সাঁওতাল উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Santal tribe
সাঁওতাল হল পূর্ব ভারতের একটি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। সাঁওতালরা জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের বৃহত্তম উপজাতি এবং তাদের উপস্থিতি আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও রয়েছে। তারা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগের বৃহত্তম জাতিগত সংখ্যালঘু। নেপাল ও ভুটানে তাদের উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা রয়েছে।
নামকরণ ও বাসস্থান
সাঁওতাল উপজাতির নামকরণের সঠিক কোনাে কারণ জানা যায়নি। তবে অধিকাংশের মতে ভারতের সাঁওতাল পরগণার অধিকারী হিসেবে তারা সাঁওতাল নামে পরিচিত। বাংলাদেশের রাজশাহী ও দিনাজপুর জেলায় অধিকাংশ সাঁওতালরা বাস করে। এছাড়া রংপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহের কোনাে কোনাে অঞ্চলে এরা বাস করে।
সমাজ ব্যবস্থা
সাঁওতালরা প্রধানত পিতৃতান্ত্রিক নৃগোষ্ঠী। পিতাই পরিবারের প্রধান কর্তা। পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পিতার পরিচয়ে পরিচিত হয়। তবে, মহিলারাও অর্থনৈতিকভাবে পরিবারে অবদান রাখে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, স্ত্রীলোকেরা প্রায় সমানভাবে পরিবারের উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়।
সাঁওতাল উপজাতি ১১ টি গোত্রে বিভক্ত। গোত্রগুলো হল হাসদা, মুরমু, কিস্কু, হামব্রোম, মার্ডি, সওরেন, টুডু, বাসকি, বেসরা, চুরে, এবং পাউরিয়া। এই গোষ্ঠীগুলি টোটেম ভিত্তিক, (টোটেম হল প্রতীক, যা একটি দল, গোষ্ঠী, বা গোত্রের প্রতীক)। সাঁওতালরা বিশ্বাস করে যে প্রতিটি বংশের নিজস্ব টোটেম রয়েছে এবং একটি বংশ এবং এর টোটেমের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান।
রীতিনীতি
সাঁওতালদের জীবনচক্রে ৪- টি পৃথক ভাগ আছে । জন্ম , বয়ঃপ্রাপ্তি , বিয়ে ও মৃত্যু । গর্ভবতী মাকে ধাই দেখাশোনা করে । শিশু জন্মাবার পরে ধাই একটা ধারালো ছুরি দিয়ে শিশুর নাভিটা দেহ থেকে আলাদা করে ফেলে । শিশু জন্মাবার পর বাড়ি ও গ্রাম আচার অনুষ্ঠানের দিক দিয়ে অপবিত্র হয়ে পড়ে , গ্রামে কোনো উৎসব হয় না । সদ্যজাত শিশুর বাড়িতে গ্রামের কেউ অন্নজল গ্রহণ করে না , যতক্ষণ না পর্যন্ত শুদ্ধিকরণ উৎসব হচ্ছে । ছেলে হলে ৫ দিনের দিন , মেয়ে হলেও দিনের দিন এই উৎসব হয় । এই উৎসবে শিশুর নাম দেওয়া হয় । শিশুর নামকরণ একটা নিয়ম মেনে হয় । যেমন বড়ছেলের নামকরণ প্রপিতামহের নামে , সেজ ছেলের নাম হয় মায়ের সম্পর্ক ধরে ।
সাঁওতালদের দ্বিতীয় উৎসব হল দীক্ষান্তকরণ যা বিয়ের আগেও 4 থেকে 12 বছরের বয়সের মধ্যে সেরে ফেলতে হয় । এছাড়া কোনও সাঁওতাল পুরুষের বিয়ে হবে না বা তাকে মরার পর পোড়ানো হবে না যদি না এই উৎসবের মাধ্যমে সাঁওতাল পুরুষ সামাজিক স্বীকৃতি পায় ।
