অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার নয়! মন্ত্রিসভায়

সোমবার (২০ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এই আইনের শিরোনাম আগে ‘সরকারি কর্মচারী আইন’ থাকলেও এখন তা নাম বদলে হয়েছে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮।

চার্জশিট গ্রহণের আগে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘অনেক দিন আলোচনার পর আইনটি আসছে।... অনেক বিষয়ই বিধির জন্য রাখা হয়েছে।

শফিউল বলেন, নতুন খসড়া আইনের ৪১ ধারার উপধারা (১)-এ বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে। চার্জশিট গৃহীত হলে আর অনুমোদন নেওয়া লাগবে না।এই আইনের ফলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনে বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই আইনের ফলে দুদক আইন বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হবে না, তবে কিছুটা বিলম্বিত হবে।

এই আইন পাস হলে দুদক ফাঁদ পেতে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে পারবে কি না- এ প্রশ্নে সচিব বলেন, চার্জশিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। চার্জশিট হওয়ার আগে গ্রেপ্তার করতে হলে আগে অনুমতি নিতে হবে।তিনি বলেন, ‘কোনও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ফৌজদারী মামলায় যদি মৃত্যুদণ্ড বা এক বছরের অধিক কারাদণ্ড হয়, তাহলে তার চাকরি চলে যাবে। কারাদণ্ড এক বছরের কম হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চাকরি আইনের ৪২ ধারায় ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা সংক্রান্ত উপধারা (১) এ বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা ১ (এক) বছর মেয়াদের অধিক মেয়াদের কারাদণ্ডে দন্ডিত হলে, উক্ত দণ্ড আরোপের রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হবেন। একই ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি-কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অনূর্ধ্ব এক বছর মেয়াদের কোনো কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ, নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ বা সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধন পূরণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।



তিনি জানান, সরকারি কর্মচারীদের শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডে বা চাকরি হইতে বরখাস্তকৃত কোনো ব্যক্তিকে অনুরূপ বরখাস্ত হইতে অব্যাহতি প্রদানের বিশেষ কারণ বা পরিস্থিতি রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবেন এবং অনুরূপ আদেশ প্রদান করা হইলে উক্ত কর্মচারী চাকরিতে পুনর্বহাল হইবেন।

সরকারি চাকরি আইনের ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ধারা ৩২ বা ধারা ৩৩ এর উপধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও এত দিন সরকারি কর্মচারীদের জন্য কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। বিভিন্ন বিধিবিধান দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে বিভিন্ন সভা করে। ২০০৫ সালে ‘সিভিল সার্ভিস আইন’ নামে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরির উদ্যোগ নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। কয়েকটি বৈঠক করলেও কোনো পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরি করতে পারেনি তারা। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইনটির একটি খসড়া তৈরি করলেও নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আর্থিক সহায়তায় ‘সিভিল সার্ভিস আইন’-এর খসড়া চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা খসড়া যুগোপযোগী করতে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে জনপ্রশাসন) তৎকালীন যুগ্ম সচিব (বিধি) মো. ফিরোজ মিয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি উপকমিটি করা হয়। ২০১১ সালের মার্চে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আইনের খসড়া নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারে মতভেদ দেখা দেয়। বিষয়টি সুরাহা করতে প্রকৃচিসহ (প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক) অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে সব ক্যাডার ও কর্মচারী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে খসড়া নিয়ে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১২ সালে রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময়সভা হয়। সেখানে প্রস্তাবিত খসড়ায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সচিব নিয়োগের বিধান থাকার তীব্র বিরোধিতা করেন সব ক্যাডার কর্মকর্তা। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ঘোষণা দেন যে ‘সিভিল সার্ভিস আইন’ নয়, সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য একসঙ্গে ‘সরকারি কর্মচারী আইন’ প্রণয়ন করা হবে।

নানা প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৪ সালের ২১ মে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই বছরের ৩ আগস্ট খসড়াটি অনুমোদন দেয় প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি। এর প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫ দিয়ে শুরু হয় এর যাত্রা। এ সময় কিছু পর্যবেক্ষণও দেওয়া হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে কিছু পর্যবেক্ষণসহ আবার খসড়াটি ফেরত পাঠানো হয়।

পরে জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ কমিটি এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় তা খসড়া উপস্থাপন করা হয়। এরপর প্রস্তাবিত আইনটির কয়েকটি ধারা বিশ্লেষণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি উপ-কমিটি করে দেয় সরকার। গত এপ্রিলে ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে সচিব কমিটির সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়।

ঘর নেঙটি ইঁদুর-house mouse
দেশি মিহি-পশমি উদ-Smooth-coated otter
টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রংপুর যুবলীগের সভাপতি
ঝিনাইদহের আজকের খবর
নীলগাই-Blue Bull
সম্বর হরিণ-Sambar deer
চায়না বনরুই-Chinese pangolin
ঢাকার পাইকারী মার্কেটগুলো কোথায় - Where are the wholesale markets in Dhaka?
ডালু উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Dalu tribe
এনজিও তালিকা গাজীপুর - NGO List Gazipur