মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এর জীবনী - Biography of Mayor Mohammad Hanif
Mohammad Hanif Former Mayor of Dhaka

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এর জীবনী - Biography of Mayor Mohammad Hanif

মোহাম্মদ হানিফ বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মার্চ ১২, ১৯৯৪ সাল থেকে এপ্রিল ৪, ২০০২ সাল পর্যন্ত এই ৮ বছর তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

জন্ম: ১ এপ্রিল, ১৯৪৪,পুরান ঢাকা, বাংলাদেশ

মৃত্যু: ২৮ নভেম্বর ২০০৬ ঢাকা, বাংলাদেশ

সমাধিস্থল: আজিমপুর কবরস্থান

নাগরিকত্ব: বাংলাদেশী

রাজনৈতিক দল: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

দাম্পত্য সঙ্গী: ফাতেমা হানিফ

সন্তান: সাঈদ খোকন, ইভা, খুকি

জন্ম ও পরিবার

পুরানো ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম, ১৯৪৪ সালে ১ এপ্রিল। পিতা আবদুল আজিজ আর মাতা মুন্নি বেগমের ছোট ছেলে হানিফ। আদর করে সবাই তাকে ‘ধনী’ নামে ডাকত। হানিফ ছোটবেলায় মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুর পর ফুফু আছিয়া খাতুনের কাছে বেড়ে উঠেন তিনি। ঢাকার প্রখ্যাত পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ঢাকার শেষ সরদার আলহাজ্ব মাজেদ সরদারের কন্যা ফাতেমা খাতুনকে ১৯৬৭ সালে বিয়ে করেন মোহাম্মদ হানিফ। এই দম্পতির একজন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তার একমাত্র পুত্র সাঈদ খোকন ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র।

শিক্ষা

১৯৬০ সালে পুরান ঢাকার ইসলামিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে পরবর্তীতে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ) উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিএ পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে কিছুদিন আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেন।

রাজনৈতিক জীবন

মোহাম্মদ হানিফ ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তার রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ের পর পাকিস্তান সরকার যখন প্রাদেশিক সরকার ভেঙে দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করে এবং ২৪ ঘণ্টার নোটিসে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে মন্ত্রীপাড়ার বাসা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, সেসময় কেন্দ্রীয় সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মোহাম্মদ হানিফের পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের বাসায় অবস্থান নেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব ও তার পরিবার। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মোহাম্মদ হানিফকে খুব স্নেহ ও বিশ্বাস করতেন।

এরপর ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে ছয় দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি, ছয় দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন ও প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচন, একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সব আন্দোলনে তিনি রাজপথে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বপদে বহাল ছিলেন। তিনি টানা ৩০ বছর এ দায়িত্ব পালন করেছেন। ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৯৬-এর মার্চের শেষ সপ্তাহের গণআন্দোলনে মোহাম্মদ হানিফ তার নেতৃত্বে ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করেন যা তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতনসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট তৈরি করে।

২০০৪ সালের ভয়াল ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের ট্রাক মঞ্চে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে তার প্রিয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা করেন মোহাম্মদ হানিফ। একের পর এক ছোঁড়া গ্রেনেডের সামনে নির্ভয়ে পেতে দিলেন নিজেকে, শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মক আহত হন তিনি। মস্তিষ্কসহ দেহের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য ঘাতক স্প্লিন্টার ঢুকে পড়ে। দীর্ঘদিনের চিকিত্সাতেও কোনো ফল হয়নি বরং মাথার গভীরে বিধে থাকায় অস্ত্রোপ্রচার করেও অপসারণ করা সম্ভব হয়নি।

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম জাতীয় সংসদে হানিফ হুইপ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া ঢাকা-১২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু সে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ সালের ৩০ জানুয়ারি অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সে নির্বাচনে তিনি এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির মির্জা আব্বাসকে পরাজিত করে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। মার্চ ১২, ১৯৯৪ সাল থেকে এপ্রিল ৪, ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা নগরপাল হিসাবে কাজ করেন। ঢাকা নগরের উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ফোয়ারা নির্মাণ, মাতৃসদন নির্মাণ, বনায়ন কর্মসূচি, ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ, পৌর শিশুপার্ক নির্মাণ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাজ। নারী শিক্ষা বিস্তারে লক্ষ্মীবাজারে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ।

মৃত্যু

২০০৬-এর ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আগে মাথায় বিদ্ধ হওয়া স্পি্ন্টাররের প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তী সময়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ২৮ নভেম্বর ২০০৬ দিবাগত রাতে ৬২ বছর বয়সে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
আব্দুর রউফ চৌধুরীর জীবনী - Biography of Abdur Rauf Chowdhury
সেলিম রেজা নিউটন
শেখ রেহানা এর জীবনী - Biography of Sheikh Rehana
সাদিকা পারভিন পপি এর জীবনী-Biography of Sadika Parveen Poppy
ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী এর জীবনী- Biography of Dr. Enayetullah Abbasi
মাওলানা জাকারিয়া এর জীবনী - Biography of Maulana Zakaria
বিধান চন্দ্র পাল এর জীবনী-Biography Of Bidhan Chandra Pal
সাকিব আল হাসান এর জীবনী-Biography of Shakib Al Hasan
আয়াত আলী পাটওয়ারী এর জীবনী-Biography Of ayet ali patwary