দৈহিক গঠন
সাঁওতালরা মধ্যমাকৃতি , কিন্তু পেশিবহুল ও খুব কর্মঠ । এদের রঙ মিশমিশে কালো , চুল ঢেউ খেলানো বা কোঁকড়ানো । ঠোঁট পুরু , লম্বা ও সরু মাথা , কপাল উঁচু নয় । নাক চওড়া । রিসলের মতে , দৈহিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে সাঁওতালরা হলেন দ্রাবিড় জাতির এক নিদর্শন । আবার বোড়িং সাঁওতালদের সঙ্গে নিগ্রোদের চেহারার মিল খুঁজে পেয়েছেন ।
বাসস্থান ও পোশাক
এদের ঘরগুলো ছোট এবং মাটির তৈরি। সাঁওতালরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসে। সাঁওতাল পুরুষরা আগে সাদা থান কাপড়ের ধুতি পরতেন। বর্তমানে পাঁঞ্চি, ধুতি, পায়ঞ্জামা, গামছা ব্যবহার করে। নারীরা ‘ফতা‘ নামের দুই খন্ডের কাপড় পরে থাকে। বর্তমানে 'আরা পাঁঞ্চি'ও ব্যবহার করতে দেখা যায়। পুরুষ সকলে হাতে উল্কির ছাপ দেয়। মেয়েরা রূপার তৈরি গহনা যেমন- বালা, ঝুমকা, আংটি, মল, হাঁসুলি ইত্যাদি ব্যবহার করে এবং খোঁপায় ফুল গুঁজতে ভালোবাসে। অভিভাবকদের পছন্দ অনুযায়ী সাঁওতালি সমাজে যে বিয়ে হয় তাকে সাঁওতালি ভাষায় ‘বাপলা‘ বলে। আগের দিনে মৃতদেহ দাহ করার নিয়ম ছিল। বর্তমানে অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সকল এলাকায় সাঁওতালরা মরদেহের কবর দেয়। তবে ভারতের সাঁওতালরা মরদেহ কবর ও চিতায় আগুনও দেয়।
খাদ্যাভ্যাস
ভাত সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য। মাছ, কাঁকড়া, শুকর, মোরগ, মুরগি, খরগোশের মাংস এদের খুবই প্রিয় খাবার। সাঁওতালদের খাবার তাদের জীবনের মতই সহজ সরল। তাঁরা খাবারে খুব বেশি মশলা এবং তেল ব্যবহার করে না। যার কারণেই তারা চর্বি পায় না। প্রকৃতিই তাদের জীবনধারনের প্রধান মাধ্যম। তারা প্রকৃতির সমস্ত কিছু কাজে লাগায়। বাসস্থান বা ঘর নির্মাণ থেকে শুরু করে দেহের পুষ্টি উৎস সবকিছুই তারা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে।
ধান চাষ সাঁওতালদের খাবারের প্রধান উৎস। সাঁওতালদের ভাত রান্না ও খাওয়ার পদ্ধতি আলাদা ও বৈচিত্রময়। তারা ভাত রান্নার পর ভাতের থেকে পানি ফেলে দেয় না। তারা তা পুরোপুরি রেখে দেয়। এই খাদ্যকে ‘দা মাডি‘ নামে ডাকা হয়। এর সাথে তারা সাধারণত সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করে।
পেশা
আদিকাল থেকেই কৃষিকে এরা প্রধান পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। নারী পুরুষ সবাই জমিতে কাজ করে। পুরুষেরা হাল চাষ এবং নারীরা বীজ বোনা ও ফসল তোলার কাজ করে। সাঁওতালরা কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি নিজেরা তৈরি করে। শিকার করার ব্যাপারে এদের উৎসাহ খুব বেশি। বাংলাদেশে বন জঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে তাদের এই পেশায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে অনেক সাঁওতাল নারী-পুরুষ কুলি, মজুর, মাটি কাটার শ্রমিক ও অন্যান্য কাজ করে।
