বাচ্চা বিড়ালের খাবার-Baby cat food
যে কোনও বিড়াল বাচ্চা মানব শিশুর চেয়ে ১৫ গুণ দ্রুত বাড়ে। মাত্র ১০-১২ মাস বয়সেই একটা বিড়াল বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো খেতে পারে। যদি আপনার বিড়াল বাচ্চার জীবনের শুরু ঠিকঠাক করতে চান, তা হলে তাকে শুরু থেকেই পুষ্টিকর সুষম খাদ্য খেতে দিন। আর ঠিক এই কারণেই ও আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করবে। কারণ মায়ের দুধ ছাড়ানোর পর থেকেই সব কিছুর জন্য আপনারই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। এই সব কিছুর মানে হল যত্ন এবং সেরা খাদ্য।
বাচ্চা বিড়ালের যত্ন
০১। গরম রাখুনঃ এদের নিয়ে সবচাইতে বড় ভয় হচ্ছে এদের দ্রুত ঠান্ডা লেগে যায়, ও ঠান্ডায় ধুপ করে মারা যায়। এদের দ্রুত জায়গায় রাখুন। একটা বক্স নিন। বক্সে মোটা কাপড় বিছিয়ে নিন। এতে বাচ্চাটিকে রাখুন। এরপর আরেকটা কাপড়ে ওকে ঢেকে দিন।
০২। গরম পানির বোতলঃ এবার একটা প্লাস্টিকের বোতলে গরম পানি ঢালুন। এটিকে মোটা কাপড়ে পেচিয়ে নিন। তারপরে সেটাকে বাচ্চাটার পাশে রাখুন। বোতল ঠান্ডা হয়ে গেলে পানি পালটে দিন। অসহনীয় গরম যাতে আবার না হয় খেয়াল রাখবেন। এসবের পরিবর্তে হিটিং প্যাড ব্যাবহার করতে পারেন।
০৩। খাবারের সময়সূচিঃ দুই ঘন্টা পর পর খাওয়াতে হবে। ম্যাক্সিমাম চারঘন্টার গ্যাপ দেয়া যাবে। উল্লেখ্য, যদি ওরা ওনেক ঠান্ডা হয়ে যায়, তাহলে শরীর গরম না করে খাওয়াবেন না।
০৪। কি খাওয়াবেনঃ ফার্মেসি বা মুদি দোকানে "Lactogen 1" পাওয়া যায়। কিনে আনুন। পানিতে পাতলা করে মিশিয়ে সিরিঞ্জ (সুঁই ছাড়া) দিয়ে আস্তে আস্তে খাওয়ান। খাবার যেন ঠান্ডা খাবার না হয়, খুবই হালকা কুসুম গরম হলে সবচেয়ে ভালো।
০৫। খেতে না চাইলেঃ খেতে না চাইলে চিকন সিরিঞ্জ দিয়ে মুখের সাইড দিয়ে হালকা করে চাপ দিলে মুখ খুলবে। এরপর মুখের কিছুটা ভিতরে ঢুকিয়ে গলার কাছে এক ফোটা এক ফোটা করে ছাড়বেন।
০৬। টয়লেট করাবেন কিভাবেঃ হিসু ম্যানুয়ালি করাতে হবে। খাওয়ানোর পর কমোডের উপরে নিয়ে যান, এরপর ভেজা তুলো দিয়ে হিসু করার ছিদ্র পরাবর চেটে দেয়ার মত করে ঘষুন, যাতে সে মনে করে তার মা চেটে দিচ্ছে। তখন হিস্যু করবে।
০৭। গোছলঃ গোছল করানোর কথা ভুলেও কল্পনাও করবেন না।
০৮। খাওয়ানোর সময় ভিজে গেলে সাথে সাথে মুছে ফেলুন বা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিন।
০৯। ঠান্ডা ফ্লোরে যেন না আসে।
১০। কোনভাবেই ভুলেও গরুর দুধ খাওয়াবেন না। গরুর দুধ এদের হজম হয় না, খাওয়ালে ডায়রিয়া নিশ্চিত।
বাচ্চা বিড়ালের খাবার
