মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান - General knowledge about Metrorail
General Knowledge about Dhaka Metro Rail

মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান - General knowledge about Metrorail

স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন। মেট্রো শহরের অভ্যন্তরে যেসব রেল চলে সেই রেলকে মেট্রোরেল বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় শহরে বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির রেলওয়ে গণপরিবহনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গণপরিবহণের জন্য ‘ঢাকা মেট্রো রেল’ হলো ‘জাইকা’-এর অর্থায়নে একটি সরকারি প্রকল্প।

মেট্রোরেল কি

অনেকেই জানতে চান মেট্রোরেল কি। মেট্রো এর শাব্দিক অর্থ হল শহর বা নগর। আবার রেল হল ট্রেন। মেট্রোরেল এর মানে হল নগর রেল। মেট্রোরেল মুলত কোন শহর বা নগর কে কেন্দ্র করে চলে। যা যানজট নিরসনে ব্যাবহার করা হয়। এটি মাটির নিচ দিয়ে অথবা উড়াল সড়কে চলাচল করে।

১৮৬৩ সালের ১০ই জানুয়ারী প্রথম মেট্রো রেল চালু হয় লন্ডন এ। মুলত এটি ছিল ষ্টীম ইঞ্জিন। মেট্রো রেলের আবিষ্কারক হলেন চার্লস পিয়ারসন (Charles Pearson)।

মেট্রোরেল ভাড়ার তালিকা

মেট্রোরেলের ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে ডিএমটিসিএল। প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা ধার্য করে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মেট্রোরেলে চড়তেই লাগবে ২০ টাকা। মেট্রোরেলে উত্তরা দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা। আর উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পল্লবী থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। তবে পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীদের ভাড়া গুণতে ৩০ টাকা।

আরো পড়ুন:  মেট্রোরেলের টিকিট কোথায় পাওয়া যাবে

দিয়াবাড়ি থেকে উত্তরা সেন্টার: ২০ টাকা হল মেট্রোরেল ভাড়া

দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী মেট্রোরেল ভাড়া: ৩০ টাকা

দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর-১০ মেট্রোরেল ভাড়া: ৪০ টাকা

পল্লবী থেকে মিরপুর-১১ মেট্রোরেল ভাড়া: ২০ টাকা

পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল ভাড়া: ৩০ টাকা

মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট মেট্রোরেল ভাড়া: ৩০ টাকা

দিয়াবাড়ি থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল ভাড়া: ৫০ টাকা

মিরপুর-১০ থেকে কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল ভাড়া: ৪০ টাকা

মিরপুর-১০ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল ভাড়া: ৫০ টাকা

আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল ভাড়া: ৬০ টাকা

মিরপুর-১০ থেকে কমলাপুর মেট্রোরেল ভাড়া: ৭০ টাকা

দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর মেট্রোরেল ভাড়া: ১০০ টাকা

মেট্রোরেল টিকিট কিভাবে পাওয়া যাবে?

উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে মেট্রোরেল টিকিট বা কার্ড সংগ্রহ করা যাবে। এই পথের ভাড়া ৬০ টাকা। প্রথম দিকে স্টেশনে দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে— স্থায়ী ও এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ড পাওয়া যাবে। শুরুতে মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই এই কার্ড কিনতে হবে। অবশ্য পরে পর্যায়ক্রমে স্টেশনের বাইরে কার্ড বিক্রির জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড কিনতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে। এই কার্ড দিয়ে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনমতো টাকা রিচার্জ করা যাবে। স্থায়ী কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে। বৃহস্পতিবার ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের লিংক পাওয়া যাবে। এদিন থেকে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের জন্য লাগবে নিজের নাম, মাতা–পিতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি। এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ডের জন্য নিবন্ধন লাগবে না। স্টেশন থেকে এই কার্ড কিনেই আসা-যাওয়া করা যাবে। তবে ট্রেন থেকে নামার সময় কার্ড রেখে দেওয়া হবে। স্টেশনের টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে বিক্রয়কর্মীর সহায়তায় কার্ড কেনা যাবে। এ ছাড়া ভেন্ডিং মেশিন থেকে যাত্রীরা নিজেরাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

আরো পড়ুন:  মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা ২০২৩

মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

১. মেট্রোরেল প্রকল্প কবে থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে?

উত্তর- ২০১৬ সাল থেকে

২. ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থাকে কি বলা হয়?

উত্তরঃ Mass Rapid Transit

৩. মেট্রোরেল প্রকল্প পরিচালক কোম্পানির নাম কি?

উত্তরঃ Dhaka Mass Transit Company Ltd (DMTCL)

৪. ঢাকা ম্যাস ট্রানজিড কোম্পানি বা DMTCL কবে গঠন করা হয়?

উত্তরঃ ৩ জুন, ২০১৩।

৫. DMTCL কেন গঠন করা হয়?

উত্তরঃ মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, জরিপ, ডিজাইন ইত্যাদি কাজে।

৬. RSTP কি?

উত্তরঃ Revised Strategic Transport Plan.

৭. RSTP অনুযায়ী সরকার কয়টি ম্যাস রেপিড ট্রানজিড বা মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে?

উত্তরঃ ৫ টি।

৮. মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে কত?

উত্তরঃ ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

৯. মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন সংস্থা ঋন প্রদান করেন?

উত্তরঃ জাইকা।

১০. মেট্রোরেল প্রকল্পে জাইকা কত শতাংশ ঋণ প্রদান করেন?

উত্তরঃ ৭৫ শতাংশ।

১১. মেট্রোরেল প্রকল্পে জাইকার ঋণের পরিমান কত?

উত্তরঃ ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।

১২. মেট্রোরেল প্রকল্পে সরকারের অর্থায়নের পরিমাণ কত?

উত্তরঃ ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।(২৫%)

১৩. মেট্রোরেলের প্রথম ধাপ চালু হবে কবে?

উত্তরঃ ২০২০ সালে ডিসেম্বরের দিকে।

১৪. মেট্রোরেলের প্রথম ধাপ কোথায় থেকে চালু হবে?

উত্তরঃ উত্তরা-মতিঝিল।

১৫. উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথের নাম কি?

উত্তরঃ MT Line 6

১৬. মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগবে কত মিনিট?

উত্তরঃ ৩৫ মিনিট।

১৭. মেট্রোরেলের প্রথম ধাপে স্টেশন হবে কতটি?

উত্তরঃ ১৬ টি।

১৮. মেট্রোরেলের ১৬ টি স্টেশন কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে?

উত্তরঃ উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, আইএমটি, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

১৯. মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের রেলপথের দৈর্ঘ্য কত?

উত্তরঃ ২০.১০ কি.মি।

২০. মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপে কতটি ট্রেন চলাচল করবে?

উত্তরঃ ২৪ টি।

২১. মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপের প্রতিটি ট্রেনে কতটি বগি থাকবে?

উত্তরঃ ৬ টি।

২২. মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলারের ব্যাস কত?

উত্তরঃ ২ মিটার।

২৩. মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলারের উচ্চতা কত?

উত্তরঃ ১৩ মিটার।

২৪. মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব কত?

উত্তরঃ ৩০-৪০ কি.মি।

২৫. মেট্রোরেলে প্রতি ঘন্টায় বিদ্যুৎ খরচ হবে কতটুক?

উত্তরঃ ১৩.৪৭ মেগাওয়াট।

২৬. মেট্রোরেলের বিদুৎ জোগানের জন্য কতটি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে?

উত্তরঃ ৫ টি।

২৭. মেট্রোরেলের বিদুৎ জোগানের জন্য উপকেন্দ্র গুলো কোথায় নির্মাণ করা হবে?

উত্তরঃ উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁও ও বাংলা একাডেমি।

২৮. মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ কত কি.মি হবে?

উত্তরঃ ৪.৪০ কি.মি।

২৯. মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ কোথায় থেকে চালু হবে?

উত্তরঃ হোটেল সোনারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

৩০. মেট্রোরেলের তৃতীয় ধাপ কত কি.মি হবে?

উত্তরঃ ৪.৭ কি.মি।

৩১. মেট্রোরেলের তৃতীয় ধাপ কোথায় থেকে চালু হবে?

উত্তরঃ পল্লবী থেকে উত্তরা।

আরো পড়ুন: দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল

মেট্রোরেল সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য কত?

উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের রেলপথের দৈর্ঘ্য ২০.১০ কিলোমিটার।

প্রশ্ন: মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপের প্রতিটি ট্রেনে কতটি বগি থাকবে?

উত্তর: মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপের প্রতিটি ট্রেনে ৬টি বগি থাকবে।

প্রশ্ন: মেট্রোরেলের প্রথম ধাপে স্টেশন হবে কতটি?

উত্তর: মেট্রোরেলের প্রথম ধাপে স্টেশন হবে ১৬টি।

প্রশ্ন: মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলারের উচ্চতা কত?

উত্তর: মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলারের উচ্চতা ১৩ মিটার।

প্রশ্ন: মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলারের ব্যাস কত মিটার?

উত্তর: মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলারের ব্যাস ২ মিটার।

প্রশ্ন: মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপে কতটি ট্রেন চলাচল করবে?

উত্তর: মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপে ২৪ ট্রেন চলাচল করবে।

প্রশ্ন: উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথের নাম কী?

উত্তর: উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথের নাম MT Line 6

প্রশ্ন: মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে কত?

উত্তর: মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

প্রশ্ন: ঢাকা ম্যাস ট্রানজিড কোম্পানি বা DMTCL কবে গঠন করা হয়?

উত্তর: ৩ জুন, ২০১৩ তারিখে DMTCL কবে গঠন করা হয়।

প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেল কবে চালু হবে?

