উদয়ের পথে শুনি কার বানী, ‘ভয় নাই, ওরে ভয় নাই- নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া বহু রাজাকার আল -বদরের বিচার হয়েছে এই স্বাধীন বাংলায়। তার বিপরীতে লাল সবুজের এই দেশকে পারাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনতে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে নিজের জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ করে যারা অসামন্য অবদান রেখেছেন তাদেরকে এ দেশ করেছেন সম্মানীত। তেমনি করে স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের বহু মেধাবী বুদ্ধিজীবি মুক্তিযোদ্ধাদের বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে দেশ স্বাধীনে সরাসরি ভূমিকা পালন করেছেন।
দেশ স্বাধীনের দুই দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দখলদার পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোষর রাজাকার আল-বদর,আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে ঐ সময়ে দখলদার পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকাদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হওয়া দেশের সূর্য সন্তানরা শহীদ বুদ্ধিজীবি হিসেবে ভূষিত হন। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর মেধা শূণ্য হাওয়ার দিন হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করে আসছে দেশের আপমর জনতা।
কিন্তু ১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী পাক হানাদার বাহিনীও এদেশের রাজাকারদের হাতে নির্মম ভাবে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে এক জন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বাবুগঞ্জ বন্দরস্থ লোহালিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান, রংপুরের কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রতিভাদৃপ্ত অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধীকারী। অধ্যাপক শহীদ রামকৃষ্ণ অধিকারী বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার সুগন্ধা নদীধৌত বাবুগঞ্জ বন্দরে ১৯৪৪ খৃস্টাব্দের ১০ জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম ছিলেন রাইচরণ অধিকারী এবং মাতার নাম সারলা অধিকারী। তিনি বাবুগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬৩ সালে বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সেখান থেকে বাংলা বিভাগে ১৯৬৫ সালে বিএ পাস এবং ১৯৬৭ সালে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন।
পরে কিছুদিন বাবুগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে ১৯৬৮ খৃস্টাব্দে রংপুর কারমাইকেল কলেজে বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চার অধ্যাপকদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় শহীদ হন। শহীদদের রংপুরে কারমাইকেল কলেজ থেকে ৮ কিলোমিটার অদূরে ভালুক ধর্মদাষ দমদমা পুলের নিচে নির্মম ভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে দেন। এসময় ঐ কলেজের ছাত্ররা ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে শহীদদের উদ্ধার করে। সমাহিত করে সেখানকার নাম করণ করা হয় ৭১ এর বর্ধ্যভূমি ভালুক ধর্মদাস দমদমা।
এর তত্বাবধায়নে বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় রংপুর শহীদদের স্বরণে প্রফেসর মো. মোজাম্মেল হক স্মৃতি ভিক্তি স্থাপন করে নামফলক উম্মোচন করেন এবং কারমাইকেল কলেজ শিক পরিষদ তা বাস্তবায়ন করেন। পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে যারা শহীদ হন স্মৃতির ফলকে অধ্যাপক রাম কৃষ্ণ অধীকারীর নাম পঞ্চম নাম্বারে রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহীত হলেও আজও শহীদ বুদ্ধিজিবী হিসেবে আজও স্বীকৃতি পায়নি শহীদ অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী।
শহীদ অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারীর ভাইয়ের ছেলে বাবুগঞ্জ বন্দরের ব্যাবসায়ী প্রাণকৃষ্ণ অধিকারী অক্ষেপ করে বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা তাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং চাচা রামকৃষ্ণ অধিকারীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে আমাদের পরিবারকে নিঃশ^ করে দেয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহীত হলেও, আজও শহীদ বুদ্ধিজীবি হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি শহীদ অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী। তিনি শহীদ অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারীকে শহীদ বুদ্ধিজীবির তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত করার দাবী জানান।