০সপ্তাহ – ৪ সপ্তাহ : মায়ের দুধ এসময় বিড়ালের জন্য আদর্শ খাদ্য। এসময় বিড়াল শুধুমাত্র লিকুইড/তরল খাবার খেতে পারে। কোন শক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাচ্চাটি যদি orphan হয় সেক্ষেত্রে baby feeder/dropper/syringe এ করে গরুর তরল দুধ অথবা পাউডার দুধ খাওয়াতে হবে। দুধ ঘন হলে বাচ্চার ডায়রিয়া হয়ে যেতে পারে। তাই সমান পরিমান পানির সাথে (১কাপ তরল দুধ=১কাপ পানি এই অনুপাতে) মিশিয়ে, পাউডার হলে খুব পাতলা করে গুলিয়ে তারপর বাচ্চাটিকে খাওয়াতে হবে। গরুর দুধে lactose বেশি থাকার কারনে এই বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বিভিন্ন pet shop এ orphan বিড়ালের বাচ্চাদের জন্য kitten formula কিনতে পাওয়া যায় যা মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর এভাবে খাওয়াতে হয়।
৪সপ্তাহ – ১২ সপ্তাহ : এসময় বিড়ালের বাচ্চা দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খেতে পারে। বিভিন্ন খাবার যেমন- কাঁটা ছাড়া মাছ, থেঁতলানো সেদ্ধ মাংস (মশলা ছাড়া) ইত্যাদি খেতে দিতে হবে। ভাত দিতে চাইলে অল্প পরিমানে ভাত মিশাতে হবে। খাবারটি ভালভাবে থেঁতলিয়ে একটু পানি মিশিয়ে নরম করে দিতে হবে। Kitten Food খাওয়ানো যায় এবং প্রয়োজনে পানি মিশিয়ে নরম করে দিতে হবে। প্যকেট এর গায়ে ওজন অনুযায়ী খাওয়ানোর নির্দেশনা দেওয়া থাকে। এসময় বাচ্চাদের অধিক পুষ্টি প্রয়োজন হয় যা Kitten Food এ পাওয়া যায়। দিনে ৩-৫ বার বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে এবং ধীরে ধীরে দুধ খাওয়ানো কমিয়ে আনতে হবে। তবে ৮-১০ সপ্তাহ বয়সের পরে আর দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই।
১২সপ্তাহ/৩মাসের পর থেকে : এসময় বিড়াল সব ধরনের খাবার যেমন- বিভিন্ন ধরনের মাছ, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ডিম, Cat wet food, Cat dry food ইত্যাদি খায়। সাথে প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি খেতে দিতে হবে। যেহেতু বিড়াল মাংসাশী প্রাণী তাই ভাত দিলেও অল্প ভাতের সাথে বেশি মাংস মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। তবে খাবারটি অবশ্যই তেল , মশলা , লবন , চিনি, পেঁয়াজ , রসুন ছাড়া শুধু পানিতে সেদ্ধ করে দিতে হবে। কাঁচা মাছ মাংস না খাওয়ানো ভালো কারন এতে ব্যাকটেরিয়া থাকে ফলে বিড়াল রোগে আক্রান্ত হয়। এসময় তাকে দিনে ২-৩বার খাওয়াতে হবে।
ঠিকভাবে খাওয়ানোর পদ্ধতি:
রুম টেম্পারেচারে খাবার দিন। তার খাবার এবং জলের জন্য যেন আলাদা পাত্র থাকে। সব সময় টাটকা জল দেবেন। খাবার বদলাতে চাইলে তা ধীরে ধীরে বদল করুন। আপনি যা খান তা খেতে দেবেন না।
শুকনো এবং ভিজে খাবার:
আপনার বিড়ালকে স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হলে বাজারজাত শুকনো এবং ভিজে ক্যাটফুড মিশিয়ে খাওয়ান।