Phayre's leaf monkey
চশমাপরা হনুমান হচ্ছে হনুমানের একটি বিশেষ জাত।
ইংরেজি নাম: Phayre's Leaf Monkey
বৈজ্ঞানিক নাম: Trachypithecus phayrei
বর্ণনাঃ
চশমাপরা হনুমান আকারে অনেক ছোট। শরীরের দৈর্ঘ্য হয় সাধারণত ৫৩ সেন্টিমিটার, লেজের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৭৬ সেন্টিমিটার। গায়ের লোমের রং মেটে বাদামি থেকে কালচে বাদামি। পেট আর বুকের রং সাদাটে। চোখের চারপাশের লোম সাদা রঙের হয়ে থাকে বলেই মনে হয় চশমা পরে আছে। মুখের রংও হয় সাদা। প্রাপ্তবয়স্ক চশমাপরা হনুমানের মাথার লোম বেশ বড় হয়, দেখলে পরচুলা পরে আছে বলে মনে হয়। হাত-পায়ের রং কালো হয়ে থাকে। বাচ্চা রং হয় সাদা, গোলাপি আর বাদামির মিশ্রণে।
স্বভাবঃ
অন্য হনুমানের চেয়ে এরা লাজুক প্রকৃতির। দিনের বেলায় ঘন বনের ছায়াযুক্ত স্থানে বিচরণ করতে পছন্দ করে। সহজে এরা মাটিতে নামে না। এরা দল বেঁধে চলাফেরা করলেও সহসা এদের চোখে পড়ে না। দলে বাচ্চাসহ সাত-আটটি হনুমান থাকে একটি পুরুষ হনুমানের নেতৃত্বে। তবে দলে কোনো পুরুষ হনুমান দলপতি হবার যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে উঠলে বিদ্যমান পুরুষ দলনেতা অনেক সময় নেতৃত্ব বজায় রাখতে মা হনুমানকে দ্রুত ঋতুমতি করার জন্য বাচ্চাদের মেরে ফেলে। এই পরিকল্পনায় আগের দলপতির বংশ নাশের একটি পরিকল্পনাও থাকে এই হত্যাকান্ডে।
প্রজননঃ
সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে চশমা পরা হনুমান প্রজনন সম্পন্ন করে। স্ত্রী হনুমান প্রজননক্ষম হয় ৩ থেকে ৪ বছর বয়সে এবং পুরুষ হনুমান প্রজননক্ষম হয় ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে। এদের গর্ভধারণকাল ১৫০ থেকে ২০০ দিন। একটি স্ত্রী হনুমান দুই বছর পরপর একটি করে বাচ্চার জন্ম দেয়। সদ্য প্রসূত বাচ্চার রং স্বর্ণাভ বাদামি। জন্মের পর বাচ্চা হনুমান পুরোপুরি মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে।
খাদ্য তালিকাঃ
চশমাপরা হনুমান গাছের কচি পাতা, ফুল, ফল, বীজ, কীটপতঙ্গ, পাখির ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। পানির চাহিদা মেটাতে এরা শিশির লেগে থাকা পাতা চাটে অথবা পানিবহুল লতাগুল্ম খায়।
বিস্তৃতিঃ
সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস প্রভৃতি দেশে দেখা যায় এদের। বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী বন, বিশেষ করে লাউয়াছড়া, রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি, পাবলাখালি, কাপ্তাইয়ের বনে চশমাপরা হনুমান দেখতে পাওয়া যায়।
অবস্থাঃ
মাংসের জন্য চোরা শিকারিরা ফাঁদ পেতে এদের ধরে। এদের পিত্ত ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। বনের পরিবেশে চশমা পরা হনুমানের টিকে থাকার পথে বাধা হচ্ছে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল ধ্বংস। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
তথ্যসূত্র:উইকিপিডিয়া