উপজাতিদের খাবারের তালিকা - Food list of tribes
Food tribes

উপজাতিদের খাবারের তালিকা

পাহাড়ের গায়ে বাস করে নানা উপজাতি। সেটি তাদের  আলাদাই একটি দেশ। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস। রয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। অবাক করে তাদের জীবনযাত্রা। কিভাবে এই উঁচু-নিচু, আঁকা–বাঁকা পাহাড়ি রাস্তাগুলো হেঁটে হেঁটে পাড়ি দেয় মাইলের পর মাইল। আর আমরা শহরের সোজা রাস্তায় একটু হাটলেই ক্লান্ত হয়ে যাই। তখন প্রশ্ন জাগে কি খায় তারা? এত শক্তি আসে কোথা থেকে? পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার আগে আসুন জেনে নেই ভিন্ন স্বাদের খাবার উপজাতিদের ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে।

মারমা

আদিবাসী মারমা সম্প্রদায়ে আঠালো ভাতের সঙ্গে ‘নাপ্পি’ (শুটকি) খাওয়া হয়। কখনো কখনো তাদের আহারে ভাতের সঙ্গে ‘লাসৌ’ও (বিভিন্ন মিশ্রণের ভর্তা) থাকে। এছাড়া তারা বিন্নি চালের সঙ্গে নারকেল ও চিনি যোগ করে স্যুপের মতো আঠালো করে এক প্রকার খাদ্য খেতেও পছন্দ করে। ‘সাংগ্রাই’ উত্সবে মারমারা বিভিন্নি সবজি ও শুটকি দিয়ে ‘হাংরো’ তৈরি করে, যা তাদের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। মারমাদের অন্যতম পছন্দের আরেকটি খাবার হচ্ছে কচি বাঁশ সিদ্ধ, যা সবজি হিসেবে ব্যবহূত হয়। স্থানীয়ভাবে এটি বাঁশ কোড়ল নামে পরিচিত। মারমারা বিকেলের নাস্তায় ‘মুন্ডি’র আয়োজন করে। মুন্ডি দেখতে অনেকটা নুডলসের মতো, যার ওপরে শুটকির গুঁড়া ও গরম পানি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

চাকমা

জনসংখ্যায় এদেশের সর্ববৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠি চাকমা। তেল ও মশলার একেবারে অল্প পরিমাণে ব্যবহার তাদের রান্নার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে চাকমারা সিদ্ধ ঝাল তরকারি বেশি পছন্দ করে। এ গোষ্ঠির প্রধান খাদ্য ভাত। শাক বা সবজি সিদ্ধ মরিচ ভর্তা দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া হয়। চাকমাদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম ‘সিদল’। এটি শুটকি জাতীয় খাবার, যা অনেক মাছের শুটকি একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো হয়। তারা তাদের বেশিরভাগ তরকারি সিদল দিয়ে রান্না করে। সিদল দিয়ে বানানো আরেকটি বহুল প্রচলিত খাবার হচ্ছে ‘হোরবো’। সিদল দিয়ে মরিচ ভর্তা করে তার সঙ্গে বিভিন্ন টক জাতীয় ফল যেমন-আম, চালতা, আমড়া ইত্যাদি মিশিয়ে এই হোরবো বানানো হয়। চাকমারা অনেক আগে বাঁশের ভেতরে মাছ মাংস রান্না করতো, যা ‘সুমো তোন’ নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এটির প্রচলন কমে এসেছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার শুটকি মাছ দিয়ে রান্না করা একটি খাবার হচ্ছে ‘হেবাং’, যেটাকে ‘সুগুনি হেবাং’ বলা হয়ে থাকে। চাকমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম ‘পাচন তোন’। চৈত্র সংক্রান্তির উত্সব ‘বিঝু’-তে বাড়িতে বাড়িতে পাচন রান্না করে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। কমপক্ষে পাঁচটি সবজির সংমিশ্রণে এটি রান্না হয় বলেই এ রকম নামকরণ। তবে বিঝুর পাঁচনে পাঁচের অধিক সবজি ব্যবহার করা হয়। চাকমাদের খাবারের তালিকায় মিষ্টান্নের খুব একটা প্রচলন না থাকলেও বিভিন্ন উত্সবে পায়েস আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়া বিনি চাল আর নারকেল দিয়ে কলাপাতায় মুড়ে বানানো হয় বিনি পিঠা। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় বড়া পিঠা, শান্নে পিঠা ইত্যাদি। চাকমা সমাজে বয়স্কদের মধ্যে তামাক খাওয়ার প্রচলন আছে। তাদের তৈরি নিজস্ব হুঁক্কার মাধ্যমে তামাক সেবন করা হয়। এই হুঁক্কাকে চাকমা ভাষায় দাবা বলে।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরাদের প্রধান খাদ্য ভাত। প্রতিবেলায় ভাতের সঙ্গে থাকে সিদ্ধ সবজি, মরিচ ও ভুট্টা। তাদের শাক-সবজি সিদ্ধ মানেই এই মরিচ ও ভুট্টার উপস্থিতি। তারা বাঁশ কোড়লকে চাখৈ, মৈতুরু, বাংসোং, কেসক, লাকসু, বাজি প্রভৃতি বিভিন্ন উপায়ে খেয়ে থাকে। সবজি হিসেবে ঢেড়স, কলাগাছ, মাসরুম ঝিঙ্গা, হলুদ ফুল, আদা ফুলকে তারা সিদ্ধ এবং গুদাক (বিশেষ এক প্রক্রিয়া) করে খায়। ত্রিপুরারা মাছকে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়ে খেতে পছন্দ করে। তাদের ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসুক’ উত্সবে মাংস রান্নার প্রচলন রয়েছে। ত্রিপুরাদের মাংস রান্নাকে সুস্বাদু করতে একরকম বিশেষ সুগন্ধি পাতা ‘বানা’ দেওয়া হয়। এছাড়া এদিন নারীরা বিন্নি চালের পিঠা ও চোলাই মদ তৈরি করে। বৈসুকে পিঠা বেশ প্রসিদ্ধ। বিন্নিচাল, কলাপাতা এবং লাইরু পাতা দিয়ে তারা পিঠা তৈরি করে থাকে। অতিথি আপ্যায়নে ত্রিপুরাদের রয়েছে বিশেষ সুপরিচিতি।

