বন বিড়াল-Jungle Cat
বন বিড়াল, জংলি বিড়াল, খাগড়া বিড়াল বা জলাভূমির বিড়াল হিসেবে পরিচিত। মাঝারি আকারের একটি বিড়াল, যা এশিয়ার দক্ষিণ চীন, মধ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিমে নীল নদ উপত্যকায় দেখতে পাওয়া যায়। বন বিড়াল CITES Appendix II এর তালিকাভুক্ত।
ইংরেজি নাম: Jungle Cat
বৈজ্ঞানিক নাম: Felis chaus
বর্ণনাঃ
বন বিড়াল একটি মাঝারি আকারের, লম্বা পায়ের বিড়াল এবং বর্তমান ফেলিস প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়। মাথা এবং শরীরের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫৯ এবং ৭৬ সেমি এর মধ্যে হয়। এই বিড়ালটির প্রায় ৩৬ সেমি কাঁধ থাকে এবং ওজন ২-১৬ কেজি, লেজ, ২১ থেকে ৩৬ সেমি লম্বা।মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ছোট । এর মুখ লম্বা এবং সাদা। বড়, সূক্ষ্ম কান, দৈর্ঘ্যে ৪.৫-৮ সেমি এবং পিঠ লালচে বাদামী, লম্বা কালো চুলের একটি ছোট গোড়া। চোখ হলুদ চোখের চারপাশে সাদা রেখা আছে। মাথার খুলি মোটামুটি বিস্তৃত; তাই এই বিড়ালের মাথা তুলনামূলকভাবে গোলাকার দেখায়। শরীরের রং লালচে বাদামী বা ধূসর। বিড়ালটির চেহারা ডোরাকাটা এবং দাগযুক্ত। পেট সাধারণত শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় হালকা হয় এবং গলা ফ্যাকাশে হয়। নীচের অংশের তুলনায় পিঠের পশম ঘন।
স্বভাবঃ
মূলত গাছের কোটর, গুহা, জলাশয়ের ধারের ঝোপঝাড়, পুরনো ভাঙ্গা দালান-কোঠা ও ঘন বনে এরা বসবাস করে। বন বিড়াল খুবই চালাক প্রকৃতির প্রাণী। মাটিতে এরা যেমন দ্রুত দৌড়াতে পারে তেমনই গাছে ওঠা বা সাঁতারেও খুব দক্ষ। নিশাচর এই প্রাণীটি খাবারের সন্ধানে এক রাতে ৩ থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দেয়। গাছে উপর উঠে রাতের আধারে এরা ছোট পাখি বা পাখির ডিম, ছানা প্রভৃতি শিকার করে খায়। এক লাফে কয়েক ফুট পৌঁছে যেতে পারে। দিনের বেলায় এরা লতাপাতাঘেরা বড় গাছের কোটরে ঘুমায় বা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে।
প্রজননঃ
উভয় লিঙ্গই এক বছর বয়সে যৌনভাবে পরিণত হয়। গর্ভধারণ প্রায় ২ মাস স্থায়ী হয়। জন্ম ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হয়, যদিও এটি ভৌগলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বাচ্চা প্রসবের আগে, মা একটি পরিত্যক্ত পশুর গর্ত, ফাঁপা গাছ বা খাগড়ার বিছানায় ঘাস দিয়ে বাসা বানায়। দু’ থেকে চারটি ছানা প্রসব করে। জন্মের সময় বিড়ালছানাদের ওজন ৪৩ থেকে ৫৫ গ্রাম। বাচ্চা গুলো প্রাথমিকভাবে অন্ধ থাকে। ১০ থেকে ১৩ দিন বয়সে তাদের চোখ খোলে এবং প্রায় তিন মাস সম্পূর্ণভাবে দুধ ছাড়ানো হয়। পুরুষরা সাধারণত বিড়ালছানা পালনে অংশগ্রহণ করে না। বিড়ালছানা প্রায় ছয় মাস বয়সে তাদের নিজের শিকার ধরতে শুরু করে এবং আট বা নয় মাস পর মাকে ছেড়ে যায়। বন্দিদশায় থাকা জঙ্গলের বিড়ালের জীবনকাল ১৫ থেকে ২০ বছর এটি সম্ভবত বন্যের তুলনায় বেশি।
খাদ্য তালিকাঃ
এরা প্রাথমিকভাবে মাংসাশী। এদের খাদ্য তালিকা হলো ঘাসফড়িং,বড় পোকা, খরগোশ,ইঁদুর,ছোট পাখি,পাখির ডিম,মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড় এবং ছোট সাপ।
বিস্তৃতিঃ
ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ চীনে পাওয়া যায়। এটির বাসস্থান সাধারণ, জঙ্গল, ঘন গাছপালার স্থানগুলিতে বাস করে, যেমন জলাভূমি,উপকূলীয় অঞ্চল, তৃণভূমি এবং ঝোপঝাড়। এটি কৃষি জমিতে সাধারণ, যেমন শিম এবং আখের ক্ষেতর কাছাকাছি দেখা গেছে।
অবস্থাঃ
গ্রামগঞ্জ থেকেও প্রাকৃতিক জঙ্গল, জলাভূমিগুলো ধ্বংস হবার কারণেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ওখানে বসবাসরত ছোট-মাঝারি আকারের প্রাণীরা। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বনবিড়ালকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ’ বলে তালিকাভুক্ত করেছে। গ্রামগঞ্জ থেকেও প্রাকৃতিক জঙ্গল, জলাভূমিগুলো ধ্বংস হবার কারণেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ওখানে বসবাসরত ছোট-মাঝারি আকারের প্রাণীরা। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বনবিড়ালকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ’ বলে তালিকাভুক্ত করেছে।