ইউসুফ ইসলাম এর জীবনী - Biography of Yusuf Islam
পপ সংগীত জগতের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ক্যাট স্টিভেন্স ওরফে ইউসুফ ইসলাম৷ ষাটের মাঝমাঝি থেকে সত্তরের শেষ অবধি তাঁর সংগীত সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বব্যাপী৷ সাফল্য ও জনপ্রিয়তায়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি ঐ সময়।
একাধিক বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শী, গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ক্যাট স্টিভেন্স৷ আজো পপ সংগীত জগতে চির সবুজ হয়ে আছে তাঁর বহু গান৷ তাঁর সমাজ, স্বপ্ন আর ভালবাসা নিয়ে গাঁথা ব্যালাড আঙ্গিকের গান আজো মুগ্ধ করে অসংখ্য সংগীতানুরাগীদের৷
ক্যাট স্টিভেন্স'এর জন্ম ১৯৪৮ সালে লণ্ডনে৷ বাবা গ্রীক-সাইপ্রিয়ট ও মা সুইডিশ৷ আসল নাম স্টিভেন ডেমেত্রি জর্জিও৷ বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী৷ ছোট বেলা থেকে চিত্রকলার প্রতি তাঁর ছিল অনুরাগ৷ পরবর্তীকালে সংগীতের প্রতি ঝুঁকে পড়েন তিনি৷ ১৮ বছর বয়সে তাঁর হিট গান ‘আই লাভ মাই ডগ' এর মধ্য দিয়ে পপ সংগীতাঙ্গনে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ৷ তারপর থেকেই একের পর এক হিট অ্যালবাম বেরোয় বাজারে৷ একাধিকবার শ্রেষ্ঠ গায়ক ও গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন পপ সংগীতের এক বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব৷
১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ক্যাট স্টিভেন্স৷ নতুন নাম নেন ইউসুফ ইসলাম৷ আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও এই সময় সংগীত জগত থেকে সরে দাঁড়ান তিনি এবং পুরোপুরি ব্রতী হোন সমাজ সেবায়৷ বিশেষ করে দরিদ্র মুসলিম শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন তিনি৷ ১৯৮১ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইসলামিয়া প্রাইমারি স্কুল'৷ তাছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করেন তিনি৷ দির্ঘ ২৮ বছর পর ইউসুফ নামে তাঁর ‘অ্যান আদার কাপ' অ্যালবাম নিয়ে আবার পপ সংগীত জগতে ফিরে আসেন তিনি৷
নাম: ইউসুফ ইসলাম (স্টিভেন দিমিত্রী জর্জিও)
ডাক নাম: ইউসুফ
জন্ম: ২১ জুলাই ১৯৪৮
ধর্ম: ইসলাম
জন্মস্থান: ম্যারিলেবন, লন্ডন, ইংল্যান্ড
বর্তমান বয়স: ৭৪ বছর (২০২২)
জাতীয়তা: বৃটিশ
পেশা: শিল্পী, গীতিকার, সুরকার
ইউটিউব: https://www.youtube.com/channel/UCo0pv-U5bTDLlfdROjmCCGg
ফেসবুক:https://www.facebook.com/YusufCatStevens
ইনস্টাগ্রাম:https://www.instagram.com/YusufCatStevens/
টুইটার:https://twitter.com/YusufCatStevens
ওয়েবসাইট: https://catstevens.com/
আধাঁর থেকে আলোর পথে:
১৯৭৬ সালের ছোট একটি দূর্ঘটনা বদলে দেয় তার সারাটা জীবন। ঘটনার দিন আমেরিকার ম্যালিবু বিচে সাতার কাটতে যেয়ে প্রায় ডুবতে বসেছিল। তখন সে মৃত্যু ভয়ে চিৎকার করে উঠে, “Oh God! If you save me I will work for you.”
