রেজেপ তাইয়িপ এর বয়স,শিক্ষা ও জীবনী -Age, Education and Biography of Recep Tayyip Erdogan
রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান হলেন তুরস্কের ১২তম রাষ্ট্রপতি যিনি ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সালে তিনি একে পার্টি (জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি বা একেপি) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দলটি জনসমর্থনের মাধ্যমে এক নম্বর অবস্থানে চলে আসে। দলটি ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবার তুরস্কের ইতিহাসে একদলীয় দল হিসেবে এবং পরপর ৪ বার (২০০২, ২০০৭, ২০১১,২০১৪) সাংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়। রাষ্ট্রপতি হবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন এই দলের সভাপতি ও প্রধান দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পুর্বেও ২০০৩ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুরষ্কের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং তার পূর্বে ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকারের চুক্তি, বিগত দশবছর ধরে চলাকালীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তুর্কি লিরার (তুর্কি মুদ্রা) মুল্য পুনর্নিধারণ, সুদের হার কমানো,অতীতে উসমানীয় শাসনাধীন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিশ্বমহলে নেতৃস্থানীয় ও সৌহার্দ্যপুর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্তিকে মুল লক্ষ্য রেখে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ (নব্য-উসমানবাদ), বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ, প্রভৃতি কারণে বিশ্বমহলে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত।
এরদোয়ান জর্দানের আম্মান নগরীভিত্তিক রাজকীয় ইসলামি কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্র (Royal Islamic Strategic Studies Centre) কর্তৃক প্রকাশিত সাংবাৎসরিক সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলমান (The 500 Most Influential Muslims) শীর্ষক প্রকাশনাটির ২০১৯ ও ২০২১ সালের সংস্করণগুলিতে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত হন।
তিনি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি পদে টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম: ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ (বয়স ৬৯)ইস্তাম্বুল, তুরস্ক
রাজনৈতিক দল: জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি (২০০১-বর্তমান)
অন্যান্য রাজনৈতিক দল: জাতীয় স্যালভেশন পার্টি (১৯৮১-এর পূর্বে),ওয়েলফেয়ার পার্টি (১৯৮৩-১৯৯৮),ভার্চো পার্টি (১৯৯৮-২০০১)
দাম্পত্য সঙ্গী: এমিনি গালবারেন (১৯৭৮-বর্তমান)
সন্তান: আহমেত বারান এরদোগান,নেকমিতিন বিলাল,এশরা,সামিয়ে
পিতামাতা: আহমদ এরদোয়ান (পিতা),তানজিলে হানিম (মাতা)
প্রাক্তন শিক্ষার্থী: মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়
ধর্ম: সুন্নি ইসলাম
জন্ম
এরদোয়ান ১৯৫৪ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি তারিখে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কাসিমপাশা শহরতলীতে আহমদ এরদোয়ান ও তানজিলে হানিম দম্পতির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আহমদ এরদোয়ান পেশায় একজন জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। পাঁচজন সহোদরের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
শিক্ষাজীবন
তিনি পিয়ালেপাশা শহরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেন এবং ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে তিনি এখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ইমাম হাতিব স্কুলে ভর্তি হন। ইমাম হাতিব স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণী সমাপ্ত করে তিনি আয়্যুব কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে তিনি ব্যবসায় শিক্ষা ও অর্থনীতি ইন্সটিটিউটে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৭ সালে উত্তীর্ণ হয়ে এখানে পড়ালেখা সমাপ্ত করেন।
পরিবার
এরদোয়ান ৪ জুলাই ১৯৭৮ সালে এমিন গুলবারানকে বিয়ে করেন। এমিন গুলবারান ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের দুই ছেলে আহমেত বুরাক (জন্ম ১৯৭৯) এবং নাজমুদ্দিন বিলাল (জন্ম ১৯৮১)। এছাড়াও দুই মেয়ে, এসরা (জন্ম ১৯৮৩) এবং সুমেয় (জন্ম ১৯৮৫)। তার বাবা আহমেত এরদোয়ান ১৯৮৮ সালে মারা যান এবং তার মা তেনজিল এরদোয়ান ২০১১ সালে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান।
এরদোয়ানের একজন ভাই এবং একটি বোন রয়েছে ।ভাই মুস্তাফা১৯৫৮ সালে ও বোন ভেসিলে ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। হাভুলি এরদোয়ানের সাথে তার বাবার প্রথম বিয়ে হয়েছিল। হাভুলি এরদোয়ান ১৯৮০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার দুই সৎ ভাই ছিল: মেহমেত (১৯২৬-১৯৮৮) এবং হাসান (১৯২৯-২০০৬)।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৭৬ সালে, এরদোয়ান কমিউনিস্ট বিরোধী অ্যাকশন গ্রুপ ন্যাশনাল তুর্কি স্টুডেন্ট ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িত হন। একই বছরে, তিনি ইসলামিস্ট ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টি (এমএসপি) এর বেয়োগলু যুব শাখার প্রধান হন। এবং পরবর্তীতে দলের ইস্তাম্বুল যুব শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান।
১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।তিনি ১৯৮০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর যখন রাজনৈতিক দলগুলি বন্ধ হয়ে যায় তখন তিনি বেসরকারী খাতে পরামর্শদাতা এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৩ সালে, এরদোয়ান নাজমউদ্দিন এরবাকানের অধিকাংশ অনুসারীকে ইসলামিস্ট ওয়েলফেয়ার পার্টিতে যোগদান করান। তিনি ১৯৮৪ সালে পার্টির বেয়োলু জেলার সভাপতি হন এবং ১৯৮৫ সালে তিনি ইস্তাম্বুল শহর শাখার সভাপতি হন। এরদোয়ান ১৯৮৬ সালের সংসদীয় উপ-নির্বাচনে ইস্তাম্বুলের ৬ তম জেলা প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন, কিন্তু উপ-নির্বাচনে পঞ্চম বৃহত্তম দল হিসাবে তার দল শেষতম হওয়ায় কোনও আসন পাননি। তিন বছর পর, এরদোয়ান বেয়োগলু জেলার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ২২.৮% ভোট নিয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এরদোয়ান ১৯৯১ সালে পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন, কিন্তু পছন্দের ভোটের কারণে তার আসন গ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়।