আবদুল গাফফার চেীধুরী- Biography Of Abdul Gaffar Chowdhury
Abdul Gaffar Chowdhury

আবদুল গাফফার চেীধুরী-Abdul Gaffar Chowdhury

জন্মঃ

আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ১২ই ডিসেম্বর বরিশাল জেলার এক জলবেষ্টিত গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মত্‍ জহুরা খাতুন। গাফফার চৌধুরীরা তিন ভাই, পাঁচ বোন। বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।

শিক্ষাজীবনঃ

আবদুল গাফফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদরাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন। ১৯৪৬ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর তাকে চলে আসতে হয় বরিশাল শহরে। ভর্তি হন আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে। সেসময়ে আর্থিক অনটনের শিকার হয়ে উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত 'কংগ্রেস হিতৈষী' পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। বরিশাল শহরে তিনি কিছুদিন একটি মার্কসবাদী দল আরএসপি'র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র জীবনেই তার সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। বরিশালের সন্তান শামসুদ্দীন আবুল কালামের লেখা তখন কলকাতার প্রধান পত্রিকাগুলোতে ছাপা হতো।

কর্মজীবন

১৯৪৭ সাল থেকে স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করলেও ১৯৫০ সালেই গাফফার চৌধুরীর কর্মজীবন পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়। ১৯৫০ সালে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তখন বেতন পেতেন ৭০ টাকা। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‍’দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। জুনিয়র ট্রান্সলেটর হিসেবে মাসিক বেতন পেতেন ১শ’ টাকা। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। এসময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ১৯৫৬ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা ‘মেঘনা’র সম্পাদক হন। ১৯৫৮ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ এর সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুক’-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু কিছুদিন পর সামরিক শাসন চালু হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি মাওলানা আকরম খাঁ’র ‘দৈনিক আজাদ’-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। এ সময়ে তিনি মাসিক ‘মোহাম্মদীর’ও স্বল্পকালীন সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক ‘জেহাদ’-এ বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং ”অনুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দু’বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে ‘দৈনিক আওয়াজ’ বের করেন। সেটা বছর দুয়েক চলেছিল। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি ‘দৈনিক আজাদ’-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে সহিংস বিবাদ শুরু হলে তিনি আবার যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে’। ১৯৬৯ সালের পয়লা জানুয়ারি ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়া মারা গেলে তিনি আগস্ট মাসে হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক ‘পূর্বদেশ’-এ যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপাত্র ‘সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে চিকিত্‍সার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাঁকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এরপর তাঁর প্রবাস জীবনের ইতিহাস শুরু হয়। বিলেত যাওয়ার পর প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন গ্রোসারি দোকানে কাজ করেন। এরপর ১৯৭৬ সালে তিনি ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’ পত্রিকায়ও তিনি কিছুদিন কাজ করেছেন। ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সাতজন অংশীদার নিয়ে ‘নতুন দিন’ পত্রিকা বের করেন। এরপর ১৯৯০ সালে ‘নতুন দেশ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘পূর্বদেশ’ বের করেন। প্রবাসে বসে এখনও গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন।

পারিবারিক জীবন

আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৫৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেলিমা আফরোজকে বিয়ে করেন। তাঁর এক ছেলে অনুপম আহমেদ রেজা চৌধুরী ও চার মেয়ে তনিমা, চিন্ময়ী, বিনীতা ও ইন্দিরা।

সম্মাননা, স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা

আবদুর গাফফার চৌধুরী ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমী পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ বাংলাদেশের প্রধান পুরস্কারের প্রায় সব ক’টিই পেয়েছেন। সাংবাদিকতায় যেমন তাঁর অবদান আছে তেমনি একজন সুসাহিত্যিক হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান হয়েছেন । দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছে, সম্মাননা দিয়েছে।

ক্ষেত্রভিত্তিক অবদান

পেশায় সাংবাদিক হলেও আবদুল গাফফার চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে আর সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতির সঙ্গে সবসময়ই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছেন। এছাড়া সাহিত্যকর্মী হিসেবে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কাজ করেছেন সাহিত্যের প্রায় সব শাখায়। তরুণ বয়সে প্রচুর কবিতা লিখেছেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ও তখনই লেখা। এছাড়া গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাস ও রাজনৈতিক প্রবন্ধও লিখেছেন। এগুলোর মধ্যে আছে ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’ প্রভৃতি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় তিরিশটি।

এছাড়াও তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’। ডকুড্রামা ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’ তুমুল আলোচনার ঝড় তুলেছে। প্রবাসে বাস করলেও আবদুল গাফফার চৌধুরী বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন।

গ্রন্থতালিকা

চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান (১৯৬০)

নাম না জানা ভোর (১৯৬২)

নীল যমুনা (১৯৬৪)

শেষ রজনীর চাঁদ (১৯৬৭)

কৃষ্ণপক্ষ (১৯৫৯)

সম্রাটের ছবি (১৯৫৯)

সুন্দর হে সুন্দর (১৯৬০)

ডানপিটে শওকত (১৯৫৩)

সম্পাদনা: বাংলাদেশ কথা কয় (১৯৭২)

পলাশী থেকে ধানমণ্ডি (২০০৭)- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্রের কাহিনী

আমরা বাংলাদেশী নাকি বাঙ্গালী

ইফতেখার রাফসান এর বয়স, শিক্ষা ও জীবনী - Iftekhar Rafsan's age, education and biography
আইরিন খান এর বয়স, শিক্ষা ও জীবনী-biography of Irene Khan
সাইফুল ইসলাম কামাল
শাবনূর এর জীবনী-Shabnur's biography
নিক্সন চৌধুরী এর জীবনী - Biography of Nixon Chowdhury
আনোয়ার পারভেজ এর জীবনী- Biography of Anwar Parvez
সাদাত হোসাইন এর জীবনী-Biography Of Sadat Hossain
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী এর জীবনী-Biography Of Professor Dr. Abdul Mannan Choudhury
ড. আকবর আলি খান এর জীবনী - Dr. Biography of Akbar Ali Khan
সানি লিওনের জীবন কাহিনী, প্রেমিক, স্বামী, পরিবার ও জীবনী - Sunny Leone Life Story, Boyfriend, Husband, Family and Biography