চখাচখি পাখি
চখাচখি, চকাচকি বা খয়রা চখাচখি Anatidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Tadorna গণের এক প্রজাতির দারুচিনি রঙের বড় আকারের হাঁস।
বৈজ্ঞানিক নাম: Tadorna ferruginea
ইংরেজি নাম: Ruddy Shelduck
বিবরণঃ
চখা ও চখির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। চখা কমলা-বাদামি থেকে দারুচিনি বর্ণের। মাথা ও ঘাড় হালকা বাদামি। ডানায় ধাতব-সবুজ পতাকা ও সাদা ঢাকনি-পালক থাকে। প্রান্ত-পালক ও লেজ কালো। প্রজনন মৌসুমে চখার গলায় সরু কালো বলয় হয়। চখি চখার চেয়ে আকারে সামান্য ছোট। চখির মাথা ফিকে রঙের, গলায় বলয় হয় না। চখাচখি উভয়ের চোখ বাদামি; ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস দেখতে চখির মত, তবে ডানার গোড়ার পালক ও ঢাকনি-পালক ধূসর বর্ণের।এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৬৪ সেন্টিমিটার, ডানা ৩৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৪.৩ সেন্টিমিটার, পা ৬ সেন্টিমিটার ও লেজ ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় দেড় কিলোগ্রাম।
বিস্তৃতিঃ
এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার উত্তর ও দক্ষিণাংশে চখাচখি দেখা যায়। এশিয়ায় তুরস্ক থেকে জাপান পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি। শীতকালে বাংলাদেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের হাওর ও নদনদীতে এদের দেখা যায়।
খাদ্য তালিকাঃ
চখাপাখি খাদ্য হিসেবে শস্যদানা, অঙ্কুরিত উদ্ভিদ, নরম পাতা, চিংড়ি-- এই জাতীয় প্রাণী খেয়ে থাকে। শামুক, কেঁচো, ব্যাঙও এদের খাদ্য।
বিচরণঃ
খাচখি পলিময় উপকূল, হ্রদ, বড় নদীর চর ও হাওড়ে বিচরণ করে, ঘন ঘাস বা ঝোপসম্বৃদ্ধ জলাশয় এড়িয়ে চলে। জোড়ায় জোড়ায় থাকলেও শীতকালে ঝাঁক বেঁধেই চলে। তবে শীতকালে ছোট ছোট ঝাঁকে বিচরণ করে। এরা প্রধানত নিশাচর। তবে ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলা সক্রিয় থাকে বেশি।
প্রজননঃ
মে-জুন মাসের সময় এরা ডিম পাড়ে। তারপর তা দেয় বাচ্চা ফুটানোর জন্য। চখাচখি ৬টি থেকে ১০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। চখি একাই ডিমে তা দেয়। মালভূমির উঁচু বাদা এলাকা ও জলাভূমির পাশে মাটিতে গর্ত করে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা। চখা কাছাকাছি থেকে ডিম পাহারা দেয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ছোট এ ছানাগুলো ৫৫ দিন হলেই উড়তে শেখে। বাচ্চাগুলোর বয়স দুই বছর হলেই এরা আবার ডিম পাড়ার উপযোগী হয়।
অবস্থাঃ
সমগ্র পৃথিবীতে আনুমানিক ১লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার চখাচখি রয়েছে। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৮৪ লাখ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায় নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যুনতম বিপদযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। শীতে বাংলাদেশে এরা পরিযায়ী হয়ে আসে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।