আমতলীর কামারশিল্পীরা উপকরনের অভাব, কারিগরদের স্বল্প মুজরী, বিক্রি মুল্য কম, কয়লার দাম বেশীসহ প্রতিকুল পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে দা, কুঠার, ছেনি, চাপাতি, কাটারী ও ছুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।
বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলা সদরসহ হাট বাজারে কোরবানী গবাদিপশু জবাই করতে এবং মাংস তৈরীতে দা, কুঠার, ছুড়ি, চাপাতি ও কাটারী বেশি প্রয়োজন। কামার পাড়ায় রাতভর টুংটং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রসারে ও বহুমাত্রিক সমস্যার কারনে গ্রাম বাংলার সেই কামার শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। গত এক যুগ পূর্বে দু’উপজেলায় দু’শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। বর্তমানে আমতলী, তালতলী, পচাঁকোড়ালিয়া, ছোটবগী, কচুপাত্রা, আড়পাঙ্গাশিয়া, তালুকদার বাজার, গাজীপুর, চুনাখালী ও গোছখালীতে অর্ধশতাধিক পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। এ প্রজন্মের অনেক পরিবারের সন্তানরা এ পেশায় আসছে না।
শনিবার আমতলী কর্মকার পট্রি ঘুরে দেখা গেছে, কামার কারিগড়রা দা, বটি, কুঠার, ছেনিসহ প্রয়োজনীয় লোহার যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিক্রি তেমন ভালো না হলেও তারা লোহার যন্ত্রপাতি তৈরি করে পশরা সাজিয়ে বসে আছেন। দু’একজন ক্রেতা এসে দর কসাকসি করে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে পুরাতন দা, বটি ও ছেনি মেরামত করতে এসেছেন।
কামার শিল্পী গৌরঙ্গ কর্মকার বলেন পৈত্রিক ভাবে এ পেশায় এসেছি। এ বৃদ্ধ বয়সে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন আমাদের সন্তানরা এ পেশায় আসতে চাচ্ছে না।
আমতলীর শ্যাম কর্মকার বলেন, “বাব-দাদায় এই কাম হরছে এ্যহোন মোরাও হরি। এই বুড়া বয়সে এ্যাহন আর পারছি না”।
গাজীপুর বাজারের বাসু কর্মকার, বিমল কর্মকার ও শম্ভু বলেন, বর্তমানে এক বস্তা (আগাছা) কয়লার দাম ৩৫০ টাকা এবং সুন্দরী গাছের কয়লা ৬ শত টাকা বস্তায় কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে কয়লা ও লোহার পাতের দাম বেশী হওয়াতে যন্ত্রাংশ তৈরীতে যে খরচ হয় সেই তুলনায় দাম পাচ্ছি না।
চুনাখালীর নিতাই কর্মকার জানান, বাজারে ভাল লোহার দা কেজি প্রতি বিক্রি হয় ৫০০/৬০০ টাকা, প্রকারভেদে প্রতিটি ছুড়ি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কাটারী ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি।
তালুকদার বাজারের কালি দাস কর্মকার জানান গত বছরের তুলনায় এ বছর দা. চাকু ও কুঠার বেশী বিক্রি হচ্ছে।
একে স্কুল এলাকার ক্রেতা নিজাম মিয়া ও খালেক বলেন,পুরাতন দা ও বটি মেরামত করতে এসেছি ।
আমতলী কর্মকার সমিতি’র সভাপতি পরিতোষ কর্মকার বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি’র বিকাশ ঘটায় গ্রাম বাংলার সেই কামার শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানাই।