Asian small-clawed otter
এশীয় উদবিলাই বা ভোঁদর বা ধেড়ে বা উদ বা ছোটনখী ভোঁদর বা উদবিড়াল হচ্ছে মুস্টেলিডি পরিবারের একটি ভোঁদড় জাতীয় প্রাণী।
ইংরেজি নাম: Asian small-clawed otterবা oriental small-clawed otter
বৈজ্ঞানিক নাম: Amblonyx cinerea
বর্ণনাঃ
ভোঁদড়ের শরীর কালচে বাদামি ঘন লোমে ঢাকা। মাথা ও শরীরের মাপ ৬৫-৭৫ সে.মি.। ঘাড় ও মাথার দিকগুলো বাদামী, তবে ঘাড়ের দিক সাদা। মাথার খুলি ছোট । লেজ ৪০-৪৫ সেমি চ্যাপ্টা। ফলে সাঁতারে বেশ সুবিধা হয় । কান ছোট। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো চ্যাপ্টা । এরা পানির নীচে ডুব দিয়ে একাধারে আধা কিলোমিটার যেতে পারে। সাঁতারের সময় কান ও নাকের ফুটো বন্ধ রাখে।
স্বভাবঃ
সাধারণত অগভীর স্বাদুপানির নদী, উপকূলীয় অঞ্চল এবং বনের ছোট ছোট খালের পানিতে বিচরণ করে উদবিড়াল। বাংলাদেশে এখন সুন্দরবনেই এদের বেশি দেখা যায়। বনের ছায়াময় এলাকা উদবিড়ালের বসবাসের জন্য আদর্শ। সুন্দরবনের উদবিড়াল আকারে ২ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হয়, এদের লেজও প্রায় এক ফুট দীর্ঘ। উদবিড়াল সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় কিংবা পারিবারিক দলে বিচরণ করে। এদের দৃষ্টিশক্তি বেশ প্রখর। পানির নিচেও এদের দৃষ্টি চলে বেশ ভালো।
প্রজননঃ
গর্ভাবস্থা ৬২ থেকে ৮৬ দিন স্থায়ী হয়। জন্মের মধ্যে ব্যবধান কমপক্ষে আট মাস। প্রসবের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে, স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়েই একটি বাসা তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। তারা ঘাস, খড় বা খড় সংগ্রহ করে বাসা বানায়। স্ত্রী ভোঁদড় প্রতি বছরে একবার তিন থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। ভোদড় ছানা বন্ধ চোখ নিয়ে জন্মায়, যা পঞ্চম সপ্তাহে খোলে। নবজাতকের ওজন ৪৫.৬ এবং ৬২.৫ গ্রাম এবং ৬০ দিন পরে ৪১০-৯৮৮ গ্রাম ওজনে পৌঁছায়। তারা ১০ সপ্তাহ বয়সে প্রজনন ডেনের পরিবেশ অন্বেষণ শুরু করে। প্রায় তিন মাস, তারা মায়ের নির্দেশে অগভীর জলে প্রবেশ করে। তারা চার থেকে পাঁচ মাস বয়সে স্বাধীন হয়ে যায়। একেকটি উদবিড়াল ক্ষেত্রবিশেষে ১২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
খাদ্য তালিকাঃ
উদবিড়াল সাধাণত মাছ, কাঁকড়া, পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে।
বিস্তৃতিঃ
বাংলাদেশের নড়াইল, খুলনা, সিলেট এবং দেশের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকার নদী, খাল, বিল, পুকুরের পাশে, প্লাবনভূমি ও খানাখন্দে এবং উপকূলীয় জেলায় ভোঁদড় দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুরে ভোঁদরের দেখা মিলে।
অবস্থাঃ
মানুষের অত্যাচারে এই প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। তাই আগের মতো এদের যেমন দেখা যায় না । বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।