খলিল আল-ওয়াজির এর জীবনী - Biography of Khalil al-Wazir
Khalil al-Wazir Palestinian military leader

খলিল আল-ওয়াজির এর জীবনী - Biography of Khalil al-Wazir

খলিল ইবরাহিম আল-ওয়াজির (আরবি: خليل إبراهيم الوزير, কুনিয়াত আবু জিহাদ (أبو جهاد—"সংগ্রামের পিতা") নামেও পরিচিত; একজন ফিলিস্তিনি নেতা এবং ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদি দল ফাতাহর সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ফাতাহর সামরিক কর্মকাণ্ডে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখা আল-আসিফার কমান্ডার ছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন

খলিল আল-ওয়াজির ১৯৩৫ সালে মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইনের রামলায় একটি সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইবরাহিম আল-ওয়াজির শহরের একজন মুদি দোকানদার ছিলেন। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় আরো ৫০,০০০-৭০,০০০ ফিলিস্তিনিসহ তার পরিবার উদ্বাস্তু হয়। তারা গাজার বুরেইজ উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেন। খলিল আল-ওয়াজির এখানে ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় গাজা উপত্যকা ও সিনাই উপদ্বীপের ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানে হামলার জন্য তিনি ফেদাইনদের একটি ছোট দল সংগঠিত করতে শুরু করেন।

১৯৫৪ সালে গাজায় ইয়াসির আরাফাতের সাথে তার সাক্ষাত হয়। পরবর্তীতে তিনি আরাফাতের ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন। গাজায় থাকাকালীন সময় খলিল মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হন। মিশরে এই সংগঠন নিষিদ্ধ ছিল তাই এর ফলে তাকে কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার কয়েকমাস পরে ১৯৫৬ তিনি কায়রোতে সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। আলেক্সান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি স্থাপত্যবিদ্যার উপরও পড়াশোনা করেছেন। তবে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেননি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তৎপরতার জন্য ১৯৫৭ সালে খলিল পুনরায় বন্দী হয়ে সৌদি আরবে নির্বাসিত হন। সেখানে তিনি স্কুল শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৯ সালে কুয়েতে যাওয়ার পরও তিনি শিক্ষকতায় ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৬২ সালে খলিল আল-ওয়াজিরের সাথে ইন্তিসার আল-ওয়াজিরের বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে পুত্র হলেন জিহাদ, বাসিম, নিদাল ও কন্যা হলেন ইমান ও হানান। ইসরায়েল ও পিএলও'র মধ্যে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইন্তিসার ও তার সন্তানেরা গাজা ফিরে আসেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রথম নারী মন্ত্রী হন।

ফাতাহ গঠন

কুয়েতে থাকাকালীন সময়ে খলিল আল-ওয়াজির আরাফাতসহ মিশরে সাক্ষাতলাভ করা অন্যান্য নির্বাসিত ফিলিস্তিনি সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করেন। ১৯৫৯-৬০ সালের মধ্যে তারা মিলে ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদি গেরিলা ও রাজনৈতিক সংগঠন ফাতাহ গঠন করেন। নবগঠিত সংগঠনের মাসিক পত্রিকা ফিলাস্তিনুনা, নিদা আল-হায়াত ("আমাদের ফিলিস্তিন, জীবনের দিকে আহ্বান") সম্পাদনার দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বৈরুত চলে আসেন।

আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আহমেদ বেন বেল্লা কর্তৃক ইয়াসির আরাফাত ও ফারুক কাদুমিসহ অন্যান্য ফাতাহ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল আলজেরিয়ায় আমন্ত্রিত হওয়ার পর ১৯৬২ সালে তিনি আলজেরিয়ায় স্থায়ী হন। আলজিয়ার্স‌ে তিনি ফাতাহর দপ্তর ও সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেন। ১৯৬৪ সালে বেইজিঙে প্রেরিত আলজেরীয়-ফাতাহ প্রতিনিধি দলে তিনিও সদস্য ছিলেন। সফরের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ চীনের অন্যান্য নেতাদের কাছে ফাতাহর চিন্তাধারা তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে চীনের সাথে ফাতাহর সুসম্পর্ক তৈরী হয়। পাশাপাশি তিনি পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও সফর করেন। উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েত কঙের সাথে তিনি সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। গেরিলা যোগ্যতা ও অস্ত্র সরবরাহকারী জাতিসমূহের সাথে তার যোগাযোগের কারণে তাকে যোদ্ধা সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ফাতাহর সামরিক শাখা আল-আসিফা গঠন করেছিলেন। আলজিয়ার্সে অবস্থানের সময় তিনি আবু আলি ইয়াদকে দলে নেন। আবু আলি তার ডেপুটি হয়েছিলেন এবং তিনি সিরিয়া ও জর্ডানে আল-আসিফার অন্যতম উচ্চপদস্থ কমান্ডার ছিলেন।

ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আন্দোলন প্রতিষ্ঠা

১৯৮২ সালে লেবাননের যুদ্ধে ফিলিস্তিনি শক্তির পরাজয়ের পর খলিল আল-ওয়াজির ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ফাতাহর শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। সেই বছর তিনি তরুণ কমিটিগুলিকে অর্থায়ন শুরু করেন। এসব সংগঠন ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর প্রথম ইন্তিফাদা শুরু করেছিল।

ইন্তিফাদা ছিল পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান। ১৯৮৬ সালের ৭ জুন ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার এক বছর পূর্বে তিনি আম্মান থেকে বাগদাদে নির্বাসিত হন। বাদশাহ হুসাইন ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত নিয়ে জর্ডান ও পিএলও’র যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার অবসান ঘোষণার পর তিনি তিউনিসিয়া চলে যান।

প্রথম ইন্তিফাদার সময় পিএলও অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানের চেষ্টা করে। আরাফাত তাকে ফিলিস্তিনি অঞ্চলের দায়িত্ব দেন। স্থানীয় অবস্থা সম্পর্কে খলিলের ভালো জ্ঞান ছিল। নির্বাসিত অবস্থায় তিনি অভ্যুত্থানে অর্থনৈতিক সহায়তা ও কৌশলগত সমর্থন প্রদান করেছেন।

হত্যাকাণ্ড

১৯৮৮ সালের ১৬ এপ্রিল তিউনিসে নিজ বাড়িতে খলিল আল-ওয়াজির নিহত হন। খুব কাছ থেকে তাকে কয়েকবার গুলি করা হয়েছিল। এসময় তার স্ত্রী ও পুত্র নিদাল উপস্থিত ছিলেন। একটি ইসরায়েলি কমান্ডো দল তাকে হত্যা করে। তারা মোসাদের সহায়তায় ইসরায়েল থেকে নৌকাযোগে এবং লেবানিজ জেলেদের আইডি ব্যবহার করে এখানে পৌছে বলে জানা যায়। পিএলও এলাকায় ঢোকার জন্য এই জেলেদের অপহরণ করা হয়েছিল। ইসরায়েল তার বিরুদ্ধে ইন্তিফাদার সময় সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ আনে। ২১ এপ্রিল দামেস্কের ইয়ারমুক উদ্বাস্তু শিবিরে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাজায় ইয়াসির আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
মাওলানা মুজাফফর বিন মহসিন এর জীবনী - Biography of Maulana Muzaffar bin Mohsin
মাওলানা আরিফ বিল্লাহ এর জীবনী-Biography of Maulana Arif Billah
দিলওয়ার হোসাইন সাইফী এর জীবনী -Biography of Dilwar Hossain Saifi
বাংলাদেশের সেরা ১০ বিজ্ঞানী
মুফতি ফয়জুল করিম এর জীবনী-Biography Of Mufti Faizul Karim
আল্লামা লুৎফুর রহমান-Biography Of Allama Lutfur Rahman
মুনাইম বিল্লাহ এর জীবনী - Biography of Munaim Billah
বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসী এর জীবনী - Biography of Badiuzzaman Syed Nursi
বন্ধু আমার তুই- Bondhu Amar Tui