ওঁরাও উপজাতির পরিচিতি - Introduction to the oraon tribe
Kurukh people

ওঁরাও উপজাতির পরিচিতি - Introduction to the oraon tribe

ওরাওঁ, দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় উপজাতি। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য, ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে এঁদের বাস। এছাড়া, ভারতের বাইরে বাংলাদেশেও এঁরা বাস করেন । ওরাঁও রা যে ভাষায় কথা বলেন, তার নাম কুরুখ ভাষা। তাদেরকে কুরুখ জাতিও বলা হয়। এটি দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত।

জনসংখ্যা

১৯৯১ সালের  আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ওরাওঁদের সংখ্যা ছিল ১১২৯৬। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ওরাওঁ জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২লক্ষ ৪৫ হাজার।  কিন্তু বর্তমানে তাদের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অবস্থান

তারা বর্তমানে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমণিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বসবাস করছে। তবে ১৮৮১ সালের লোকগণনায় দেখা যায় যে, উত্তরবঙ্গ ছাড়াও তখন ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলায় কিছুসংখ্যক ওরাঁও আদিবাসীর বসতি ছিল।

ধর্ম

অনেক আদিবাসী জাতির মতো ওরাওঁ সমাজও সর্বপ্রাণবাদী প্রকৃতি উপাসক। তবে তাদের ধর্মবিশ্বাসে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সর্বশক্তিমান ‘ধরমেশ’স্বীকৃত। এই সর্বশক্তিমানের অবস্থান সূর্যে। তাই ধর্মীয় অনুষ্ঠান অধিকাংশই সূর্যকে ঘিরে উদযাপিত হয়। এছাড়া ওরাওঁ সমাজ নানা দেবতায় বিশ্বাসী। ঐসব দেবতার প্রতীকী অবস্থান গ্রাম, কৃষিসমপদ, অরণ্য, মহামারী ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে। এদের তুষ্টির জন্য রযে়ছে ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। কোনো কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে হিন্দুদের পূজার মিল পাওয়া যায়, যেমন হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘ভাদু’উৎসবের সঙ্গে ওরাওঁদের ‘করম’উৎসবের মিল অত্যন্ত স্পষ্ট। কদম শাখাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত এ উৎসবটি বৃক্ষপূজার নামান্তর। বর্তমানে ওরাওঁরা বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়ে আচার অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে।


গোত্র

ওরাওঁরা বিভিন্ন গোত্রের বিভক্ত। যেমন: লাকড়া, তিগগ্যা, তিরকী, বিন্ডো, বাড়ো বা বাড়োয়া, খাঁ খাঁ, করকেটা, টপ্য, এক্কা, খালকো, লিন্ডা, মিনজী, বাকলা, বাড়া, ক্ষেস, গান্না, বেক ও কিসপট্টা। একই গোত্রের সদস্যকে ওরাওঁরা একই বংশের সন্তান বলে মনে করে এবং তারা নিজেদের ভাই-বোন হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে তাদের একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

সমাজ ব্যবস্থা

যাবতীয় বিবাদ মেটানো ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গ্রাম সংগঠন আছে যাকে বলা হয় পাঞ্চেস। প্রতিটি গ্রামে একজন হেডম্যান বা মহাতোষ থাকে এবং একজন পুরোহিত বা নাইগাস থাকে। গ্রামের বয়স্ক সাত-আটজন ব্যক্তি দ্বারা পাঞ্চেস গঠিত হয়। পাঞ্চেস-এর কার্যকাল সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য হয়। কোনো অভিযোগকারী যদি পাঞ্চেস-এর বিচারে সন্তুষ্ট না হয়, তবে উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে আপিল করার ব্যবস্থা রয়েছে। পাঞ্চেস-এর উপরের সংগঠনের নাম পাঁড়হা।

ভাষা

ওরাওঁদের ভাষার নাম কুরুক। এ ভাষার কোনো বর্ণমালা নেই। তাদের সাহিত্য মৌখিক। কুরুক ভাষার দিক দিয়ে গায়ের উপরে নিচে এরা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। একটি কুরুক অপরটি শাদরী।

পোশাক ও অলংকার

ওরাওঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিল অতি সংক্ষিপ্ত। পুরুষদের নেংটি আর নারীদের ফতা নামের গায়ের উপরে নীচে দুখন্ড ক্ষুদ্র বস্ত্র। এখন তাদের পুরুষেরা লুঙ্গি ও ধুতি পরে। গায় শার্ট ও পাঞ্জাবি পরিধান করে। ওরাওঁ নারীরা ব্লাউজ ও সায়া সহযোগে শাড়ি পরিধান করে। শিক্ষিত ওরাওঁ ছেলেরা প্যান্ট শার্ট পরে এবং মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি পরিধান করে। ওরাওঁ নারীরা বিভিন্ন অলংকার পরিধান করে। তারা নাকে পরে নাকফুল (কারমা শিকড়ি), গায়ে পায়রা, পদনখে মুদদী, চুলের খোঁপায় রূপার কাঁটা (খংশ) প্রভৃতি অলংকার।

