
ডাঃ মুরাদ হাসান এর জীবনী
Dr. Murad Hasan
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসক। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
জন্ম: ১৭ নভেম্বর ১৯৭৪ (বয়স ৪৭) দৌলতপুর, আওনা, সরিষাবাড়ী, জামালপুর, বাংলাদেশ।
রাজনৈতিক দল: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গী: জাহানারা এহসান
সন্তান: এক কন্যা ও এক পুত্র
পিতামাতা: মতিয়র রহমান তালুকদার, মনোয়ারা বেগম
শিক্ষা: এমবিবিএস, এমফিল
পেসা: চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ
পরিচিতি
মুরাদ হাসান ১০ অক্টোবর ১৯৭৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মতিয়র রহমান তালুকদার ও মাতা মনোয়ারা বেগম মনু। তার ভাই মাহমুদ হাসান তালুকদার মিন্টু একজন আইনজীবী ও বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি। তার স্ত্রী জাহানারা এহসান পেশায় একজন চিকিৎসক। এই দম্পতীর এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
শিক্ষা জীবন
মুরাদ হাসান জামালপুর শহরস্থ কিশলয় আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ১৯৯০ সালে তিনি জামালপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৯৩ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২০০৪-২০০৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ‘প্লাস্টিক ও পুনর্গঠনমূলক সার্জারি’-র উপর স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হতে ২০১১ সালে বিকিরণ ক্যান্সারবিজ্ঞানের উপর এম. ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সারবিজ্ঞান বিভাগে কনসালটেন্ট (পরামর্শক) হিসেবে কর্মরত আছেন।
রাজনৈতিক জীবন
মুরাদ হাসান ১৯৯৪ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ২০০০ সালে তিনি ছাত্রলীগের মমেক শাখার সভাপতি হন। ২০০৩ সালে তিনি আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা শাখার সদস্য, ২০১৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ২০১৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ২০০৮ সালের নবম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের মন্ত্রীসভায় তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। তারপর ১৯ মে ২০১৯ থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিরও কেন্দ্রীয় সদস্য। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর আজীবন সদস্য।
সমালচনা
২০২১ সালের অক্টোবরে, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে দেওয়া এক বক্তব্যে মুরাদ হাসান বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তার সেই বক্তব্যে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ এবং ১৫তম সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল রাখার দাবি পেশ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা উল্লেখ থাকায় এবং সকল ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা উল্লেখ থাকায় তার প্রস্তাবটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়। ১ ডিসেম্বর রাতে, এক ফেসবুক লাইভে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে তিনি কটূক্তি করেন। তিনি জাইমা রহমানকে লুইচ্চা বলে অভিহিত করে বলেন “প্রতিরাতে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সঙ্গে না শুইলে তার হয় না”। তার এসব অশ্রাব্য বক্তব্যের কারণে তিনি নেট দুনিয়ায় টাক্কু মুরাদ নামে পরিচিত ও হাসাহাসির কারণ হন। এই ঘটনায় বিএনপি তার পদত্যাগ দাবী করে। তবে বিবিসিকে তিনি বলেন, এসব বক্তব্য দিয়ে তিনি কোন ভুল করেননি। এগুলো তিনি প্রত্যাহারও করবেন না কিংবা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সরকার ও দলের উপর থেকে কোন চাপও নেই।
৬ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুরাদ হাসানের সাথে চিত্র নায়ক মামনুন হাসান ইমন ও নায়িকা মাহিয়া মাহি একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়। যেখানে তিনি মাহিয়া মাহির সাথে অশ্লীলভাবে কথা বলেন এবং তার কাছে যেতে বলেন। ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে ‘অশ্রাব্য’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়। বিষয়টি দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়।
পদত্যাগ
৭ই ডিসেম্বর, ২০২১ ইমেইলের মাধ্যমে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তবে পদত্যাগের জন্য তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণের’ কথা উল্লেখ করেন। তাকে প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর জেলার আওয়ামী লীগের কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পদত্যাগ প্রাপ্তের পর তিনি দেশ ত্যাগ করে কানাডায় চলে যান। কানাডায় প্রবেশ না করতে পেরে দুবাই হয়ে তিনি ১২ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
স্ত্রীর অভিযোগ
মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী চিকিৎসক জাহানারা এহসান ৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন। এর আগে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান। ফোন পেয়ে পুলিশ তাদের ধানমন্ডির বাসায় যায়।
অন্যান্য সম্পৃক্ততা
তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর আজীবন সদস্য। এ ছাড়া, তিনি জাতীয় ও সামাজিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়মিত আলোচক হিসাবে টেলিভিশনে টকশো, বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাছাড়া, তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় ২০০১ সাল থেকে লক্ষাধিক দু:স্থ ও অসুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন।
আপনার মতামত লিখুন