অর্থনীতি
সাঁওতালরা প্রধানত কৃষিকাজ করেন । কারণ জমিকে ব্যবহার করতে এদের সমকক্ষ জাতি খুব কম পাওয়া যায় । অনেক দিন মজুর হিসাবেও কাজ করেন । নিজেদের আশেপাশের কৃষিজমিতে তারা কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ করা ছাড়াও দূরদূরান্তে ধান কাটাও বোনার সময় কাজ করতে যান । আবার কাজের শেষে ফিরে আসেন । এক সময়ে বনের লতাপাতা , ফলমূল যোগাড় করে আনা , শিকার করা ও মাছ ধরা তাদের অর্থনৈতিক জীবনে এক বিরাট অংশ জুড়ে থাকলেও এদের এক বড় অংশ চা বাগান , কয়লাখনি বা কারখানার অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে কাজ নিয়েছেন । আবার কিছু কিছু সাঁওতাল শিক্ষিত হয়ে অফিস , আদালত , শিক্ষাক্ষেত্রে চাকরি করছেন । কিছু সংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন ।
গ্রাম ও ঘরবাড়ি
সাঁওতালদের গ্রাম সাধারণত আয়তনে ছোটো ,১০-৩৫ টি পরিবার নিয়ে এক একটি গ্রাম । প্রধান রাস্তার দু'ধারে বাড়ীগুলি গড়ে ওঠে ( লাইনবন্দী বসতি ) । সাধারণত একটু উঁচু স্থানে যেখানে বর্ষার জল জমবে না , সেই সব জায়গায় গ্রামগুলি গড়ে ওঠে ।
সাঁওতালদের গ্রামের প্রবেশমুখে থাকে একটি পবিত্র থান , যার চলতি নাম হল জাহের খান ( Jahar than ) । এটি শালবনে অবস্থিত । এখানে প্রধান দেবদেবীর আবাস । গ্রামের প্রধান রাস্তার পাশেই থাকে গ্রাম প্রধানের বাড়ি । তার কাছেই থাকে মাঝি থান । এটি গ্রাম পত্তনকারী প্রথম প্রধানের আত্মার স্থান । বর্তমানে অনেক সাঁওতাল গ্রামে কূপ , টিউবওয়েল ছাড়াও কোনো কোনো গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ক্লাবঘর চোখে পড়ে ।
ঘরগুলি সাধারণত লম্বায় 5 মিটার চওড়ায় 5 মিটার ও ও মিটার উঁচু হয় । প্রধান ঘরের এক কোণে নীচু দেওয়াল দিয়ে ছোটো জায়গা রাখা হয় । একে ভেতরে ঘর বলে । এটি পরিবারের প্রধান দেবতার স্থান । ছাদের কাঠামো বাঁশ বা গাছের ডালপালা দিয়ে তৈরি । এই গুলিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে কাঠামো তৈরি করা হয় । ছাদের চাল ঢালু ও বেশ নীচে পর্যন্ত নেমে আসে । তাতে করে দাওয়ার ওপর চাল নেমে একটা বারান্দা মতো হয় ।
এখানে তারা ঢেঁকি , জাঁতি রাখেন । এখানে রাতে শোওয়া , আবার রান্নবান্নাও হয় । শীতকাল বা বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় এখানে শোওয়া হয় ।
প্রতি বাসগৃহের ভেতরে ভাগ থাকে । দরজা একটাই , তা সচরাচর নীচুই হয় । ঘরগুলিতে সাধারণত জানলা থাকে না । দেওয়ালের অনেক উঁচুতে ছোটো ছোটো আয়তাকার গর্ত থাকে । তাই ঘরগুলি ধোয়াটে । দেওয়ালগুলিতে সাদা , লাল , কালো মাটি দিয়ে ছবি আঁকা হয় । দাওয়া মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে তৈরি করা হয় । তাতে আবার কালো রঙ করা থাকে । বাড়িতে গরু , মোষ , শুয়োর রাখার ঘর থাকে । বাড়ির পেছনে শাকসবজি ফলানো হয় ।
