জুনাইদ জমশেদ (রহঃ)- Junaid Jamshed
বাবার নাম:জামশেদ আকবর
মায়ের নাম:নাফিসা আকবর
আত্মীয়: ফৌজিয়া কাসুরি, যিনি তার খালা ছিলেন, এবং অভিনেতা অ্যালি খান, তার কাজিন।
জন্ম: ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪
জন্মস্থান: রাওয়ালপিন্ডি, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
বর্তমান বয়স: ৫২ বছর
পেশা: সুরকার, গীতিকার
কর্মজীবন: ১৯৮৭–২০১৬
ওয়েবসাইট: https://junaidjamshed.net/
জন্ম
জুনায়েদ জামশেদ করাচিতে নওশেরা থেকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন জামশেদ আকবর খান (লন্ডন ) এবং লোহারু রাজ্যের নবাবের নাতনী নাফিজা আকবর খান এর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মামা সাহেবজাদা জাহাঙ্গীর, ডাক নাম "চিকো", তিনি লন্ডনে অবস্থানরত এক ব্যবসায়ী যিনি ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং যার পুত্র শেরি জাহাঙ্গীর অভিনেতা হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন। পিটিভিতে ক্লাসিক নাটক জিন্নাহ সে কায়েদে এম এ জিন্নাহর ভূমিকায় তার ভূমিকা, অন্য এক ছেলে কফিল জাহাঙ্গীর ছিলেন ইংল্যান্ড ভিত্তিক ঘরোয়া ক্রিকেটার যিনি হার্টফোর্ডশায়ারের হয়ে অলরাউন্ডার হিসাবে অভিনয় করেছেন। অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের মধ্যে রাজনীতিবিদ ফৌজিয়া কাসুরি, যিনি তার খালা ছিলেন, এবং অভিনেতা অ্যালি খান, তার কাজিন।
শিক্ষা
সৌদি আরবের ইয়ানবু আল বাহরের একটি আন্তর্জাতিক বোর্ডিং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করার পরে জামশেদ যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার জন্য পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিল। তবে তার দুর্বল দৃষ্টিশক্তি এটিকে বাধা দেয়। এরপরে তিনি লাহোরের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন, সেখানে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিষয়ে তার বড় ঘোষণা করার আগে তিনি গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান নিয়েছিলেন। ১৯৯০ সালে, জামশেদ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, বিজ্ঞান স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
রকস্টারের প্রারম্ভ
চাকুরিকালে শিক্ষাকালীন অবকাশে তিনি শুরু করেন রক গানের কনসার্ট। পেশওয়ার ও লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন বিভিন্ন শো করছিলেন, তখনো তিনি লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্র-প্রকৌশলে অধ্যয়নরত। গান গাইতে গাইতেই পরিচয় হয় রোহেল হায়াত ও শেহজাদ হাসানের সঙ্গে। তারা মিলেই খোলেন নতুন ব্যান্ড দল ‘ভাইটাল সাইন্স’, যার মূল ভোকালিস্ট ছিলেন জুনাইদ। সময়টা ১৯৮৬ এর মাঝামাঝি।
পরের বছরেই একই নামে বাজারে আসে তাদের অ্যালবাম। সেখান থেকে ‘দিল দিল পাকিস্তান’, ‘তুম মিল গায়ে’ দিয়ে দেশজোড়া খ্যাতি পান জুনাইদ ও তার ব্যান্ড। তারপর তো পড়া ছেড়ে পুরোদস্তুর গানেই মজে গেলেন জুনাইদ।
জনপ্রিয়তা
