বনমোরগ
বন মোরগ গ্যালিফর্মিস বর্গের অন্তর্গত Phasianinae উপগোত্রের অন্তর্ভুক্ত ১৬টি গণের একটি। পৃথিবীতে জীবিত চারটি প্রজাতির পাখি এই গণের অন্তর্ভুক্ত। সবগুলো প্রজাতির আবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।
ইংরেজি নাম: Red Jungle Fowl
বৈজ্ঞানিক নাম: Gallus Gallus
বিবরণঃ
প্রজাতিগুলো মাঝারি আকারের ভূচর পাখি। এদের মাথায় ঝুঁটি ও গলার দুই পাশে দু'টি ঝুলন্ত লতিকা থাকে। ডানা গোলাকার; ডানার পঞ্চম প্রান্ত-পালকটি দীর্ঘতম। প্রথমটি দশমটির চেয়ে ছোট। লেজ দু'পাশ থেকে চাপা' লেজে মোট ১৪টি পালক থাকে। প্রজাতির পুরুষটির মাঝের দু'টি পালক লম্বা ও কাস্তের মত বাঁকানো। ঘাড় ও কোমর সরু এবং লম্বা কাঠির মত পালকে ঘেরা। পা শক্তিশালী ও লম্বা। নখরসহ মধ্যমার চেয়ে বড়। পুরুষটির পায়ের পেছনে গজালের মত লম্বা তীক্ষ্ণ নখর আছে। পুরুষ আর স্ত্রী নমুনার মধ্যে অত্যধিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। শরীরের মাপ ৬০-৭০ সেন্টিমিটার। মুরগির মাপ ৪০-৫০ সেন্টিমিটার। এদের গড়ন পোষা মোরগের চেয়ে একটু লম্বাটে।
খাদ্য তালিকাঃ
খাদ্যতালিকায় আছে কচি ঘাস-পাতার ডগা, যে কোনো ধরনের শস্যদানা, পোকা-পতঙ্গ, ছোট মাছ ও ব্যাঙ, নির্বিষ ও বিষধর ছোট সাপ, কেঁচো, ছোট কাঁকড়া, অঞ্জন, টিকটিকি, কাঁচা মরিচ, কচি বেগুন ইত্যাদি।
বিস্তারঃ
বাংলাদেশের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বন, চা-বাগান, শেরপুর ও মধুপুর শালবন ও সুন্দরবনে বনমোরগ বাস করে। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ায় বনমোরগ ও মুরগি দেখা যায়।
প্রজননঃ
প্রকৃতিক বনের ভেতর ঝোপ-ঝাড়ে বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের দিকে এরা বাসা তৈরি করে। ৬-৭টি ডিম দেয় এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ২০-২২দিন পর্যন্ত সময় লাগে। বাচ্চাগুলো বাসা থেকে নেমেই খাবার খেতে পারে।
আচরণঃ
বনমোরগ-মুরগী একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে বনে, ঘাসবনে বা বাঁশবনে ঘুরে বেড়ায়। রাত কাটায় উঁচু গাছের ডালে বা বাঁশঝাড়ে। সামান্য শব্দে ভীত হয়ে উড়ে গিয়ে বসবে গাছের মগডালে। পালানোর সময় পোষা মুরগির মতোই কক্ কক্ করে ডাকে। ভোরে আর সন্ধ্যাবেলায় বেশি ডাকে। মোরগের ডাক অনেকটা কু-কায়াক-কিউক-কিউক। সাধারণ বনমোরগের মত ডাকার সময় ধূসর বনমোরগ ডানা ঝাপটায় না।
প্রজাতিসমূহঃ
লাল বনমোরগ, Gallus gallus
শ্রীলঙ্কার বনমোরগ, Gallus lafayetii
ধূসর বনমোরগ, Gallus sonneratii
সবুজ বনমোরগ, Gallus varius