কালাচ সাপের কামড় চেনার উপায় - How to recognize Kalach snake bite
How to recognize Kalach snake bite

কালাচ সাপের কামড় চেনার উপায় - How to recognize Kalach snake bite

কালাচ সাপ আসলে নিঃশব্দ ঘাতক। কামড়ালেও বোঝা যাবে না। লোকজন অবিশ্বাসী হয়ে পড়তে পারেন এমন সাপের কথা শুনলে। কারণ সাপের মধ্যে যে বিষধর এলিট সাপ রয়েছে তাদের ব্র্যাকেটে নেই এই সাপের নাম। পাশাপাশি, এই সাপ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। কালাচের ভাবমূর্তি আমজনতার কাছে অতটা ভীতিপ্রদ নয়। তার কারণ, এদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এমনই যেটা অন্য বিষধর সাপেদের সঙ্গে মেলে না। প্রথম কথা, এই সাপ ফণাহীন। দ্বিতীয়ত, এই সাপ কামড়ালে ব্যথা হয় না। জায়গাটা ফোলেও না। ফলে যাকে কামড়াল, সে বুঝতেও পারে না। অথচ আস্তে আস্তে নার্ভবিষের লক্ষণগুলি দেখা যায়। শুরু হয় পেটে ব্যথা, গলায় ব্যথা কিংবা সারা শরীর জুড়ে অস্বস্তি। যেন জ্বর আসছে। চিকিৎসা সময়মতো শুরু না হলে অবধারিত মৃত্যু।

কালাচ’ নামটাও অনেক জায়গায় অন্য নামে পরিচিত। আসলে সারা বাংলা জুড়ে কালাচের নানা নাম। কালোর ওপরে চিত্র আঁকা, তাই এর নাম কালচিতি। থেকেই কালাচ। কিন্তু এই নাম ছাড়াও আরও নাম আছে। শিয়রচাঁদা, নিয়রচাঁদা, ডোমনাচিতি, শাঁখাচিতি।

কালাচ সাপ এর সাধারণ পরিচিতি

কালাচ সাপ এর আরেক নাম কালচিতি বা ডোমনা চিতি | পাতি কাল কেউটে, কালাচ বা দেশি কালাচ বৈজ্ঞানিক নাম: Bungarus caeruleus.ইংরেজিতে বলে Common Krait. অন্যতম সুন্দর সাপেদের একটি এটি | সাপ শব্দটি শুনলে কে না ভয় পায়। শব্দটা শোনার সাথে সাথেই মনে হয় এই বুঝি সামনেই একটা সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে হিসহিস করছে। সব সাপ কিন্তু আবার ফণা তুলতে পারে না। এমনই এক সাপ হল কালাচ সাপ বা কালচিতি সাপ।

কালাচ সাপ কিভাবে চিনবেন?

১.কালাচ সাপের শরীরের রঙ চকচকে কালো।

২.ঘাড়ের কিছুটা পর থেকে সাদা রঙের জোড়ায় জোড়ায় আংটির মত লেজ পর্যন্ত দাগ থাকে ।

৩.পেটের রং সাদা বা হলুদ।

৪.উজ্জ্বল গোলাপি বর্ণের জিহ্বা লক্ষ্য করা যায় ।

৫.কালাচ সাপের মাথাটা হাতের আঙ্গুলের মত আকৃতির হয়।

৬.মাথার পর থেকে ৩/৪ টা সাদা চিহ্ন থাকে এবং তারপর পুরো শরীরে দুটো করে সাদা রঙের দাগ থাকে।

৭.কালাচের ডোরা ব্রেসলেটের মত গোলাকার দাগ মাথার পরে পেটের দিকে এসে ডোরা ডাবল হয়ে যায়।

কালাচ সাপ এর স্বভাব

১.কালাচ সাপ একটি নিশাচর স্বভাবের সাপ তাই এই সাপ মাঝরাতে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়।

২.এই সাপ খাড়া ভাবে উপরে উঠতে পারে তাই এরা দেয়াল, খাট বা চৌকির পায়া বেয়ে বিছানার উপরে উঠে মানুষের পাশে অবস্থান করতে পারে।

৩.অনেকের মতে, কালাচ সাপ মানুষের শরীরের ঘামের গন্ধ নিতে বিছানায় উঠে,তাই একে ঘামচাটা সাপ ও বলা হয়।যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে সাপের ঘ্রাণ শক্তি আছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৪.ঘুমন্ত মানুষ এর পাশে যখন এরা আশ্রয় নেয় তখন ঘুমের ঘোরে মানুষ এপাশ- ওপাশ করার সময় ই এরা মানুষকে দংশন করে।

কামড় এবং বিষের ধরন

* কালাচ সাপ কামড় দিলে বিষ প্রয়োগ করবেই এবং সব চেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে এরা শত ভাগ বিষ প্রয়োগ করে। 

* এই সাপের একটি কামড়ে ২০ মি.লি বিষ প্রয়োগ করে। 

* কালাচ সাপের বিষ মূলত নিউরোটক্সিক।

* অন্যান্য বিষধর সাপ কামড় দিলে তার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ থাকে ড্রাইবাইট তবে কালাচ সাপের কামড়ে ড্রাইবাইট নেই বললেও ভুল হবেনা। ড্রাইবাইট হচ্ছে কামড় দেবে ঠিকই কিন্তু বিষ প্রয়োগ করবেনা।