পরবর্তী দুই অ্যালবাম ‘ভাইটাল সাইন্স টু’ আর ‘অ্যাতবার’ এর জনপ্রিয়তা জুনাইদকে দেয় নতুন এক পরিচয়ের দিশা। ১৯৯৪ সালে পিটিভির ‘ঢুন্ডলে রাস্তে’ সিরিজটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে জুনাইদ এবার নাম লেখালেন অভিনেতার খাতায়! অভিনেতা হিসেবে ছোট একটি ইনিংস খেলে জুনাইদ এবার মন দিলেন সলো গানের ক্যারিয়ারে। ১৯৯৮ সালে ব্যান্ড ছেড়ে এসে বের করলেন সলো অ্যালবাম ‘উস রাহ পার’ (১৯৯৯)। এই অ্যালবাম থেকে টাইটেল ট্র্যাকটি সহ ‘না তু আয়েগি’, ‘আঁখোঁ কো আঁখোঁ নে’, ‘ও সানাম’ বাজারে তুমুল জনপ্রিয় হয়। ২০০১ সালে বের হয় তার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘দিল কি বাত’। ২০০৩ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের এক জরিপে ‘সেরা ১০ সুর’-এর তালিকায় ৭,০০০ গানকে পিছে ফেলে জায়গা করে নেয় জুনাইদের ‘দিল পাকিস্তান’।
কর্মজীবন
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিগ্রিটা শেষ করে তিনি কাজ করলেন কিছু কোম্পানিতে। সেখানে মন টিকাতে পারলেন না তিনি। কাছের এক বন্ধুকে নিয়ে তিনি এরপর খুলে বসলেন ফ্যাশন হাউজ ‘জে ডট’। শোনা যাচ্ছিলো তখন থেকেই তিনি বেশ করে ঝুঁকে পড়ছিলেন ধর্মকর্মের দিকে।
ব্যবসায় উন্নতির সাথে সাথে তিনি জড়িয়ে পড়েন তাবলিগ জামাতের সাথেও। রক গায়ক, খণ্ডকালীন অভিনেতা থেকে তিনি বনে গেলেন ইঞ্জিনিয়ার, ফ্যাশন ডিজাইনার এবং সর্বোপরি ধর্মপ্রচারক। তাবলিগের হয়ে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেবার পাশাপাশি তিনি শুরু করলেন নাত (নবীর স্তুতিমূলক গান) গাওয়া। এই নাত দিয়ে পুনরায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠলেন জুনাইদ জামশেদ। তবে পুনর্জীবনের এ অধ্যায়ে অবধারিতভাবেই শ্রোতা-ভক্তের ধরনটা বদলে যায়। কিন্তু কণ্ঠ তো রয়েছে আগের ন্যায় মধুময়ই, এ কারণে জুনাইদের গাওয়া ‘ইয়ে সুভা মদিনা’, ‘তুনে পুঁছি ইমামত’, ‘মুলতাজিম পার দুয়া’, ‘মেরে মাদাদ আল্লাহ’র মতো অসংখ্য নাত পায় মানুষের ভালোবাসা। বাংলায় গাওয়া ‘হে রাসূল’ ও ‘নবী মোর পরশমনি’-র কাভারও ইউটিউবের কল্যাণে পেয়েছে বেশ বাঙালি-শ্রোতাপ্রিয়তা। বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের জন্য প্রচুর দাতব্য কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন জুনাইদ। পূর্বের গ্ল্যামারের সাথে ধর্মের মিশেলে তার এই নতুন কারিশমাটিক ভূমিকা তাকে পরিণত করে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে। মাত্র বছর দশেকের ব্যবধানে একজন রকস্টারকে এভাবেই পৃথিবী চিনলো সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে।
মৃত্যু
জুনায়েদ জামশেদ ও তার পরিবার ৭ই ডিসেম্বর ২০১৬ সালে চিত্রাল থেকে ইসলামাবাদে যাওয়ার সময় পিআইএ ফ্লাইট ৬৬১ দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চিত্রালে তাবলিগ জামাতের একটি মিশনে ছিলেন ও বিমানে করে ইসলামাবাদে ফিরছিলেন। তিনি সংসদ মসজিদে শুক্রবারের খুতবা দেওয়ার পথে যাচ্ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি তার প্রথম স্ত্রী আয়েশা, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গিয়েছেন। ২০১৮ সালে, জামশেদ মরণোত্তরভাবে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, সিতারা-ই-ইমতিয়াজের জন্য মনোনীত হয়েছেন।