
Asian black bear
কালো ভাল্লুক বা এশীয় কালো ভাল্লুক এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। এই ভাল্লুকের আকার মাঝারি। এই ভাল্লুক Moon bear নামেও পরিচিত। এই ভাল্লুক বিভিন্ন প্রকার। এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের ভাল্লুকের প্রজাতি আলাদা।
ইংরেজি নাম: Asian black bear
বৈজ্ঞানিক নাম: Ursus thibetanus
বর্ণনাঃ
পুরুষ ভাল্লুক ১১০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত ওজনে হয় আর স্ত্রীদের ওজন হয় ৬৫ থেকে ৯০ কেজি। এদের মাথা বড় এবং গোলাকার। চোখ ছোট। কান দুটো বড়। এদের দেহ বেশ ভারি, পা গুলো মোটা ও ভীষণ শক্তিশালী। থাবাগুলো বেশ বড়সড়। লেজ রয়েছে তবে দেখা যায়না বললেই চলে। বুকের মধ্যে ইংরেজি "V" অক্ষরের মত সাদা দাগ রয়েছে। আর থুতনির সামান্য অংশে সাদা লোম রয়েছে। এদের দেহ ও পা বেশ শক্তপোক্ত হওয়ায় সহজেই এরা দুপায়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি মানুষের মত দু পায়ে বেশ কিছুদূর হাঁটতেও পারে। এদের বেশ পুরু কালো ও ঘন লোমের আস্তর রয়েছে। এদের কান দুটো অন্যান্য ভাল্লুক প্রজাতির থেকে একটু বেশিই বড় থাকলেও শ্রবণশক্তি ততটা উন্নত নয় এদের। দৃষ্টিশক্তিও খুব একটা ভালো না। তবে এই অভাব পূরণ করে তাদের প্রখর ঘ্রাণশক্তি। এরা অনেক দূর থেকেই আশেপাশে যেকোনো কিছুর গন্ধ আন্দাজ করতে পারে।
স্বভাবঃ
এশীয় কালো ভাল্লুকরা আর্দ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে বনে বাস করে। যেখানে পাহারের একটু খাঁড়া ঢাল থাকে এবক বনের যে স্থানে ডালপালা একটু ঘন ঠিক সে জায়গাই এরা পছন্দ করে। মাঝে মধ্যে এরা বন-জঙ্গল ছেড়ে সমতল জমিতেও চলে আসে। এশীয় কালো ভাল্লুক একাকী প্রাণী। শুধুমাত্র প্রজননের সময়ই কেবল এদের একত্রে দেখা যায়। স্ত্রী ভাল্লুককে পাবার জন্য ও এলাকা দখলের জন্য পুরুষ ভাল্লুকের লড়াইও দেখা যায় এ সময়।এদের নখর অন্যান্য ভাল্লুক প্রজাতির তুলনায় কিছুটা ছোট। এরা বেশ ভারি হওয়া সত্ত্বেও গাছে আরোহণে বেশ পটু। এরা গাছে উঠে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে সেখানে বাসা তৈরি করে। এতে করে এদের ফলমূল ও ছোটখাটো প্রাণী শিকার করতে সুবিধা হয়। এশীয় কালো ভাল্লুক পুরো শীতকাল জুড়ে শীতনিদ্রায় থাকে।
প্রজননঃ
এরা ৪ থেকে ৫ বছর সময়ের মধ্যেই প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে। স্ত্রী ভালুকরা ৬ থেকে ৮ মাস গর্ভকালে থাকার পড় ১-৪ টি শাবক প্রসব করে। স্ত্রী ভালুক সাধারণত নদীর ধারে পথুরে গুহায় শাবক প্রসব করে। জন্মের সময় বাচ্চাদের শরীরে কোন লোম থাকেনা। আর ঠিক ৬ মাস পর এরা মায়ের দুধ ছেড়ে শক্ত খাবার খেতে পারে। এরা প্রায় তিন বছর যাবত এদের মায়ের সাথে থাকে। মা ভাল্লুক সন্তানদের প্রতি অত্যন্ত রক্ষণশীল হয়। তাই শাবকের আশেপাশে থাকা অত্যন্ত বিপদজনক। বুনো পরিবেশে এশিয় কালো ভাল্লুক ২৫ বছর বাঁচতে পারে আর বন্দী অবস্থায় সর্বোচ্চ ৩০ বছর বাঁচে।
খাদ্য তালিকাঃ
এরা ছোটছোট প্রাণী থেকে শুরু করে মাছ, ফলমূল, ঘাস খেয়ে থাকে। তাছাড়া উইপোকা ও পিঁপড়েও এদের খুব প্রিয় খাবার।
বিস্তৃতিঃ
এশীয় কালো ভাল্লুক পাকিস্তানের উত্তরাংশ, আফগানিস্তানের দক্ষিণে, হিমালয়ের পূর্বে, উত্তর ভিয়েতনাম, চীনের দক্ষিণে এবং থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।
অবস্থাঃ
আইইউসিএন প্রধানত বনায়ন ধ্বংস এবং এদের দেহখণ্ডের জন্য শিকারের কারণে এদেরকে সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশে কালো ভাল্লুক মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত[৩] এবং বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।