ভাষা
সাঁওতালদের নিজস্ব লিপি রয়েছে, যার নাম অলচিকি লিপি। তবে, বাংলা লিপি, ওড়িষ্যা লিপি এবং রোমান লিপিতে এই ভাষার লিখন সর্বজনীন। সাঁওতালি ভাষায় মোট ৮টি স্বরধ্বনি এবং ৬টি অনুনাসিক স্বরধ্বনি এবং ২১টি ব্যঞ্জনধ্বনি অন্তর্ভুক্ত।
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত। সাঁওতালি ভাষা হচ্ছে তাদের নিজস্ব ভাষা। গ্রামাঞ্চলে তারা একে অপরের সাথে সাঁওতালি ভাষায় কথা বলে। কিন্তু যখন তারা ভিন্ন কারো সাথে কথা বলে, তখন তারা বাংলা ভাষায় বলে। সাঁওতাল বাচ্চারা সাধারণত জন্মের পর থেকে উভয় ভাষা শিখে থাকে।
বিয়ে
সাঁওতালদের মধ্যে কানে পণ প্রথা চালু আছে ( গনম টাকা ) । সামাজিক বা আর্থিক মর্যাদা যার যাই থাক না কেন , কনে প্রথার পরিমাণ একই রকম । বিয়ে সংক্রান্ত দীর্ঘ কথাবার্তার এক সন্ধিক্ষণে কনের পরিবারের লোকজন বরের বাড়িতে আসে । তখন কনেপক্ষকে ১১ টাকা ও ৫ টন ধান দিতে হয় । বিয়ের দিন বরকে আরও এক টাকা দিতে হয় । সন্তান লাভের আশীর্বাদ হিসাবে কনের ভাই বরের কাছ থেকে একটা গাভীও পায় । এই ধরনের ব্যবস্থার মূল কথা হল যে , তাঁরা শুধুমাত্র সন্তানের জননী হয় , রোজকার উৎপাদনমুখী কাজেও তাদের বিরাট ভূমিকা আছে । যারা কনে পণ দিতে পারে না , তাঁদের পক্ষে ঘরজামাই প্রথা হল এক বিকল্প ব্যবস্থা । এক্ষেত্রে বর - কনের বাবার বাড়িতে থাকে ও ৫ বছর ধরে শ্বশুরের জমিতে ঘাটে ।
সাঁওতালরা একবার মাত্র বিবাহের পক্ষপাতী যদি না তার স্ত্রী বন্ধ্যা হয় । খুড়তুতো , জ্যাঠাতুতো , বা মামাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিয়ে নিষেধ আছে ।
ধর্ম
সাঁওতালদের পালন করা রীতিনীতি বিভিন্নতা আছে। সাঁওতালি ভাষায় দেবতাকে বলে ‘বোংগা‘। এদের প্রধান দেবতা হচ্ছে চান্দোবোংগা(সূর্যদেব)। অন্ দেবতাকে বলে ‘মারাং বুরু‘। এর প্রভাব সাঁওতালদের জীবনে সবচেয়ে বেশি। এ দেবতাকে তারা জন্ম-মৃত্যুরও কারণ বলে মনে করে থাকে। সাঁওতালদের গৃহদেবতার নাম ‘আবগে বোংগা‘। সাঁওতালরা খুব আনন্দ প্রিয় মানুষ। বিভিন্ন পূজাপার্বণ ও সামাজিক উৎসবে এরা নাচ গানে মেতে ওঠে। প্রকৃতির সাথে এদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এরা বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। সাঁওতালদের বার্ষিক উৎসবের নাম সোহরাই। এই উৎসবে মেয়েরা দলবদ্ধভাবে নাচে। শীতের শেষে যখন বনে ফুল ফোটে তখন এরা বাহা উৎসব উদ্যাপন করে। হিন্দুদের দুর্গা পূজার সময় সাঁওতালরা একটি বিশেষ নাচের উৎসবে মেতে ওঠে,যা সাঁওতালী ভাষায় দাসাই নামে পরিচিত। এছাড়াও এরঃ, মাঃ মড়ে, সাকরাত প্রভৃতি উৎসব প্রকৃতির পালা বদলে সাথে সাথে পালন করে থাকে। ফাল্গুন এবং আশ্বিন মাসে, সাঁওতালিদের অসুর সম্প্রদায় দ্বারা "হুদুর দুর্গা" নামে মহিষাসুরের বার্ষিকভাবে দুইবার পূজা করা হয়।