বলতে না বলতেই অপ্রত্যাশিত উল্টো একটি ঢেউ তাকে তীরে আছড়ে ফেলে! এই ঘটনার পর থেকে ক্যাট স্টিভেন্সের মনে আমূল পরিবর্তন আসে। পাশ্চাত্যের জড়বাদী জগতের পিছনে না দৌড়ে মনের শান্তি এবং আধ্যাত্মিক সত্যানুসন্ধানের দিকে ঝুঁকে পরেন। শুরুতে বৌদ্ধ ধর্ম, জেন, রাশিফল, অ্যাস্ট্রলজি, নিউমারলজি, টেরট কার্ড ইত্যাদি তুলনামুলক বোঝার চেষ্টা শুরু করেন।
আবার স্টিভেন্সের ভাই ডেভিড গর্ডন জেরুজালেম ঘুরতে যেয়ে ভাইয়ের জন্য একটি পবিত্র কোরান নিয়ে আসেন। ধারণা করা হয় এই সময় থেকেই ক্যাট স্টিভেন্সের ইসলামকে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। এমন সময় ছুটিতে স্টিভেনস মরোক্কো ঘুরতে যেয়ে প্রথম আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে অভিভূত হয়ে পরেন। জানতে চান, “এটা কিসের শব্দ?” উত্তরে জানতে পারেন, “এটা আজান, ঐশ্বরীয় বার্তা। যার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে মুসলমানদের মসজিদ মুখে আহ্বান করা হয়।” স্টিভেন্স ভাবেন, জীবনে টাকার জন্য গান করতে শুনেছি, গান হয়েছে খ্যাতির জন্য.. ক্ষমতা.. কিন্তু ঐশ্বরিক গান? জীবনেও শুনি নি! অসাধারন কনসেপ্ট! বলা যায় এই ভ্রমণটি ছিল ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পথে তার শেষ পদক্ষেপ। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালের ক্যাট স্টিভেন্স তেইশ ডিসেম্বর খৃস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। নিজের নাম ‘ক্যাট স্টিভেন্স’ পরিবর্তন করে ‘ইউসুফ ইসলাম’ রাখেন। পবিত্র কোরান শরীফের ইউসুফ নবীর কাহিনী পড়ে এই নামটির প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা তৈরি হয়।
এ্যালবামসমূহ
ক্যাট স্টিভেন্স হিসেবে:
১৯৬৭: ম্যাথু এ্যান্ড পুত্র
১৯৬৭: নিউ মাস্টার
১৯৭০: মনা বোনে জ্যাকন
১৯৭০: টি ফর দ্যা টিলেরম্যান
১৯৭১: টিজার এ্যান্ড ফায়ারক্যাট
১৯৭২: ক্যাচ বাল এ্যাট ফোর
১৯৭৩: ফরেইনার
১৯৭৪: বুদ্ধ এ্যান্ড দ্যা চকলেট বক্স
১৯৭৪: সাটারনাইট (লাইভ ইন টােকিও)
১৯৭৫: নাম্বারস
১৯৭৭: ইজিতসো
১৯৭৮: ব্যাক টু আর্থ
২০০৪: মাজিকাত
ইউসুফ ইসলাম হিসেবে:
১৯৯৫: দ্যা লাইফ অব দ্যা লাস্ট প্রোফেট
১৯৯৯: প্রেয়ার অব দ্যা লাস্ট প্রোফেট
২০০০: এ ইজ ফর আল্লাহ
২০০১: বিসমিল্লাহ
২০০৩: আই লুক আই সি
২০০৫: ইন্ডিয়ান ওকান
২০০৬: ফুটস্টেপস ইন দ্যা লাইট
২০০৬: এ্যান আদার কাপ
২০০৭: ইউসুফস ক্যাফে সেশন
২০০৯: রোডসিঙ্গার
এওয়ার্ড সম্মাননা:
শান্তি ও মানবতায় অবদানের জন্যসম্মাননা:
■ ২০০৩ সালে “World Social Award”: মানবিক ত্রাণ কার্য এবং শিশু এবং যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্থদের সাহাযার্থ্যে।
■ 2004 সালে Man for Peace Award: শান্তি প্রতিষ্ঠায়।
■ 2005 সালে Honorary Doctorate by the University of Gloucestershire: শিক্ষা এবং মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য।
■ 2007 সালে The Mediterranean Prize for Peace: বিশ্বময় শান্তি এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
■ 2007 সালে honorary doctorate (LLD) by the
University of Exeter: মানবতা ও শান্তি প্রথিষ্ঠায় এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে সঠিক ইসলামকে পরিচয় করে দেবার অবদানে। ddin Ihsanoglu and guitarist Brian May.
■ 2009 সালে Special Achievement Award of the German Sustainability Award.