ছৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারী জীবনী
Biography of Syed Shafiul Bashar Maizbhandari
জন্মঃ
শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ শফিউল বশর আল হাচানী আল মাইজভান্ডারী (কঃ) ১৩২৫ বাংলার ৭ই ফাল্গুন ১৯১৯ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি রবিবার পূর্ণময়ী মাতা হযরত সৈয়দা জেবুন্নেছা রাহমানীর কোলে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ তায়ালা যাকে সর্বোত্তম মাহবুবরূপে গ্রহণ করতে চান তাঁকে তিনি নানা কঠিন পরীক্ষায় ফেলে, যোগ্যতর হিসেবে গড়ে তুলেন। তাঁর মাত্র আড়াই বৎসর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন, তাঁর বড় ভাই শাহজাদায়ে গাউছুল আ’যম হযরত শাহ্সুফি মাওলানা সৈয়দ খায়রুল বশর মাইজভান্ডারী (কঃ) এর তত্ত্বাবধানে এবং আত্মীয় স্বজনদের মায়ামমতায় তিনি বড় হন। তাঁর জন্মদাতা পিতা হযরত গাউছুল আ’যম বাবাভান্ডারী (কঃ) সর্বসময় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন বিধায় তিনি জাগতিক পিতৃ স্নেহ পাননি।
শিক্ষাঃ
ছোটবেলা থেকেই বিদ্যা শিক্ষা এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাঁর প্রবল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়, যথাযথ শিক্ষকের সাহাচর্য্যে তিনি লেখাপড়ায় উন্নতি লাভ করতে থাকেন। আরবী, ফার্সী ও উর্দুর পাশাপাশি সমসাময়ীক বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষায়ও তিনি পারদর্শি হয়ে উঠেন। গ্রামীণ মক্তবে শুরু হয় তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ। পরে তাকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। তিনি ধর্মগ্রন্থ, হাদীস শরীফ ইত্যাদিও অধ্যয়ন করেন। ভারতের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৩২ সনে। শিক্ষা সমাপনান্তে তিনি নিজ গ্রাম মাইজভান্ডার শরীফে প্রত্যাবর্তন করেন এবং শিষ্য রুপে স্বীয় পিতার নিকট হতে আধ্যাত্ম জ্ঞান সাধানায় আত্মনিয়োগ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনঃ
১৯৩৭ খৃষ্টাব্ধের ৫ই এপ্রিল, ১৩৪৩ বাং ২২ চৈত্র তার পিতা গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী পরলোকগত হন। এর ছয়মাস পর সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সৈয়দা আশরাফুন্নেসার সাথে। তিনি পাঁচ পুত্র ও ছয় কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তার পুত্রগণের নাম যথাক্রমে: সৈয়দ হাবিবুল বশর, সৈয়দ মুহিবুল বশর, সৈয়দ নজিবুল বশর,সৈয়দ মুজিবুল বশর,সৈয়দ আমিনুল বশর সৈয়দ মুজিবুল বশর, সৈয়দ করিমুল বশর।
বার্মায় গমনঃ
১০ জানুয়ারি ১৯৩৯ খৃষ্টাব্ধে তিনি স্টীমার যোগে এবং ১৯৪৬ খৃষ্টাব্ধে উড়ো জাহাজযোগে বার্মা সফর করেন। প্রথম সফর কালে অনেক আশেক-ভক্তের সমাগম ঘটে। সেখোনে তিনি সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী এর ওরশ উদযাপন করেন। এতে বহু মানুষ তার নিকট সুফি তরিকায় বায়াত বা শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বাইরে মাইজভা্ন্ডারি তরিকার প্রচার ও প্রসার তিনিই সর্বপ্রথম শুরু করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদানঃ
২য় বিশ্ব যুদ্ধে যোগদানের ফলে তিনি পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন নবী-ওলীগনের স্মৃতি বিজড়িত স্থান পরিদর্শন করার সুযোগ লাভ করেন। অতপর তিনি পুনরায় মাইজভান্ডার শরীফে প্রত্যাবর্তন করেন।
অব্যাহত সফর ও শিষ্যত্বঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে সফর অব্যাহত রাখেন। এ সকল সফরকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তার নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। সুফি ভাবধারায় তার অবদানে মাইজভান্ডার শরীফে নতুন ভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুফি ভক্ত-অনুরক্তগণের ব্যাপক সমাগম লক্ষ্য করা যায়।
তরিকা প্রচারঃ
তাঁর জীবনের সুদীর্ঘ ৫৫ বৎসর কাল তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও শহরে বন্দরে সর্বস্থানে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক তরিকায়ে মাইজভাণ্ডারীয়ার শিক্ষা ও আদর্শ মানুষের মাঝে প্রচার করেন। একই লক্ষ্যে তিনি ভারত, বার্মা, লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরিকা প্রচার করে যান। তাঁর নূরানী চেহারা, সুমধুর কণ্ঠস্বর এবং সকলের প্রতি অনাবিল ভালোবাসার কারণে সবাই তাঁর প্রতি আদব ভক্তিতে অনুরাগী হয়ে পড়তেন। বিভিন্ন মাহফিলে তাঁর ওয়াজ নছিহত শুনে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর হাতে “দস্ত বাইয়াত” গ্রহণ করে গাউছুল আ’যম মাইজভাণ্ডারীর আশেক ভক্ত হয়ে যায়।
সমাজ সেবাঃ
সমাজ সেবায় তাঁর অবদান অপরিসীম। সমাজ উন্নয়ন ও মানব কল্যানে ছিলেন তিনি নিবেদিত প্রাণ। নাজিরহাট-মাইজভাণ্ডার শরীফ সড়ক উন্নয়ন এবং এ সড়কে ব্রিজ নির্মাণ, মাইজভান্ডার শরীফে বিদ্যুৎ সংযোগ পোস্ট অফিস ও টেলিফোন একচেঞ্জের জন্য নিজস্ব জায়গা প্রদান, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এর জন্য নগদ অর্থ প্রদান, মাইজভান্ডার শরীফ শাহী জামে মসজিদ সংস্কারের জন্য প্রচুর অর্থ প্রদান, এলাকার গরীব দুঃখীদের আর্থিক সাহায্য প্রদানের জন্য এলাকার গণ মানুষের কাছে তিনি একজন মহৎ প্রাণের মানুষ হিসেবে সুবেদিত।
মৃত্যুঃ
আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত বিধান মোতাবেক ৮ই মাঘ ২১শে জানুয়ারি ২০০২ রবিবার রাত ৮:২৫ মিনিটে ইসলামের এই মহা তাপস মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে যাত্রা করেন (ইন্না… রাজেউন)। ১০ই মাঘ হযরত গাউছুল আ’যম শাহছুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ওরশ শরীফের দিন তাঁকে সমাহিত করা হয়।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#Zahora Saboni
Alhamdulillah. kintu photo ta Muzibul Bashar Maizbhandari Huzur er#মারুফ
এটা মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বাবাজান ছবি ভুল দিয়েসেন ভাই