মণিপুরী উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Manipuri tribe
People of Manipur

মণিপুরী উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Manipuri tribe

মণিপুরী জাতি ভারত ও বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নাম। এদের আদি নিবাস ভারতের মণিপুর রাজ্যে। মণিপুরীদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। ভারতের মণিপুর, আসাম, ও ত্রিপুরা রাজ্যের ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোক বাস করে।

জীবন-যাপন

আত্মনির্ভরশীল মণিপুরীদের মধ্যে পেশাভিত্তিক কোনো ভিক্ষুক নেই। মণিপুরী মহিলারা পুরুষের পাশাপাশি কৃষিকাজসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। পুরুষদের সঙ্গে হালচাষ ছাড়া কৃষিকাজে নারীরা সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। যেমন: ধান রোপণ, ধান কাটা, সবজির বাগান করাসহ সব কাজে পারদর্শী। মণিপুরীরা স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য একমাত্র লবণ ও কেরোসিন ছাড়া নিজেদের উৎপদিত সামগ্রী ব্যবহার করে জীবন যাপন করতে পারে।

পোশাক পরিচ্ছদ

পুরুষদের পোশাক ধুতি ও শার্ট বা পাঞ্জাবী। বাড়িতে কাজকর্মের সময়ে তাঁতের বুনা বড় মাপের লুঙ্গি সদৃশ গামছা যা অত্যন্ত টেকসই ও বুনন কারুকার্যেপূর্ণ দীর্ঘমাপের, সেগুলো পরিধান করেন। মেয়েদের পোশাক লাহিং বা ফানেক ও ওড়না বা ইনাফি। ফানেক বা লাহিঙের বুনন ডিজাইন অত্যন্ত চমৎকার। বিভিন্ন রং এর ডিজাইনে তাঁত বুনা ফানেক বা লাহিঙ টেকসই ও বৈচিত্রপূর্ণ। শহরাঞ্চলে বা বাহিরে যাতায়াতের সময় মেয়েরা শাড়ি, ব্লাউজ ও উড়না পরিধান করে থাকে। বস্ত্রশিল্পে মণিপুরী তাঁতে বুনা কাপড়ের চাহিদা ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।

অলংকার

মণিপুরী রমনীদের অলংকার পরিধানের রীতি প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। বিভিন্ন প্রকার অলংকারাদির মধ্যে সেনারিক, নেকলেস, থাবরেত লিকচিক, কানের দুল, হাতের স্বর্ণবালা বা চুড়ি। মণিপুরী রমনীরা সৌন্দর্য্যে সচেতন। খোঁপায় বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি ফুল গুজে দিয়ে রূপসজ্জা করে। এমন কোন পরিবার দেখা যায় না যাদের বাড়ির আঙ্গিনায় দু'একটি ফুলের গাছ পাওয়া না যায়। দৈনন্দিন পূজা অর্চনাতে ও ফুলের প্রয়োজন হয়। আর সুগদ্ধি ফুলের মালা গলায় পড়ে, খোঁপায় গুজে দেহমনকে পবিত্র করে রাখে। 

বিয়ে অনুষ্ঠান

মণিপুরীদের বিয়ে অনুষ্ঠান অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সাধারণত কার্তিক মাসে রাসলীলা অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মণিপুরীদের আগমণ ঘটে রাসোৎসবে। তখন ছেলে-মেয়ে একে অপরকে পছন্দ করে নেয়। এতে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন বাধা আসে না। মা-বাবারা ছেলে-মেয়ের পছন্দমত আনুষ্ঠানিকভাবে বর ও কন্যাকে দেখে হিন্দু ধর্মাম্বলীদের রীতি অনুসারে দিন তারিখ ঠিক করে বিয়ের পিঁড়েতে বসান। বিয়ের আগের দিন গায়ে হলুদ (অধিবাস), পরের দিন বিয়ে। বরযাত্রীরা বর নিয়ে আসেন কন্যার বাড়িতে। কন্যা তখন বিয়ের পোশাক হিসেবে ৪ টি পোশাক পরিধান করে। একটি কোমর থেকে নিচে, একটি কোমর থেকে উপরে, একটি ওড়না এবং বিয়ের রকমারী ওড়না। মণিপুরী মেয়েদের গায়ের রং ফর্সা থাকায় কনে বেশে তাদেরকে অপরুপ দেখায়। বররা সাধারণ ধূতি ও পাঞ্জাবী পড়ে থাকে। বিয়ের খাবার দেয়া হয় দই, চিড়া, মুড়ি, গুড় এবং অনেকই ভাত খেয়ে থাকেন। বর রাত্রে এসে আবার বিয়ে শেষে রাত্রেই নিজ বাড়িতে ফিরে যান কনেসহ। স্বামীর বাড়িতেই বাসরঘর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