গারো

গারো সমাজে আগে জুমচাষ প্রচলিত ছিল। সে সময় পাহাড়ে জুম পদ্ধতিতে যেসব শাক-সবজি চাষ করা হতো তা দিয়েই তারা জীবন ধারণ করতো। গারোদের খাবারে তেল ও মশলার ব্যবহার নেই। অধিকাংশ খাবারের সঙ্গেই শুটকি ও খাবার সোডা ব্যবহৃত হয়। তাদের বিভিন্ন উত্সব-পার্বণে শূকরের মাংস প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিবেশন করা হয়। এ মাংসের সঙ্গে চালের গুঁড়া, আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও মরিচ দিয়ে তৈরি করা হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘ওয়াক ঘুরা’। গারোরা মাটির নিচে হওয়া এক ধরনের বিশেষ বড় জাতের আলুর সঙ্গে শুটকি ও সোডা দিয়ে রান্না করে। ছোট মাছ কলা পাতায় মুড়িয়ে আগুনে পুড়িয়ে বানানো ‘হিথোপ্পা’ তাদের বেশ সুস্বাদু একটি খাবার।

মণিপুরী

চাকমাদের মতো মণিপুরীরাও খাবারে তেল ও মশলার ব্যবহার করে না বললেই চলে। প্রাত্যাহিক জীবনে মণিপুরীরা আঠালো ভাতের সঙ্গে সিদ্ধ সবজি এবং বিভিন্ন রকমের ডাল দিয়ে তৈরি ‘খার’ খায়। খার তৈরিতে ডালের সঙ্গে আদা পাতা, হলুদ পাতা, লেবু পাতা দেওয়া হয়। এরপর এতে কলাগাছ পুড়িয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ছাই দেওয়া হয়, যা খারে ব্যতিক্রমধর্মী এক ফ্লেভার যোগ করে। তাদের প্রতিবেলা ভাতের সঙ্গে থাকা আরেকটি সবজি তরকারি হচ্ছে ‘পালটৈ’। মণিপুরীদের খাদ্য তালিকায় মাংস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে মাংস খাওয়ার প্রচলন ছিল। পরবর্তীতে চৈতন্যের আদর্শে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণের পর থেকে তারা তা পরিহার করে। মণিপুরীদের যে কোনো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই খাওয়া-দাওয়ার একটি পর্ব থাকে। যাকে ‘বান্দারা’ বলে। এখানে কলা পাতায় করে খাবার দেওয়া হয়, যা পুরোটাই নিরামিষ। ‘উটি’, ‘চাগেম পমবা’, ‘চামখোঙ/কাঙসোই’ হচ্ছে প্রচলিত কিছু নিরামিষ তরকারি। চেঙুম বা মাশরুমও বান্দারাতে পরিবেশন করা হয়। বান্দারায় মণিপুরীদের বিশেষ সালাদ ‘চিনচু’ বেশ সমাদৃত। এছাড়াও ভর্তা ও ডাল জাতীয় খাবার এদের বিশেষ পছন্দের। বিভিন্ন উত্সবে মণিপুরীরা এক বিশেষ মাছের তরকারি রান্না করে, যা ‘নাগা’ বলে পরিচিত। প্রায় প্রতিটি মণিপুরী বাড়িতেই নিজস্ব কিচেন গার্ডেন ও ছোট পুকুর থাকে। যেখানে বিভিন্ন শাক-সবজি ও মাছের চাষ হয়। তকপানিকম, নিয়াঙপা, ইকাইতাপি, ফাকপই, ফাতিকম, নুংশিহজক, কেলিকদম, লংচাক, নেন্নাম প্রভৃতি তাদের নিজস্ব কিছু সবজি আইটেম। এগুলোকে একসঙ্গে ‘মারৈ’ বলে। মণিপুরীদের আরেকটি বিশেষত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে ‘উছেইর ইরলপা’। এটি কচি বাঁশ, ডাল, স্মোকড ফিশ এবং মারৈ সিদ্ধ করে বানানো হয়। বিকেলের নাস্তায় শরীর চাঙা রাখতে ভাজা চাল, শুকনো মাছ আর মারৈ দিয়ে খুব ঝাল করে একরকম ছাতু তৈরি করা হয়, যা ‘করেইর চিনচু’ নামে পরিচিত।

