মুফতি কাজী ইব্রাহীম
Mufti Kazi Ibrahim
মুফতি কাজী ইব্রাহীম পরিচয়
হাফিজ মুফতি কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম বর্তমানে নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শরিয়া কমিটির একজন সদস্য।
মুফতি কাজী ইব্রাহিমে লেখা বই
সালাতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব দোয়া পড়তেন
ইমাম আবু হানীফা এবং প্রকৃত হানাফী মাযহাব
ঈমান ও ঈমান ভাঙ্গার কারণ
ইকামাতুস সালাত-১
তাওহীদ জিজ্ঞাসা জবাব -১
ইসলামে আমাদের জানা অজানা -১ম খণ্ড
স্বপ্নে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে ‘ইতালির মামুন মারুফের’ কথোপকথন থেকে শুরু করে নানান বিষয়ে বক্তব্য প্রকাশ করে বিতর্কের জন্ম দেন মুফতি কাজী ইব্রাহীম। তার ওই সব বক্তব্যের কারণে ইতোমধ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি ডিবি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি রয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন কে এই মুফতি ইব্রাহীম?
বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে- তিনি একজন কিতাবি মানুষ। তার দাদা ছিলেন নোয়াখালীর আলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। কলকাতা আলিয়ার বড় ডিগ্রিধারী। হাটহাজারী মাদরাসার উৎপত্তি হয়েছে তার নানাকে দিয়ে। তার নানা সারাজীবন হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শুরা সদস্য ছিলেন। তার মামা লালবাগ মাদরাসার মুফতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাপরবর্তী সময় তার মামাকে নিয়ে এসে বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব হিসেবে নিয়োগ দেন। স্বাধীন বাংলার বায়তুল মোকাররমের প্রথম খতিব তিনি। আমরণ খতিব ছিলেন বায়তুল মোকাররমে।
তিনি জানান, তার নিজের গড়া মাদরাসায় সময় দেন। গাজীপুরে একটা মাদরাসা আছে। দক্ষিণখানে নির্মাণাধীন মাদরাসা রয়েছে। তার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে, যেটির ৩ টি শাখা রয়েছে।
তার যেসব বক্তব্যে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়-
মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বেশ কয়েকটি বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হয়, যেসব বিষয় মুফতি ইব্রাহিম বিভিন্ন সভা ও ওয়াজ মাহফিলে বলেছিলেন। একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একই কথা বলেন। মুফতি ইব্রাহিমের বিতর্কিত সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ইতালির মামুন
মামুন মারুফ ইতালিতে থাকে, সে বাঙালি কিন্তু ইতালিপ্রবাসী। আমি তো তাকে চিনি না। আমার ভক্ত আছে এ দেশে ১০-১৫ কোটি। আমি ২০ বছর ধরে মিডিয়াতে কাজ করি। বিটিভিসহ দেশের প্রায় সব টেলিভিশনেই কথা বলেছি। সে কারণে বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই আমাকে চেনে, মামুনও চেনে। মামুন আমার ফোন নম্বর যোগাড় করেছে বহু কষ্টে। আমি তো সবার ফোন ধরি না। পরে আমার পিএস সাহেবকে দিয়ে বহু কষ্টে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে।
ফেব্রুয়ারি নাগাদ সে স্বপ্ন দেখেছে, করোনাভাইরাস তাকে নানান কথা বলেছে। আমরা তো স্বপ্নের কথা বুঝতে পারি সেটা মেকি, বানোয়াট না আর্টিফিসিয়াল। তার স্বপ্নটা শুনে মনে হলো সে সাদামাটা টাইপের একটা ছেলে। তার স্বপ্নটা সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই আমার কাছে নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট মনে হলো। আমি দেখলাম এতে খারাপ কিছু নাই, স্বপ্নকে সামনে রেখে জাতিকে যদি সতর্ক করা যায় তাহলে এতে তো ক্ষতি কিছু নাই। আমরা তো ভালো যে মানুষকে আগেভাগেই ইনফর্ম করছি। যখন কেয়ামত ঘনিয়ে আসবে মোমিনের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। স্বপ্ন যে কোনো মানুষই দেখতে পারে সে মুমিন হোক বা না হোক।
