বামন চিকা-Savi’s Pygmy Shrew
বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী । আকারে ছোট , তাই হয়ত এর নাম বামন চিকা। এটি ইঁদুরের মতো ফসল কাটে না, মূলত ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে সব অর্থেই এটি একটি উপকারী প্রাণী।’
ইংরেজি নাম: Savi’s Pygmy Shrew
বৈজ্ঞানিক নাম: Suncus etruscus
বর্ণনাঃ
বিশ্বের অন্যতম ছোট এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির ওজন ১ দশমিক ৮ গ্রাম থেকে ৩ গ্রাম। লেজ ছাড়া দৈর্ঘ্য ৩ থেকে সাড়ে ৫ সেন্টিমিটার। লেজের দৈর্ঘ্য আড়াই থেকে ৩ সেন্টিমিটার। গায়ের রং ধূসর কালো। লেজের রং রুপালি বাদামি। এদের চোখ খুবই ছোট। তবে চোখ দিয়ে তারা খুব বেশি দেখতে পায় না। শরীরের তুলনায় কিছুটা লম্বা নাক ও স্পর্শ দিয়ে এরা আশপাশের পরিস্থিতি টের পায়। ঘ্রাণ ও স্পর্শকে সম্বল করে তারা খাবার খুঁজে খায়। কানগুলো দেহের তুলনায় বড় ও স্ফীত। পিঠ ও দুই পাশের লোম ফ্যাকাশে বাদামি, কিন্তু পেটের দিক ধূসর বর্ণের। বামন চিকার মোট ৩০টি দাঁত থাকে।
স্বভাবঃ
বামন চিকারা সাধারণত একাকী থাকে। এরা তাদের আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখার জন্য কিচিরমিচির শব্দ করে এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমা প্রদর্শন করে। খাদ্যগ্রহণ ব্যতীত এরা সর্বদাই চঞ্চল থাকে এবং জেগে থাকলে ও লুকিয়ে না থাকলে এরা সর্বদাই ইতস্তত ঘোরাফেরা করে। এরা পিঁপড়া ও ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া ঝরা পাতার নিচেও এরা বিশ্রাম নেয়। বামন চিকারা রাতের বেলার অধিক সক্রিয় থাকে এবং বেশ দূর পর্যন্ত যায়। দিনের বেলায় এরা বাসার আশেপাশে লুকিয়ে থাকে। ভোরের বেলায় এরা সবচেয়ে বেশি কর্মক্ষম থাকে।
প্রজননঃ
বামন চিকার প্রাথমিকভাবে মার্চ থেকে অক্টোবর মাসে যৌন মিলিত হয়, যদিও এরা বছরের যেকোনো সময় গর্ভধারণে সক্ষম। গর্ভধারণকাল প্রায় ২৭–২৮ দিন। প্রতিবারে ২–৬টি বাচ্চার জন্ম হয়। বাচ্চাগুলো নগ্ন ও অন্ধ অবস্থায় জন্মায়। জন্মের সময় এদের ওজন হয় প্রায় ০.২ গ্রাম। ১৪ থেকে ১৬ দিন বয়সে এদের চোখ ফোটে, এবং এরা দ্রুত বড় হয়। মা চিকা ৯ থেকে ১০ দিন বয়সে এবং অন্য অসুবিধার ক্ষেত্রে শাবকদের অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়। এরা ২০ দিন পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। তিন থেকে চার সপ্তাহ বয়সে শাবকেরা স্বাধীন হয়ে যায় এবং শীঘ্রই বয়ঃপ্রাপ্ত হয়।
খাদ্য তালিকাঃ
এরা বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণী, বিশেষত পোকা-মাকড়, ঘাসফড়িং, লার্ভা, কেঁচো, এবং বিভিন্ন ধরনের উভচর, টিকটিকি, তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী খেয়ে থাকে।
বিস্তৃতিঃ
১০° থেকে ৩০° উত্তর অক্ষাংশে ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকা থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত এরা বিস্তৃত। দক্ষিণ ইউরোপের আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, ফ্রান্স, উত্তর মেসিডোনিয়া, মাল্টা, মন্টেনেগ্রো, গ্রিস, ইতালি, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও তুরস্কে এদের পাওয়া যায়। এছাড়া এশিয়ায় আফগানিস্তান, আজারবাইজান, ভুটান, চীন, মায়ানমার, জর্জিয়া, ভারত, ইরান, ইরাক, কাজাখস্তান, লাওস, মালয়েশিয়া (মালয়েশিয়ার বোর্নিও অংশে), নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুর্কমেনিস্তান ও ভিয়েতনামে এদের দেখা যায়।
অবস্থাঃ
বামন চিকার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো মানুষের কর্মকাণ্ড, বিশেষত চাষবাসের জন্য এদের আশ্রয় ও আবাস ধ্বংস করায় এরা হুমকির সম্মুখীন। যদিও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের দেখা যায়, এবং কোনো প্রজাতিগত হুমকির সম্মুখীন নয়, তবুও কোনো কোনো দেশে এরা বিপন্ন প্রজাতি বলে চিহ্নিত।