* কালাচ সাপে কামড় দিলে মানুষ তা বুঝতেই পারেনা কারণ সাপটির দাঁত মশার হুলের মত তাই কামড়ে বেশিরভাগ সময় দাগ পড়েনা কোন রকম জ্বালা যন্ত্রণা হয় না, আক্রান্ত জায়গা ফুলেনা।

* ৯০% রোগী বুঝতেই পারেনা তাকে সাপে কামড়েছে।

কালাচ সাপ দংশনের উপসর্গ

১.কালাচ সাপ নিশাচর হওয়ায় সাধারণত রাতেই কামড়ায় এবং কামড়ানোর ঘন্টখানেক পর তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা হবে।

২.সাপের বিষে প্যারালাইসিস হতে শুরু করে।

৩.রোগীর চোখের পাতা পড়ে আসে, বমি বমি ভাব হয়, জ্বর হলে যেমন অস্বস্তি হয় তেমনটা অনুভূত হয়।

৪.পাশাপাশি শরীরের গাঁটে গাঁটে ব্যাথা হয় এবং কথাও জড়িয়ে যায়।

৫.সময়ের সাথে সাথে রক্ত জমাট বাঁধা শুরু করে।

৬.এর বিষের নিউরোটক্সিন উপাদানটি মানুষের নার্ভ সিস্টেমকে এটাক করবে এবং সর্বশেষ রেসপিরেটরি ফেইলিউর ঘটাবে অর্থাৎ সাফোকেশন বা দমবন্ধ হয়ে নির্ঘাত মৃত্যু ঘটাবে।

৭.তাই এ অবস্থায় রোগীকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ বা জেলা সদরে নিতে হবে দ্রুত।

কালাচ সাপ কামড়ালে করনীয়

১.কালাচ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপগুলার একটি তাই এই সাপের কামড়ের লক্ষণ বোঝামাত্রই যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল যেমন জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে হবে।

২.সাপে কাটা ব্যক্তিকে স্বান্তনা দিতে হবে এবং তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে কারণ অনেকেই সাপে কাটার পর ভয়ে স্ট্রোক করে মারা যায়। 

৩.রোগীকে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। সজাগ রাখতে হবে।

৪.আক্রান্ত স্হান নাড়াচাড়া করা যাবে না। নাড়াচাড়া করলে বিষ খুব দ্রুত দেহে ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে রোগী অনেক কম সময় পাবে।

৫.হাসপাতালে নিয়ে অ্যান্টিভেনম দিলেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।

৬.ক্ষতস্থানে চন্দ্রবোড়া বা গোখরো এর কামড়ের মতো জ্বালা যন্ত্রনা করেনা বলে অনেকেই চিকিৎসা করান না।

৭.উপরে উল্লেখ্য উপসর্গ গুলি অনুভব করলে বা সাপে কামড়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হলে সাথে সাথে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হসপিটালে যেতে হবে। যথা সময়ে চিকিৎসা হলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় ১০০ শতাংশ ।

৮.সাপে কাটা ব্যক্তিকে কখনোই ওঝার কাছে নেওয়া যাবে না। ওঝারা কখনোই সাপের বিষ নামাতে পারে না।

৯.মুখ দিয়ে চুষে বা ক্ষতস্হান থেকে রক্ত বের করার মাধ্যমে সাপের বিষ বের করা সম্ভব না।

১০.রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে বা নিজে নিজে বিষ বের করার চেষ্টা করা মানে নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে আনা।

কালাচ বা ডোমনাচিতির হাত থেকে বাঁচার উপায়

এই সাপ এড়ানোর জন্য আলাদা কোনো রকম পন্থা নেই। অন্যান্য সাপ এড়ানোর জন্য আমরা যে সকল পন্থা ব্যবহার করে থাকি সেগুলিকে অবলম্বন করতে হবে। যেমন –

১. বাড়ির আনাচে কানাচে ঝোঁপঝাড় সব সময় পরিষ্কার রাখুন৷

২. কার্বলিক অ্যাসিড ছড়িয়ে রাখতে পারেন সাপের ঘরে ঢুকতে বাধা দিতে।

৩. কোথাও যেন নোংরা আবর্জনা না জমে থাকে খেয়াল রাখবেন।

৪. রাতে মশারী টাঙিয়ে ঘুমান। আর অবশ্যই মশারি বিছানায় গুঁজে দিন।

বাংলাদেশের এনজিওর তালিকা - List of NGOs in Bangladesh
বাংলাদেশের সাপের তালিকা - List of snakes of Bangladesh
মাঝারি পাতা-নাক চামচিকা-Intermediate Leaf-nosed Bat
কন্দ উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Kanda tribe
বরিশালে সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না
বাদামি কাঠবিড়ালি বা ইরাবতী কাঠবিড়ালি -Irrawaddy squirrel
সিটি করপোরেশন নির্বাচন বরিশালে চলছে ৩০ কেন্দ্রের অভিযোগ তদন্ত
চিত্রা ডলফিন-Pantropical spotted dolphin
চাক উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Chak tribe
ইরাবতী ডলফিন-Irrawaddy Dolphin