আবদুল লতিফ এর জীবনী - Biography of Abdul Latif
আব্দুল লতিফ (১৯২৫-২০০৫) একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর কবিতা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো এর প্রথম সুরকার। পরবর্তীকালে তিনি নিজেও ভাষা আন্দোলনের উপর অসংখ্য গান রচনা করেছেন, তন্মধ্যে ওরা আমার মুখের কথা কাইড়া নিতে চায়, আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা ইত্যাদি সবিশেষ জনপ্রিয়।
জন্ম পরিচিতি ও ক্যারিয়ার
আবদুল লতিফ সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। তিনি বরিশালের রায়পাশা গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল। এ আকর্ষণ তাঁর গ্রামে তাঁকে গায়ক হিসেবে পরিচিত করে তোলে। গান গাওয়ার অপরাধে তাঁর ফুফু তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফুফুর কাছে গানগুলি ছিল ইসলাম বিরোধী। কিশোর আবদুল লতিফ এ ঘটনার আকস্মিকতায় বিচলিত না-হয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফুফুকে একটি গান শোনাতে চান এবং তিনি সে প্রস্তাবে সম্মত হন। আবদুল লতিফ আলাহ-রসুলের প্রশংসায় ভরা আববাসউদ্দীনের গাওয়া নজরুলের একটি ইসলামি গান গেয়ে শুনান। গান শুনে ফুফু মুগ্ধ হন এবং তাঁকে গান গাওয়ার অনুমতি দেন। এভাবেই পারিবারিক স্বীকৃতি নিয়ে আবদুল লতিফের শিল্পিজীবনের শুরু।
আবদুল লতিফ কলকাতা থেকে ১৯৪৮ সালে ঢাকা আসেন। এখানে বিখ্যাত গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ১৯৪৭ পরবর্তীকালে হিন্দু শিল্পী-গীতিকারদের দেশত্যাগের ফলে পূর্ববাংলায় বড় রকমের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এ সঙ্কট-মুক্তির লক্ষ্যে তিনি আবদুল লতিফকে গান লিখতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৪৯-৫০ সালে তিনি প্রথমে আধুনিক গান ও পরে লেখেন পল্লিগীতি।
আবদুল লতিফের মেজাজে গণসঙ্গীতের উপাদান ছিল। সেটা তাঁর প্রথম জীবনের কলকাতা-পর্বেই পরিলক্ষিত হয়। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘে কোরাসে তাঁরা যেসব গান গাইতেন, তা ছিল গণসঙ্গীত। এটা ছিল তাঁর রন্ধ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। বরিশালের গ্রামীণ জীবনধারার লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর মানসজগত ছিল গভীরভাবে প্রোথিত। কীর্তন, পাঁচালি, কথকতা, বেহুলার ভাসান, রয়ানি গান, কবিগান, গুনাই যাত্রা, জারি-সারি, পালকির গান প্রভৃতি সঙ্গীতের সুরকে তিনি নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন। এটাই পরবর্তীকালে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তাঁকে বিশিষ্টতা এনে দেয়।
পুরস্কার ও সম্মননা
১৯৯৭ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। এদেশের সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০২ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।
গ্রন্থ
তাঁর লিখিত গান সব সংগ্রহ করা যায়নি। তবে তাঁর তিনটি গানের বই পাওয়া গেছে। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমী প্রকাশ করে তাঁর ভাষার গান, দেশের গান। এতে আছে বাংলা ভাষা-সম্পর্কিত চবিবশটি। দেশের গান একান্নটি; পঁচানববইটি গণসঙ্গীত, দুটি জারি এবং আটটি মানবাধিকার সম্পর্কিত গান। তাঁর অন্য দুটি বইয়ের নাম দুয়ারে আইসাছে পালকি (মরমী গান) এবং দিলরবাব।
মৃত্যু
২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।