সংস্কৃতি

মণিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী। মণিপুরী সংস্কৃতির উজ্জ্বলতম দিক হলো মণিপুরী নৃত্য যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

মণিপুরীদের মধ্যে ঋতুভিত্তিক আচার অনুষ্ঠান বেশি। বছরের শুরুতে হয় মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের বিষু এবং মৈতৈদের চৈরাউবা উৎসব। আষাঢ় মাসে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা ও কাঙ উৎসবের সময় প্রতিরাত্রে মণিপুরী উপাসনালয় ও মন্ডপগুলোতে বৈষ্ণব কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ নাচ ও গানের তালে পরিবেশন করা হয়।

কার্ত্তিক মাসে মাসব্যাপী চলে ধর্মীয় নানান গ্রন্থের পঠন-শ্রবন। এরপর আসে মণিপুরীদের বৃহত্ম উৎসব রাসপূর্ণিমা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরন বা রাসপুর্ণিমা নামের মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রায় দেড়শত বছর ধরে (আনুমানিক ১৮৪৩ খ্রী: থেকে) পালিত হয়ে আসছে। কার্ত্তিকের পুর্ণিমা তিথিতে দুরদুরান্তের ল ল ভক্ত-দর্শক মৌলবাজার জেলার সিলেটের কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামন্ডবের এই বিশাল ও বর্ণাঢ্য উৎসবের আকর্ষনে ছুটে আসেন।

বসন্তে দোলপূর্ণিমায় মণিপুরীরা আবির উৎসবে মেতে উঠে। এসময় পালাকীর্ত্তনের জনপ্রিয় ধারা "হোলি" পরিবেশনের মাধ্যমে মণিপুরী তরুণ তরুণীরা ঘরে ঘরে ভিক্ষা সংগ্রহ করে। এছাড়া খরার সময় বৃষ্টি কামনা করে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বৃষ্টি ডাকার গান পরিবেশন করে থাকে।

ধর্ম

মণিপুরীদের নিজস্ব লৌকিক ধর্মের নাম "আপোকপা" যা অত্যন্ত প্রাচীন, আধ্যাত্মিকতায় গভীর ও দার্শনিকভাবে উচ্চস্তরের। প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা নিজের প্রতিকৃতি থেকে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি মানুষ সৃষ্টিকর্তার একেকটি ছায়া। এখনো মণিপুরী মৈতৈদের অনেকে এই ধর্মের অনুসারী। মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের একাংশের মধ্যের "আপোকপা" পূজার প্রচলন রয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরীরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়। ধর্মের বিচারে বেশির ভাগ মণিপুরী বর্তমান চৈতন্য ধারার সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই ধর্ম গ্রহণের আগে মণিপুরীরা যে অপ্কপা ধর্মচর্চা করত, তার প্রভাব এখনো কিছু কিছু অনুষ্ঠানে পরিলক্ষিত হয়। অনেক মণিপুরী আছেন, যাঁরা আগের কিছু কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে ইসলামধর্ম পালন করেন। তাঁদেরকে মেইতেই পানগন বা মণিপুরী মুসলমান বলা হয়।

মণিপুরীদের ভাষা

মণিপুরী জনগোষ্ঠীর প্রধান দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাষার পার্থক্য রয়েছে, যেমন -

১.মৈতৈ ২.বিষ্ণুপ্রিয়া

মণিপুরী হস্তশিল্প

হাতে বোনা কাপড় তৈরীতে মণিপুরীরা খুবই দক্ষ। নিজেদের কাপড় তারা নিজেরাই তৈরি করে থাকে। মণিপুরী প্রতিটি গৃহে কমপক্ষে একটি করে তাঁত থাকে। মণিপুরী মেয়েরা নিজেদের পরনের কাপড়, বিছানার চাদর, ঝুলন ব্যাগ, শাড়ি, টেবিল ক্লথ, ওড়না, গামছাসহ বিভিন্ন ডিজাইনের বস্ত্রসম্ভার তৈরি করে নিজেরা ব্যবহার করেন এবং বাজারজাতও করে থাকেন।

বাংলাদেশের সেরা ১০ ব্যাংক-Top 10 Best Banks in Bangladesh
সাপের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম - Name of snake bite vaccine
এশিয় গন্ধগোকুল-Asian palm civet
পাতি ভোঁদড়-Eurasian otter
কুকি উপজাতির পরিচিতি - Introduction to the Kuki tribe
মুন্ডা উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Munda Tribe
কালোগ্রীব খরগোশ-Indian hare
মেঠো ইঁদুর-Bengal Bandicot Rat
বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্র
খাটোলেজি বানর-stump-tailed macaque