q7+6=13 সূত্র
এইটা একটা জটিল বিষয়। এইটার আলোকে ও (মামুন) চেষ্টা করতেছে কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায় কি না। 1 মানে আল্লাহ এক। এক আল্লাহর প্রতি ফেইথ থাকতে হবে। ফেইথ যদি না থাকে ঈমান যদি না থাকে তাহলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল থাকতে হবে। q মানে কোরআন। q7 হলো কোরআনের সুরা ফাতিহার ৭টি আয়াত। এই ৭ টি আয়াত তো এম্নিই শেফা, ৭ বার সুরা ফাতিহা পড়লে যেকোনো রোগব্যাধি থেকে এম্নিতেই মুক্তি আসে। এইটা বিশাল একটা সূত্র। এর অনেক ব্যাখ্যা আছে। আমাকে সে (মামুন) যে কথাগুলো বলেছে তা প্রত্যেকটি সায়েন্টিক বলে মনে হয়েছে। আমরা তো ওষুধ কোম্পানিও না, সেইটা বানানোর মতো ক্ষমতাও নাই। সে যদি পারে ব্যক্তিগতভাবে তাহলে উপকার করার চেষ্টা করবে, এই আরকি.
পাপিয়াদের করোনা আক্রমণ করবে
সৌদি আরবে তাদেরই হয়েছে যারা অশালীন, ওখানের ভেতরের অবস্থা তো খুবই খারাপ। আমি যাই তো দেখেছি। দুবাইকে দেখলে তো মনে হয় না ওটা কোনো মুসলিমের দেশ। কী হয় না সেখানে? ইরানে তো ম্যাসাকার অবস্থা, ৫ জন মন্ত্রীও তো মনে হয় মারা গেছে। ওরা যেহেতু আল্লাহর ধর্মকে বিকৃত করেছে। আমি বলেছি আমাদের দেশে দেরি করে আসবে। আমাদের মতো কাউকে আক্রমণ করবে না। করোনা আক্রমণ করবে পাপিয়ার মতো মানুষদের। আমাদের ভয়ের কিছু নেই। মামুন স্বপ্নে জানতে পেরেছে আমাদের দেশের যারা অসৎ কাজ করে, নেশা করে ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে তাদের ধরবে করোনা। যুগে যুগে এসব অপরাধ যারা করে তাদের ওপরই গজব এসেছিল।
শেকসপিয়ার এর আসল নাম শেখ জুবায়ের
একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়- মুফতি ইব্রাহিম বলছেন, 'শেকসপিয়ারের আসল নাম শেখ জুবায়ের। তিনি অ্যারাবিয়ান।' এই ভিডিওটি দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে মুফতি ইব্রাহিমকে দেখা যায় একটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজি মুফতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি সম্ভবত ১০-১২ বছর আগের। আমি মাহফিলে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেটি বলেছিলেন গাদ্দাফি। উনি বলেছিলেন আরবের যেসব পরিবার হিজরত করেছিল তাদেরই বংশধর। আমি গাদ্দাফির বক্তব্যেই শুনেছি।'
তিনি বলেন, ইংরেজদের নামের পরিবর্তনের ধারায় শেকসপিয়ার নামটিও পরিবর্তন হয়েছে। যেমনটা পরিবর্তন হয়েছে ইসহাক থেকে আইজাক, ইবনে সিনা, এবেসিনা, ইউসুফ থেকে যোশেফ।
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোড থেকে মুফতি ইব্রাহীমকে আটক করা হয়। ওয়াজ নসিহতের নামে উল্টাপাল্টা ও ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে মুফতি কাজী ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তরের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ জানিয়েছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে হিন্দুস্তানের দালাল ও র-এর এজেন্ট কেন বলছেন, তা জানতেই মুফতি ইব্রাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে যদি মুফতি ইব্রাহিম সন্তোষজনক বক্তব্য দিতে না পারেন তাহলে মামলা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।