খালেদ মিশেল এর জীবনী - Biography of Khaled Michel
খালেদ মিশাল (আরবি: خالد مشعل, প্রতিবর্ণীকৃত: Khālid Mashʿal)) একজন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক নেতা যিনি জঙ্গি সংগঠন হামাসের প্রাক্তন প্রধান।
১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠার পর মাশাল সংগঠনের কুয়েতি শাখার নেতা হন। ১৯৯২ সালে তিনি হামাসের পলিটব্যুরোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং এর চেয়ারম্যান হন। ২০০৪ সালের বসন্তে ইসরায়েল শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং তার উত্তরসূরি আবদেল আজিজ আল-রানতিসি উভয়কেই হত্যা করার পরে তিনি হামাসের স্বীকৃত প্রধান হন। তার নেতৃত্বে হামাস ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনি আইনসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। ২০১৭ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর হামাসের পলিটব্যুরো চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাশাল।
খালেদ মিশাল একজন শীর্ষস্তানীয় হামাস নেতা যিনি ১৯৯৬ সাল থেকে হামাসের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধের সময় থেকে তিনি নির্বাসনে রয়েছেন। তিনি আন্দোলনকে শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করতে সহায়তা করেন। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই গ্রুপকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে। ১৯৯৭ সালে জর্দানে এক ইসরাইলী হত্যা প্রচেষ্টা থেকে এই হামাস নেতা বেঁচে যান।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
মাশাল ১৯৫৬ সালে জর্ডান-অধিকৃত পশ্চিম তীরের সিলওয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সিলওয়াদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার পিতা, আবদ আল-কাদির মাশাল, ছিলেন একজন কৃষক (ফেলাহ) এবং ১৯৫৭ সালে কুয়েতে চলে গিয়েছিলেন কৃষিকাজে এবং একজন ইমাম হিসেবে। তিনি ফিলিস্তিনি গেরিলা নেতা আবদ আল-কাদির আল-হুসাইনির সাথে ১৯৩৬-১৯৩৯ আরব বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর, যে সময়ে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে, তার পরিবার জর্ডানে পালিয়ে যায় এবং এক বা দুই মাস পরে, তারা কুয়েতে আবদ আল-কাদিরে যোগ দেয়, যেখানে মাশাল উচ্চ বিদ্যালয় সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে মর্যাদাপূর্ণ আবদুল্লাহ আল-সালিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং ১৯৭১ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন।
মাশাল ১৯৭৪ সালে কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, এবং ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৭৭ সালে জেনারেল ইউনিয়ন অফ প্যালেস্টাইনিয়ান স্টুডেন্টস (GUPS) নির্বাচনে ইসলামিক জাস্টিস লিস্টের (কাইমাত আল-হক আল-ইসলামিয়া) নেতৃত্ব দেন। তালিকাটি ফিলিস্তিনের ইসলামী আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি অংশ। GUPS নির্বাচন বাতিল করা হয় এবং তিনি ফিলিস্তিনি ছাত্রদের জন্য ইসলামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন (আল-রাবিতা আল-ইসলামিয়া লি তোলাব ফিলাস্টিন)। তিনি ১৯৭৮ সালে পদার্থবিদ্যায় বিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবন
মেশাল হামাস আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য। ১৯৯৬ এবং ২০১৭ সালের মধ্যে তিনি রাজনৈতিক ব্যুরোর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৪ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের মৃত্যুর পর এর নেতা নিযুক্ত হন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ১৯৯৭ সালে মেশালকে হত্যার জন্য গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধানকে নির্দেশ দেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে বলেছিলেন।
মোসাদের দশজন এজেন্ট কানাডার জাল পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডানে প্রবেশ করে সেই সময়ে জর্ডানের নাগরিক খালেদ মেশালকে রাজধানী আম্মানের একটি রাস্তায় হাঁটার সময় বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হয়।
জর্ডানের কর্তৃপক্ষ হত্যা প্রচেষ্টার সন্ধান পায় এবং জড়িত দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
জর্ডানের প্রয়াত রাজা হুসেইন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেশালকে যে বিষাক্ত পদার্থের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিষেধক চান, কিন্তু নেতানিয়াহু প্রথমে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হস্তক্ষেপে নেতানিয়াহুকে প্রতিষেধক সরবরাহ করতে বাধ্য করায় এই হত্যা প্রচেষ্টা একটি রাজনৈতিক মাত্রা নেয়।
মেশাল ২০১২ সালের সাত ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো গাজা উপত্যকায় যান। ১১ বছর বয়সে তিনি চলে যাওয়ার পর ফিলিস্তিনি অঞ্চলে এটাই তার প্রথম সফর ছিল। রাফাহ ক্রসিংয়ে পৌঁছানোর পর বিভিন্ন দল ও জাতীয় পর্যায়ের ফিলিস্তিনি নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং গাজা শহরে পৌঁছনো পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের তাকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তার ধারে ভিড় করে।
২০১৭ সালের ৬ মে আন্দোলনের শুরা কাউন্সিল ইসমাইল হানিয়াহকে রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসাবে নির্বাচিত করে।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন
মাশাল ১৯৮০ বা ১৯৮১ সালে বিয়ে করেন এবং তিনি তিন কন্যা ও চার পুত্রের জনক। মাশালের সৎ ভাই আল-সাখরা ব্যান্ডের সাবেক গায়ক এবং ডালাসের গণপূর্ত ও পরিবহন বিভাগের সাবেক প্রকৌশলী মুফিদ আব্দুল কাদের। হলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশন ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে হামাসকে অর্থায়ন করার জন্য আবদুকালদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
নির্বাচনে বিজয়
তেহরানে ইরানের আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এর সাথে মাশাল। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের আইনসভা নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতেছিল।