রঙের চওড়া চওড়া ৩-৪টি টান থাকে। ডানায় কালচে-বাদামি মোটা দাগ থাকে

বিস্তৃতিঃ

বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমারে এদের সচরাচর দেখা যায়। এছাড়া ইরান, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এদের দেখা মেলে। থাইল্যান্ড, সিশেলেস ও ইয়েমেনে এরা অনিয়মিত। ভিয়েতনামে এদের খুব কম দেখা যায়। কুয়েত থেকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

অবস্থাঃ

বিগত কয়েক বছরে এদের সংখ্যা কি হারে বেড়েছে বা কমেছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় নি, তবে বর্তমানে এরা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

ছোট পানচিল-Little tern
লাল নুড়িবাটন
পিয়াং হাঁস-Gadwall
পাতি মাছরাঙা-Common Kingfisher
কালা লেজ জৌরালি-Black-tailed Godwit
তিলা মুনিয়া-Scaly-breasted munia
কাঠঠোকরা-Woodpeckers
চিত্রা বনমুরগি-painted spurfowl
সাদা খঞ্জন পাখি-White Wagtail। Motacillidae
বড় কাঠঠোকরা-Buff-spotted flameback