সাঁওতালদের প্রধান উৎসব
সাঁওতালদের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম সোহরাই। উৎসবটি মূলত ধনসম্পত্তি ও গরু-বাছুর বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয়। প্রতি বছর পৌষ মাসে সাঁওতাল গ্রামগুলোতে সোহরাই উৎসবের আয়োজন চলে ।
সোহরাই উৎসব উপলক্ষে বিবাহিতা নারীরা বাবার বাড়ি আসার সুযোগ পায়। ফলে সাঁওতাল নারীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে উৎসবটির জন্য। তবে, সোহরাই উৎসবের কোন নির্ধারিত দিন বা তারিখ নেই। পৌষ মাসে, সাঁওতাল গোত্র প্রধান এর উপস্থিতিতে উৎসবের একটি দিন নির্ধারণ করে। সেই নির্ধারিত দিন থেকে পরবর্তী সাতদিন ব্যাপী চলে এই সোহরাই উৎসব।
শিল্পকলা
শিল্পকলার প্রতি সাঁওতালিদের আগ্রহ রয়েছে। এরা ঢোল, দোতারা, বাঁশি, মেগো প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে ও বাজায়। ঘরবাড়ির দেয়ালে ছবি আঁকে। হাঁড়ি কলসির গায়ে চুনকালি দিয়ে ছবি আঁকে।
মৃত্যু সৎকার
গর্ভবতী মহিলা বা শিশু ছাড়া বাকি সবাইকে দাহ করা হয় নদী বা জলাশয়ের ধারে । বড় ছেলে মুখাগ্নি করে । এদের সৎকার হিন্দু সমাজের মতো । মৃত্যুর ৬ দিন পরে তেল নাহান অনুষ্ঠান হয় । ওই দিন তারা তেল দেবতার উদ্দেশ্য উৎসর্গ করে ।
সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস
৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে, ৩০শে জুন ১৮৫৫, অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক এবং শোষক জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা গণআন্দোলন শুরু করে। নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় সাঁওতাল আদিবাসিরা ভারতবর্ষে জ্বালিয়ে দেয় প্রতিবাদের দাবানল। আদিবাসিদের অধিকার ও মযার্দা প্রতিষ্ঠায় করা সে রক্তঝরা সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসটি বিশেষ র্যালি এবং সাঁওতাল কৃষ্টিতে নৃত্যের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিপালিত হয়ে থাকে।
সাঁওতালি ভাষা দিবস
২২ ডিসেম্বর, ২০০৩ সাল ভারতের সংবিধানের ৯২তম সংশোধনীর দ্বারা সাঁওতালি ভাষাসহ চারটি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে, ভারতের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। এই চারটি ভাষা হল – বোড়ো, ডোগরি, মৈথিলি ও সাঁওতালি। সারা পৃথিবীর সাঁওতালি ভাষী মানুষের জন্য এটা আনন্দের ও স্মরণীয় দিন।
তখন থেকেই ভারতের সাঁওতালরা ২২ ডিসেম্বরকে সাঁওতালি ভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ ও নেপালে বহু সংখ্যক সাঁওতাল বসবাস করে। তারাও সাঁওতালি ভাষার চর্চা করে যাচ্ছে।