সুশান্ত পাল
সুশান্ত পালের ডাক নাম বাপ্পি।
চট্টগ্রামের ছেলে সুশান্ত পাল। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। ক্লাসের ২ রোলটি বরাদ্দ ছিলো তার জন্য। তবে অষ্টম শ্রেণীতে উঠে প্রথম হয়ে যান। এর পেছনে রয়েছে এক মজার ঘটনা। ‘আমি কখনোই প্রথম হতে পারতাম না। তবে প্রথম যে হতো সে যখন অন্য স্কুলে চলে যায় তখনই আমি প্রথম হয়ে যাই,’ হেসে বলেন তিনি।
অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পান। ২০০০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপাল স্কুল থেকে ৮৬১ নম্বর পেয়ে। এইচএসসি পাশ করেন ২০০২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। সেখানেও ছিল ভাল ফলাফলের ধারা।
পড়াশোনা করতে খুব ভালবাসতেন বর্তমানের এই কাস্টমস কর্মকর্তা। বিশেষ করে সাহিত্যের প্রতি তার ছিল আজন্ম আকর্ষণ। তাই নিজেই গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত লাইব্রেরি যেখানে এখন ৬,০০০ বই রয়েছে। খুব ইচ্ছে ছিল ইংরেজি সাহিত্যে পড়ার। সেজন্য এইচএসসি পড়াকালেই পড়ে ফেলেন ইংরেজি সাহিত্যের নামি লেখকদের অনেক বই। তবে মা বাবা কখনোই চাইতেন না ছেলে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করুক। তাই মা-বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী পরীক্ষা দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। অনিচ্ছা আর অনাগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করেন কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে। তবে বিষয়টার প্রতি অনাগ্রহ থাকায় শুরু থেকেই ফলাফল খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে ৪ বছরেরর মাথায় যখন সব বন্ধুরা পাশ করে চলে যান, যোগ দেন কর্মক্ষেত্রে; তখনও তিনি চুয়েটের ছাত্র।
সময়টা অনেক চ্যালেজ্ঞিং ছিলো সুশান্ত পালের জন্য। ইচ্ছা ছিল সফল ব্যবসায়ী হবার। তাই মনে মনে ধারণা পোষণ করতেন, ব্যবসায়ী হতে হলে অনার্স কমপ্লিট করার দরকার নেই। সেসময় চার ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তবে বিষয়টাকে কেউ ভাল চোখে দেখতো না। শিক্ষাজীবনে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপমানিত হতে হতো তার মা-বাবা ও একমাত্র ভাইকেও। আর তিরস্কারের মুখোমুখি হতেন বাপ্পী।
সেসময় তিনি সবার কাছে এতটাই মূল্যহীন হয়ে পড়েন যে কাউকে ফোন করলেও কেউ কল রিসিভ করতো না। তাকে ডাকা হতো না কোন গেট টুগেদার বা পার্টিতে। চুয়েটে প্রতিনিয়তই অপমানিত হতেন বন্ধু ও শিক্ষকদের দ্বারা । সবার কাছে এই অগ্রহণযোগ্যতা মেনে নিতে কষ্ট হতো তার। তারপরও প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই করে চলেছিলেন। এক পর্যায়ে জীবটাই অসহনীয় হয়ে ওঠে। সিদ্ধান্ত নেন আত্মহত্যার। এরই মাঝে এক সন্ধ্যায় হাতে নিয়ে বসেন বিষের পেয়ালা। হঠাৎ করে চোখের সামনে ভেসে ওঠে মমতাময়ী মায়ের মুখটা। শত বিপদ ও প্রতিকূলতার মাঝেও যে মা তাকে সাহস যুগিয়ে গেছেন। সেদিন সেই মায়ের কারণেই জীবনে ফিরে আসেন সুশান্ত পাল।