সাঁওতাল

অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সাঁনতাল বা সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। তবে তাদের রান্না পদ্ধতি ভিন্ন। ভাত রান্নায় তারা পানি পুরোপুরি শুকায় না। সিদ্ধ গরম পানি থাকা অবস্থাতেই তা পরিবেশন করা হয়। তারা মাছ, কাঁকড়া, শূকর, খরগোশ ও পাখির মাংস পছন্দ করে। মুন্ডা, রাজবংশী, খাসিয়া, টিপরা, প্যাংখো, হাজং, তনচঙ্গা, ওরাও, রাখাইন, কোচ, বুনা, চাক প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও সিদল, নাপ্পি, বাঁশকড়ল ও তেল মশলা ছাড়া তাদের নিজস্ব কায়দায় রান্না করা বিভিন্ন সিদ্ধ সবজি ঐতিহ্যগতভাবে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

মাল পাহাড়ী

মাল পাহাড়ীরা কৃষিকাজ এবং বনজ উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। ভাত তাদের প্রধান খাদ্য। এছাড়াও তারা মুগ, মসুর, কুলথি এবং লর জাতীয় ডাল খায়। তারা নিরামিষভোজী নয়, তবে গরুর মাংস খায় না। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই মদ পান করে। এই মদ ঘরে তৈরি বা বাজার থেকে কেনা হতে পারে। তারা আদিবাসী চুরুটের মাধ্যমে ধূমপান করে এবং চুন (খাইনি) এবং পান মিশিয়ে তামাক চিবিয়ে খায়।

বর্মণ

বর্মণদের খাদ্যের প্রধান হল সাধারণত ভাত, প্রচুর তরকারি দিয়ে খাওয়া হয়, রসুন এবং আদা। মাছের সস এবং শুকনো চিংড়ি, আচার,মাছ পেস্ট, প্রায় প্রতিটি খাবারে খাওয়া হয়। বর্মনরা বেশি পরিমাণে মাংস খান না। মাংস সাধারণত ছোট ছোট টুকরো করে কেটে তেল দিয়ে ভাজা হয়। পেঁয়াজ, রসুন এবং মশলা যেমন তরকারি এবং লবণ মিশ্রিত হয় এবং ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। দুটি সবচেয়ে সাধারণ বর্মন খাবার হল মোহিঙ্গা এবং ওহনুখাউকসওয়ে। মোহিঙ্গা হল সামান্য গাঁজানো চালের নুডুলস একটি ঘন, মাছের স্যুপে মেশানো। ওহনুখাউকসওয়ে হল একটি চিকেন স্টু যা নারকেলের দুধে রান্না করা হয়, এছাড়াও নুডলসের সাথে পরিবেশন করা হয়। আন্ডারপাকা আম এবং চুন সাধারণত খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়। বর্মণ গরম, টক, মিষ্টি, নোনতা, তেতো এবং মশলাদার খাবার খান।

সবুজ চা জলের পাশে সবচেয়ে সাধারণ পানীয়গুলির মধ্যে একটি। অ্যালকোহল ভ্রুকুটি করা হয় এবং খুব কম লোকই এটি নিয়মিত পান করে। খাবার বর্মনের মধ্যে কথোপকথনের একটি প্রিয় বিষয়। সেজন্য তারা একে অপরকে ‘খেয়েছ?’ বলে অভিবাদন জানায়। অথবা "আপনি দুপুরের খাবারে কি খেয়েছেন?" বর্মন সাধারণত দিনে দুইবার খায়, সকালে একবার এবং অন্য খাবার বিকেলে।

ঘর নেঙটি ইঁদুর-house mouse
হিমালয়ী ছুছুন্দরী-Himalayan Shrew
অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার নয়! মন্ত্রিসভায়
২০১৯ সালে সরকারি ছুটি ২২ দিন
বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের সময়সূচী ২০২৪-Bangladesh Railway ২০২৪
চিত্রা হরিণ-cheetal Deer
পোষা প্রাণীর দাম-The price of pets
ছোট পাতা-নাক বাদুড়- Least Leaf-nosed Bat
রাজবংশী উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Rajvanshi tribe
এনজিও তালিকা বাগেরহাট - NGO List Bagerhat