খাদ্য

ভাত ওরাওঁদের প্রিয় খাদ্য। বনের পশু-পাখি, ফল-মূল, নদী, খাল, বিল, পুকুরের নানা প্রকারের মাছ তাদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, শূকর, হাস-মুরগি, খরগোস, গুঁইসাপ, বেজি, নেউল, সজারু, কাঠবিড়ালি প্রভৃতির মাংস এবং কচ্ছপ, বাইম, কুচে, কাঁকড়া, ঝিনুক প্রভৃতি খেয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ডিম। ওরাওঁ সমাজে অতিথি আপ্যায়ন ও  উৎসব-অনুষ্ঠানে নেশাদ্রব্য পান করা একটি ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস।


ঘরবাড়ি

ওরাওঁদের গৃহের দেয়াল সাধারণত মাটির এবং ছাউনি শন ও খড়ের। তাদের অধিকাংশ ঘর আকৃতিতে খুবই ছোট। মাথা উঁচু করে খুব কম ঘরেই প্রবেশ করা যায়। ঘরগুলি অধিকাংশই চারচালা বিশিষ্ট। চারচালা ঘরের চারপাশে থাকে বারান্দা। ওরাওঁদের গৃহগুলি খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। গৃহের দেয়াল লেপা-মোছা এবং কোনো কোনো দেয়ালের নিম্নাংশ রঙিন করা হয়। অনেক দেয়ালে অংকন করা হয় গাছ, লতা-পাতা, ফুল, পাখি ইত্যাদি। অঙ্কিত এসব ছবিতে নানা রঙের সমারোহও পরিলক্ষিত হয়।


উৎসব

ওরাওঁ সমাজে নৃত্য ও সঙ্গীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে। এসব বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ঢোল, মাদকল,  বাঁশি, তাল, নাগরা, খঞ্জনী, ঘুটুর ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিককালে ওরাওঁরা  হারমোনিয়াম ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ওরাওঁ সমাজের পার্বণিক উৎসব মূলত চারটি- ১. সারহুল, ২. কারাম, ৩. পশু উৎসব, ৪. খারিয়ানি, ৫. ফাগুয়া, ৭. সোহরায়।


বিবাহ

ওরাওঁ সমাজের বিবাহ পদ্ধতির সবটাই লোকাচার ও দেশাচার নির্ভর। এ সমাজে বর্তমানে দুধরনের বিবাহের প্রচলন লক্ষ করা যায়। ১. চুক্তিবিবাহ, ২. প্রেমঘটিত বিবাহ। তবে অধিকাংশ বিবাহ সম্পন্ন হয় চুক্তিবদ্ধ পদ্ধতিতে। সাধারণত মেয়ের বয়স বারো আর ছেলের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তিক্রমের দৃষ্টান্ত বিরল নয়। বিধবা বিবাহের প্রচলন আছে। সুনির্দিষ্ট কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার বিধানও রয়েছে।

মৃত্যু সৎকার

ওরাওঁরা জন্মান্তরবাদী। এ কারণে তারা বিদেহী আত্মার কল্যাণার্থে কতিপয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। ওরাওঁ সমাজে মৃত ব্যক্তিকে পূর্বে দাহ করা হতো। তবে সমাহিত করার নিয়মও প্রচলিত ছিল। সম্প্রতি দাহ করার পরিবর্তে সমাহিত করার প্রচলন বাড়ছে। এর কারণ হয়তো জ্বালানি কাঠের উচ্চ মূল্য। ওরাওঁ সমাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো পিন্ডিদান প্রথা প্রচলিত রয়েছে। মৃত্যুর তিন, পাঁচ, সাত, এগারো বা তেরো দিনে পিন্ডিদান করা হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া

আসামি বানর-Assam macaque
বাংলাদেশের সংরক্ষিত মাছের তালিকা - List of protected fish in Bangladesh
বাংলাদেশের সেরা ১০ ব্যাংক-Top 10 Best Banks in Bangladesh
বাংলাদেশের সেরা অনলাইন শপিং সাইট
মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান - General knowledge about Metrorail
দেশি মিহি-পশমি উদ-Smooth-coated otter
ঝিনাইদহের আজকের খবর
রামকুত্তা-Dhole
সাপের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম - Name of snake bite vaccine
বাংলাদেশের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়