নভেরা আহমেদ
নভেরা আহমেদ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম বাংলাদেশি আধুনিক ভাস্কর। তিনি শুধু ভাস্করই নন, একজন প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রশিল্পীও ছিলেন। নভেরা ১৯৩৯ সালে সুন্দরবনে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পিতা সৈয়দ আহমেদের কর্মস্থলে।
নভেরার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রাম। একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ১৯৫৪ সালে এবং সে বছরই তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর প্যারিসে অবস্থানকালে ১৯৮৪ সালে গ্রেগরি দ্য ব্রুনসের সঙ্গে নভেরার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে প্যারিসে নভেরার মৃত্যু পর্যন্ত এই দম্পতি একসঙ্গে থেকেছেন।
নভেরার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে পরিবার (১৯৫৮), জেব্রা ক্রসিং (১৯৬৮), লুনাটিক টোটেম (১৯৬৮), যুগল (১৯৬৯), ইকারুস (১৯৬৯) ইত্যাদি। একুশে
কর্মজীবন
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে নভেরা আহমেদ ফ্লোরেন্সে গমন করেন। সঙ্গে ছিলেন শিল্পী হামিদুর রহমান। প্রথমে তারা শিল্পী আমিনুল ইসলামের আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং পরে তিনজন একত্রে একটি স্টুডিওতে উঠে যান। নভেরা প্রায় দুই মাস শুধু ঘুরে দেখলেন। ডক্টর ফোগেল ভেন্তুরিনো ভেন্তুরির নামে এক ইতালীয় শিল্পীর কাছে নভেরার পরিচিতি দিয়ে করে একটি চিঠি দিয়ে দিয়েছিলেন। এই শিল্পীর সাহচর্যে নভেরা দোনাতেলো সহ প্রাচীন কয়েকজন শিল্পীর কাজের সঙ্গে পরিচিত হন এবং দু’মাস তার কাছে কাজ শেখেন। অতঃপর ফ্লোরেন্স থেকে ভেনিসে গেলেন নভেরা ও হামিদ এবং পরবর্কালে ভেনিস থেকে লন্ডন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দেই ক্রিসমাসের ছুটিতে নভেরা ও হামিদ প্যারিসে রঁদার মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলেন। ভাস্কর্যের ছাত্রী স্বভাবতই অত্যন্ত অভিভূত হয়েছিলেন রঁদার কাজ দেখে।
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ভাস্কর হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিং স্কাল্পচার এ্যান্ড গ্রাফিক আর্টস শিরোনমে এই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া তার ছ’টি ভাস্কর্যের মধ্যে চাইল্ড ফিলোসফার নামে একটি ভাস্কর্য বেস্ট স্কাল্পচারে পুরস্কৃত হয়।
পরে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তাকে নিয়ে নভেরা (১৯৯৫) শিরোনামে জীবনী উপন্যাস রচনা করেছেন হাসনাত আবদুল হাই। নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চিত্র নহন্যতে (১৯৯৯)। এক সময় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি হলের নামকরণ করা হয়েছিল "ভাস্কর নভেরা আহমেদ হল"। বর্তমানে বাংলা একাডেমী’র একটি হলের নাম নভেরা হল।
তার ৮০ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।