
আব্দুর রউফ চৌধুরীর জীবনী - Biography of Abdur Rauf Chowdhury
জন্ম ও শিক্ষা
আব্দুর রউফ চৌধুরী একজন বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক। তিনি একজন স্বল্পপ্রজ লেখক ছিলেন। আব্দুর রউফ চৌধুরী ১৯২৯ সালের ১লা মার্চ বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার মুকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম রূপ। তার বাবার নাম আজহর চৌধুরী এবং মায়ের নাম নাজমুন নেসা চৌধুরী। আব্দুর রউফ চৌধুরী মৌলভীবাজার কাশীনাথ স্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা এবং হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ-এ থেকে অনার্স পড়েন (১৯৪৭)।
কর্মজীবন
আব্দুর রউফ চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় ব্যবসায়ের মাধ্যমে। তারপর প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে। এরপর তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৬২ সালে। কর্মজীবনে ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত। ১৯৫১ সালে তিনি বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম শিরীন চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭১ সাল, গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা
যৌক্তিকতার বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরী লিখেছেন ‘যে কথা বলা যায় না’ ও ‘প্রফেট মোহাম্মদ’। ‘প্রফেট মোহাম্মদ’ অবশ্য ‘নতুন দিগন্ত’ উপন্যাসের ‘নথিপত্র’। যদিও তা স্বতন্ত্র একটি গ্রন্থ হতে পারত। গ্রন্থটি রস সঞ্চারী ও মনোজ্ঞ ভঙ্গিতে রচিত। এর বিষয়, বির্তক উপস্থাপনের কৌশল, ভাবের গভীরতা, প্রামাণ্য তথ্যের নির্দেশ ও যুক্তি খণ্ডন প্রণালী এবং বস্তনিষ্ঠতা বিস্ময়কর। এখানে উদ্দেশ্য ও বিষয়-বাহন তথা মাধ্যমরূপে ভাষারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শৈল্পিক উৎকর্ষ বোধ ও আশ্চর্য মনাকর্ষক।
সম্মাননা
বাংলা একাডেমী আজীবন সদস্য পদ লাভ করেন (১৯৯৩)। তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে হবিগঞ্জ গ্রন্থমেলা পুরস্কারে ভূষিত হন (১৯৯৫)।
মৃত্যু
সারা জীবন লড়াই করেছেন ডায়াবেটিস, নানাবিধ রোগে। ১৯৯৬ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি আব্দুর রউফ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
গ্রন্থতালিকা
পাঁচটি উপন্যাস, চারটি গল্পগ্রন্থ, চারটি প্রবন্ধ সংকলন, ১০টি গবেষণা ও ইতিহাস গ্রন্থ, ছয়টি ইসলাম বিষয়ে মৌল ও অনুবাদ রচনা, অন্যান পাঁচটি গ্রন্থ, দুটো কবিতাগ্রন্থ এই নিয়ে তার রচনাসম্ভার।
উপন্যাস
পরদেশে পরবাসী
নতুন দিগন্ত
সাম্পান ক্রুস
অনিকেতন
মা
ছোট গল্প সংকলন
গল্পসম্ভার (১০টি গল্প)
বিদেশী বৃষ্টি (১০টি গল্প)
গল্পভুবন (১০টি গল্প)
গল্পসল্প (১০টি গল্প)
প্রবন্ধ সংকলন
প্রবব্ধগুচ্ছ (১৬টি প্রবন্ধ)
নজরুল : নন্দনের অন্দরমহল
রবীন্দ্রনাথ : চির-নূতনের দিল ডাক
গবেষণা ও ইতিহাস
ফরাসি বিপ্লব
১৯৭১ (দুই খণ্ড)
একটি জাতিকে হত্যা
স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা
যুগে যুগে বাংলাদেশ
বিপ্লব ও বিপ্লবীদের কথা (পাঁচ খণ্ড)
মহান একুশে
কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলস
বাইবেলে নবী মোহাম্মদ সা.
আরব জাতির ইতিহাস
ধর্মের নির্যাস
মুক্তিসংগ্রাম সমগ্র
ইসলামি রাচনাসমগ্র
নানা উৎস থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদানের কথা খুঁটে খুঁটে সংগ্রহ করে ধর্ম ও দর্শনভিত্তিক একাধিক গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন―‘নাম মোছা যায় না’ (১৯৬৩), ‘বাইবেলে সত্য নবী মুহাম্মদ (সা.)’ (১৯৬৮), ‘ধর্মের নির্যাস’ (১৯৬৫), ‘ইসলাম ও সমাজতন্ত্র’ (১৯৬৯), ‘পথ’ (১৯৬৩-১৯৯১)। ‘পথ’ গ্রন্থ পাঠে বোঝা যায়, মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত ছিল, কিন্তু আজ তাদের করুণ অবস্থা। এক গভীর আক্ষেপ থেকেই শুরু হয় এই গ্রন্থটি। নিঃসন্দেহে বলা যায়, দুরূহ, উচ্চ ও গভীর ভাবনা এসব গ্রন্থের বিষয়বস্তু হলেও যুক্তি ও বস্তুনিষ্ঠ ভঙ্গিতে লেখক যা উপস্থাপন করেছেন তা যেকোনও গবেষকের কাছে আদর্শরূপে বিবেচিত হওয়ার মতো। যুক্তি, বিচারপ্রণালী, তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও দীপ্ত ভাবনার পরিচায়ক। ভাষা ও রচনানীতি অনেক উন্নত ও প্রাণবন্ত।
পুরস্কার
হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (মরণোত্তর) (২০০১)