আনিসুজ্জামান এর জীবনী-Biography Of Anisuzzaman
Anisuzzaman

আনিসুজ্জামান-Anisuzzaman

আনিসুজ্জামান একাধারে একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, সংবিধানের অনুবাদক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক। এককথায় তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। এই গুণীজন ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে এক উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুল থেকে। কৈশোরে পরিবারসমেত বাংলাদেশে চলে আসলে খুলনা শহরের এক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ঢাকার প্রিয়নাথ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আনিসুজ্জামান। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতক জীবনে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ড. মুনীর চৌধুরীর মতো কিংবদন্তি শিক্ষকদের, যাদের সান্নিধ্যে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন এবং ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি বেশ কিছু বৃত্তি লাভ করেন।

প্রারম্ভিক জীবন

আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এ টি এম মোয়াজ্জেম। তিনি ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন গৃহিণী হলেও লেখালেখির অভ্যাস ছিল। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। আনিসুজ্জামানরা ছিলেন পাঁচ ভাই-বোন। তিন বোনের ছোট আনিসুজ্জামান, তারপর আরেকটি ভাই। বড় বোনও নিয়মিত কবিতা লিখতেন।

শিক্ষাজীবন

আনিসুজ্জামান কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এখানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাংলাদেশে চলে আসেন এবং খুলনা জেলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এক বছর পর পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রিয়নাথ হাইস্কুলে (বর্তমান নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৫৭ সালে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সে সময় বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও শিক্ষক ছিলেন মুনীর চৌধুরী।

১৯৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলা একাডেমির গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারায় ১৭৫৭-১৯১৮ বিষয়ে পিএইচডি শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস: ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন

আনিসুজ্জামান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালের জুনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন এবং পরবর্তীকালে ভারত গমন করে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালীন গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪ - ৭৫ সালে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে গবেষণা করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন।

১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন।[৯] ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে আবার যুক্ত হন। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। এছাড়াও তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি শিল্পকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা যামিনী এবং বাংলা মাসিকপত্র কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

মৃত্যু

আনিসুজ্জামান ২০২০ সালের ১৪ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, প্রোস্টেট সমস্যা, রক্তে ইনফেকশনসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃতদেহ থেকে নমুনা নিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হলে জানা যায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন । আনিসুজ্জামানকে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

প্রকাশিত গ্রন্থাবলি

গবেষণা গ্রন্থ

মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪)

মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯)

মুনীর চৌধুরী (১৯৭৫)

স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬)

Social Aspects of Endogenous Intellectual Creativity (১৯৭৯)

Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Official Library and Records (১৯৮১)

আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩)

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৮৩)

পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪)

মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯৮৮)

Creativity, Reality and Identity (১৯৯৩)

Cultural Pluralism (১৯৯৩)

Identity, Religion and Recent History (পরিচয়, ধর্ম এবং সাম্প্রতিক ইতিহাস) (১৯৯৫)

আমার একাত্তর (১৯৯৭)

মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮)

আমার চোখে (১৯৯৯)

বিপুলা পৃথিবী

বাঙালি নারী

সাহিত্যে ও সমাজে (২০০০)

পূর্বগামী (২০০১)

কাল নিরবধি (২০০৩)

বিদেশি সাহিত্য অনুবাদ

অস্কার ওয়াইল্ডের An Ideal Husband এর বাংলা নাট্যরূপ 'আদর্শ স্বামী' (১৯৮২)

আলেক্সেই আরবুঝুভের An Old World Comedy -র বাংলা নাট্যরূপ 'পুরনো পালা' (১৯৮৮)

গ্রন্থ একক ও যৌথ সম্পাদনা

রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮)

বিদ্যাসাগর-রচনা সংগ্রহ (যৌথ, ১৯৬৮)

Culture and Thought (যৌথ, ১৯৮৩)

মুনীর চৌধুরী রচনাবলী ১-৪ খণ্ড (১৯৮২-১৯৮৬)

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড (যৌথ, ১৯৮৭)

অজিত গুহ স্মারকগ্রন্থ (১৯৯০)

স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন (১৯৯২)

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৩)

নজরুল রচনাবলী ১-৪ খণ্ড (যৌথ, ১৯৯৩)

SAARC : A People's Perspective (১৯৯৩)

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আত্মকথা (১৯৯৫)

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচনাবলী (১ ও ৩ খণ্ড, ১৯৯৪-১৯৯৫)

নারীর কথা (যৌথ, ১৯৯৪)

ফতোয়া (যৌথ, ১৯৯৭)

মধুদা (যৌথ, ১৯৯৭)

আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচনাবলী (১ম খণ্ড, যৌথ ২০০১)

ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফরাসি শব্দসংগ্রহ (যৌথ ২০০৩)

আইন-শব্দকোষ (যৌথ, ২০০৬)

পুরস্কার ও সম্মাননা

১৯৫৬: নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৬৫: দাউদ পুরস্কার

১৯৭০: প্রবন্ধ-গবেষণায় অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি থেকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার

১৯৮৫: শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক

আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬)

১৯৯৪: আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার

২০০৫: রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি. লিট. ডিগ্রি

এশিয়াটিক সোসাইটিতে (কলকাতা) ইন্দিরাগান্ধী স্মারক বক্তৃতা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরত্‍চন্দ্র স্মারক বক্তৃতা

নেতাজী ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সে নেতাজী স্মারক বক্তৃতা

অণুষ্টুপের উদ্যোগে সমর সেন স্মারক বক্তৃতা প্রদান।

২০১৪: শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ভারত সরকার প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ পদক

২০১৫: সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার

২০১৭: বিপুলা পৃথিবী বইয়ের জন্য আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার

২০১৮: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক

২০১৯: সার্ক কালচারাল সেন্টার থেকে সার্ক সাহিত্য পুরস্কার

২০১৯: শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক

টিউলিপ সিদ্দিকী এর পরিচিতি ও জীবনী - Introduction and biography of Tulip Siddiqui
মুফতি মুহসিনুল করিম এর জীবনী - Biography of Mufti Muhsinul Karim
মিজানুর রহমান আজহারী-Biography Of Mizanur Rahman Azhari
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) জীবনী,বাণী ও বইসমূহ
শেখ আবু নাসের এর পরিচয় ও জীবনী - Sheikh Abu Nasser's identity and biography
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী এর পরিচয় ও জীবনী - Ilyas Ahmed Chowdhury's identity and biography
আবিদ আনোয়ার এর জীবনী - Biography of Abid Anwar
অজয় দাশগুপ্ত এর জীবনী-Biography Of Ajay Dasgupta
আরজে তাজ এর বয়স, শিক্ষা ও জীবনী - biography of RJ Taj