মেয়র আনিসুল হকের জীবনী - Biography of Mayor Anisul Haque
আনিসুল হক ছিলেন একজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং টেলিভিশন উপস্থাপক। তিনি ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি বিজিএমই-এর সভাপতি ছিলেন, পরে এফবিসিসিআইর সভাপতি হন। পরবর্তীতে সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম: ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫২,নোয়াখালী, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ (বয়স ৬৫) লন্ডন, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য
নাগরিকত্ব: বাংলাদেশ
জাতীয়তা: বাংলাদেশ বাংলাদেশী
রাজনৈতিক দল: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গী: রুবানা হক
সন্তান: নাভিদুল হক (পুত্র),তানিশা ফারিয়ামান (কন্যা),ওয়ামিক উমাইরা (কন্যা),শারাফ (পুত্র)
পিতামাতা: শরিফুল হক (বাবা),রওশন আরা হক (মা)
বাসস্থান: চট্টগ্রাম
শিক্ষা: স্নাতক, স্নাতকোত্তর
প্রাক্তন শিক্ষার্থী: চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
পেশা: উদ্যোক্তা,রাজনীতিবিদ,টেলিভিশন উপস্থাপক
ধর্ম: ইসলাম
প্রাথমিক জীবন
আনিসুল হক চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে ১৯৫২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
টেলিভিশন
১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি।
ব্যবসা
আনিসুল হক আশির দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “মোহাম্মদী গ্রুপ” প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রুপটির তৈরি পোশাক, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ২০০৭ অনুসারে, বস্ত্র ও পোশাক খাতে গ্রুপটি প্রায় ৭০০০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করে। আনিসুল হক ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল এই সময়ে বিজিএমই-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএরও সভাপতি ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন
২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আনিসুল হক আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন এবং বিজয়ী হন।
পরিবার
আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের তিনজন সন্তান রয়েছে, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে তানিশা ফারিয়ামান এবং ওয়ামিক উমাইরা। ছেলে নাভিদুল হক বোস্টনের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন। এছাড়া আনিসুল হকের ছোট ভাই আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক সাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান।
মৃত্যু
২০১৭ সালের ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান মেয়র আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তার মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ (সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস) ধরা পড়ে। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার অবস্থার উন্নতি ঘটলে ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। ২৮ নভেম্বর অবস্থার অবনতি হলে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে আবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় ও লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০.২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২ ডিসেম্বর ২০১৭ আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজার পর তাকে বনানী কবরস্থানে ছোট ছেলে শারাফ ও মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।