
দেশি রেসাস বানর-Rhesus Macaque
রেসাস বানর বা লাল বান্দর প্রাচীন বিশ্বের বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বানর বিশেষ। লাল বান্দর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের প্রাদেশিক প্রাণী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির প্রাইমেটের মধ্যে রয়েছে ৫ প্রজাতির বানর। পৃথিবীতে বর্তমানে বিদ্যমান ১৯ প্রজাতির বানরের মধ্যে এক প্রজাতি ছাড়া অন্য সবগুলি ছড়িয়ে আছে এশিয়ায় আফগানিস্তান থেকে জাপান, ফিলিপাইন থেকে বোর্নিও পর্যন্ত।
ইংরেজি নাম: Rhesus Macaque, Rhesus Monkey
বৈজ্ঞানিক নাম: Macaca mulatta
বর্ণনাঃ
লাল বান্দরের দেহ বাদামী অথবা ধূসর বর্ণের লোমে আচ্ছাদিত। মুখমণ্ডল ও পিছনের অংশ গোলাপী রঙের। এর লেজের দৈর্ঘ্য মাঝারি প্রকৃতির। লেজের দৈর্ঘ্য ২০.৭ সেন্টিমিটার থেকে ২২.৯ সেন্টিমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বানরের দৈর্ঘ্য সাধারণতঃ গড়ে ৫৩ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ৭.৭ কেজি হয়। স্ত্রীজাতীয় বানর আকারে পুরুষের তুলনায় ছোট হয়। গড়পড়তা দৈর্ঘ্য ৪৭ সে.মি. এবং ওজন ৫.৩ কেজি হয়। মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে এদের কশেরুকার সংখ্যা গড়ে ৫০টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই দাঁতের সংখ্যা ৩২টি।
স্বভাবঃ
লাল বান্দর কলহপ্রিয় জাতি। দলের প্রধান পুরুষ বানর অনুপ্রবেশকারীকে চোখ বড় বড় করে ও মুখ হা করে ভয় দেখায়। ভয় পেলে কাশির মত খক খক শব্দ করে ডাকে। তীব্র চিৎকার ও দাঁত বের করে একে অপরকে হুঁশিয়ার করে দেয়। দলের আকার ছোট থেকে বড় হতে পারে। আবাসস্থল ও খাদ্যের প্রাচুর্যের উপর ভিত্তি করে দলের সদস্যসংখ্যা ১০-৯০ পর্যন্ত হতে পারে। বন্য বানরের দল শহরাঞ্চলের দল থেকে অনেক বড় হয়। দলের প্রধান থাকে একটি প্রভাবশালী পুরুষ বানর। মানব বসতিতে বসবাসকারী বানরদের বিচরণের সীমা ১০-১০০ হেক্টর। কিন্তু বন্য বানরদের ক্ষেত্রে তা ৩০০-৪৯১ হেক্টর। দিনের ৬৫ ভাগ সময় এরা খাবার খোঁজা ও আহারের পেছনে ব্যয় করে।
খাদ্য তালিকাঃ
এরা বীজ, ফল, কীটপতঙ্গ, টিকটিকি ইত্যাদি খাদ্যে অভ্যস্ত। কিছু বানর কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী খায়। এছাড়াও, ঘাস ফড়িং, পিঁপড়াও এদের শিকারের অন্তর্ভুক্ত।
আবাসস্থল
বাংলাদেশ, ভারতের উত্তরাঞ্চল, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, চীনের দক্ষিণাংশসহ কিছু প্রতিবেশী দেশসমূহে লাল বান্দরের আবাসস্থল।
অবস্থাঃ
প্রজাতির বানরটি আইইউসিএন লাল তালিকায় ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংখ্যায় এর বিস্তৃতি ঘটেছে এবং বাসস্থানের উপযোগী পরিবেশও বিদ্যমান।