দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল - Diabari to Agargaon Metrorail
যানজটের শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে মেট্রোরেল। প্রথম যাত্রায় দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এতে সময় লেগেছে মাত্র ১৭ মিনিট।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৫৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে মেট্রোরেলে দিয়াবাড়ি (উত্তরা) স্টেশন থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ১৭ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেনটি বেলা ২টা ১০ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছায়।
ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে এই মেট্রোরেল। দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যান্ত পৌনে ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল চালুর মধ্যে দিয়ে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
আরো পড়ুন: মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
মেট্রোরেল বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। এটি চলবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে, এক্ষেত্রেও বাংলাদেশে প্রথম। মেট্রোর টিকিট হচ্ছে বিশেষ এক ধরনের কার্ড, যাত্রীরা ভাড়া পরিশোধ করবেন এই কার্ড দিয়ে।
রাজধানীর চিরাচরিত লক্করঝক্কর, জীর্ণ বাসের ভাঙাচোরা সিটের বিপরীতে জাপানে তৈরি মেট্রোর কোচগুলো অত্যাধুনিক, আরামদায়ক। ট্রেনের ভেতর এবং স্টেশনগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি)। মেট্রো স্টেশনে রয়েছে ওঠানামার জন্য সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট।
আরামদায়ক ভ্রমণের সঙ্গে সময় বাঁচাবে মেট্রোরেল, গতি আনবে ঢাকাবাসীর জীবনে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। মেট্রোতে সময় লাগবে কম, উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া যাবে মাত্র ৪০ মিনিটে।
প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ছয় বগিবিশিষ্ট ১০ সেট ট্রেন চলাচল করবে। আপাতত এই রুটে ধীরগতিতে ট্রেন চলবে। এই পর্যায়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলবে, পরে চলাচলের সময় বাড়ানো হবে এবং চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
আগামী ২৬ মার্চ থেকে মেট্রোরেল সব স্টেশনে থামবে। প্রতিটি স্টপেজে থামা শুরু হলে, প্রথম দিকে প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ১০ মিনিট যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করবে, কারণ নগরবাসী এই নতুন পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত নয়।
পূর্ণ গতিতে ট্রেন চলাচল শুরু হলে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট অন্তর একটি ট্রেন চলবে। প্রতিটি স্টেশনে, যাত্রীদের ওঠানামা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনটি অপেক্ষা করবে। প্রতিটি ট্রেন দুই হাজার ৩০০ জন যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। তবে বাঁকযুক্ত এলাকায় গতি কম হবে।
আরো পড়ুন: মেট্রোরেলের টিকিট কোথায় পাওয়া যাবে
মেট্রোরেলের ভাড়া
মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের জন্য ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড থাকবে। এই কার্ড কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। এরপর প্রয়োজনমতো টাকা দিয়ে (রিচার্জ) কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত স্টেশন পড়েছে ৯টি। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত সম্পন্ন হলে মোট স্টেশন হবে ১৭টি। ইতিমধ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করেছে। প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ধরা হয়েছে ৫ টাকা। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুরের দূরত্ব দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।
প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৫ টাকা হলেও সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা। তার মানে, একজন রেলে উঠলেই তাকে দিতে হবে ২০ টাকা। উত্তরার দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত একজন যাত্রীকে দিতে হবে ৬০ টাকা। উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা সাউথ স্টেশনে যেতে একজনকে ২০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া ভাড়ার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, উত্তরার দিয়াবাড়ী (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা। আর শেওড়াপাড়া স্টেশনে নামলে ভাড়া গুনতে হবে ৫০ টাকা।
আরো পড়ুন: মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা ২০২৩
আবার পল্লবী থেকে কেউ মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে নামলে তাকে দিতে হবে ২০ টাকা। পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওয়ে নামলে গুনতে হবে ৩০ টাকা।
আর মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ চালু হলে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেটে যেতে একজন যাত্রীর লাগবে ৩০ টাকা আর কারওয়ান বাজারে গেলে লাগবে ৪০ টাকা।
দ্বিতীয় ধাপ চালু হলে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে শাহবাগে যেতে লাগবে ৮০ টাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে নামলে গুনতে হবে ৯০ টাকা। আর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল ও কমলাপুরে যেতে গুনতে হবে ১০০ টাকা।