উত্তর: ডিএমটিসিএল (DMTCL) এর তথ্য অনুযায়ী মেট্রোরেল চালু হবে ডিসেম্বর ২০২২ এর শেষ সপ্তাহে।

মেট্রোরেল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

১. মেট্রোরেল ২৮ ডিসেম্বর,২০২২ উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২. মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার(২৫ভাগ) ও জাইকা(৭৫ ভাগ)।

৩. উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের দের্ঘ্য ২১.২৬ কিলোমিটার।

৪. এর স্টেশন সংখ্যা ১৭টি। দুই পাশে ১২ টি করে ২৪টি ট্রেন যাতায়াত করবে দৈনিক।প্রতি স্টেশন থেকে ৪ মিনিট পরপর একটি ট্রেন ছাড়বে।

৫. উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট।

৬. মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা।

৭. প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেছে ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড।

৮. যানজট দূরীকরণ,সময়ের অপচয় রোধ ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় মেট্রোরেল ভূমিকা পালন করবে।

৯. অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের উন্নয়নকে দিগুন করে দিবে মেট্রোরেল।

১০. মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে হলে আমাদের সবাইকে এর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে সচেতন থাকতে হবে।

মেট্রোরেল রচনা

ভূমিকাঃ ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে মেট্রোরেল প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়।মোট পাঁচটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। এম আর টি ১,২,৪,৫,৬।জাইকা এর অর্থায়নে দি ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট সার্ভে এবং এম আর টি ৬ নামে মেট্রোরেলের জন্য প্রথম এম আর টি রুট নির্বাচন করা হয়।

দেশে দেশে মেট্রোরেলঃ

মেট্রো রেল বিশ্বের অনেক বড় শহরে গণপরিবহণের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল, যা এখন ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড’-এর একটি অংশ। ১৮৬৮ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এনওয়াইতে তার প্রথম দ্রুত ট্রানজিট রেলব্যবস্থা চালু করে এবং ১৯০৪ সালে, নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রথমবারের জন্য খোলা হয়েছিল। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে, জাপান হলো প্রথম দেশ যেটি ১৯২৭ সালে একটি পাতাল রেলব্যবস্থা তৈরি করে। ভারত ১৯৭২ সালে কলকাতায় তার মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ শুরু করে। এর পরে, ভারত অন্যান্য শহরেও মেট্রো রেলব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে, বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেলব্যবস্থা চালু রয়েছে।

বাংলাদেশে মেট্রোরেলের প্রয়োজনীয়তাঃ

২০০৪ সালে ঢাকা শহরে যানবাহনের গড় গতি ছিলো ২১ কি.মি/ঘন্টা।২০১৫ সালে এসে তা হয়েছে ৭ কি.মি/ঘন্টা।আর মানুষের হাঁটার গতি ৪ কি.মি/ঘন্টা।তাই বলা যায়,একটা সময় যানবাহনের গতি এমন হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো যে, মানুষ হেঁটেই যানবাহনের আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।যদিও পরবর্তীতে সেটা হয়নি।তবে উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে মানুষের সময় লাগতো ৩-৪ ঘন্টা।ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে প্রায় ৪.৪ বিলিয়ন খরচ হয় আর প্রতিদিন মানুষের অনেক কর্মঘন্টা নষ্ট হয়।মেট্রোরেল প্রতি বছর ২.৪ বিলিয়ন টাকা সাশ্রয় করবে।তাছাড়া উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট।মেট্রোরেল একই সাথে ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে অবদান রাখবে এবং এটা থেকে সরকারের অনেক টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব হবে।

মেট্রোরেলের গুরুত্বঃ

মেট্রোরেল জাতীয় অর্থনীতি,পরিবেশ প্রভৃতিতে অবদান রাখবে।তাছাড়া মানুষের যাতায়তের খরচ কমবে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।নিচে মেট্রোরেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান তুলে ধরা হলো।

অর্থনীতিতে অবদানঃ

প্রতিটি মেগা প্রজেক্টেরই মুনাফা অর্জনের বানিজ্যিক দিক রয়েছে।তবে সবসময় যে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব তা নয়।সরকার অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং এ জন্য সরকারকে ভর্তুকি প্রদান করতে হয়।মেগা প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হলো বানিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নের সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করা।জনগণ যেন সাশ্রয়ী মূল্যে পরিষেবা গ্রহণ করতে পারে সেটাও মেগা প্রজেক্টের উদ্দেশ্য।

মেট্রোরেল প্রকল্পে সরকারের লাভ হবে নাকি লোকসান হবে তা ভাড়া নির্ধারণের উপর নির্ভর করে।বিআরটিএ প্রথমে যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে সেটা থেকে দেখা যায়,সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০ টাকা।প্রতিদিন মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়।সে টাকা প্রতিদিন ট্রেনে উঠা যাত্রীদের কাছ থেকে যেন উঠানো যায় সে হিসেবেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে বিদ্যুৎ বিল,কর্মচারীদের বেতন,বৈদেশিক ঋণ,দেশি বিনিয়োগের রিটার্নসহ এমআরটিএর সব খরচ উঠানোর জন্য ভাড়ার টাকা যথেষ্ট হবে না।এই জন্য ডিএমটিসিএল নন-ফেয়ার উৎস থেকে রাজস্ব তৈরির চিন্তা করছে।প্রতিটি স্টেশনে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট(টিওডি),স্টেশন প্লাজা এবং অন্যান বানিজ্যিক সুবিধা সংযুক্ত করা হবে।নন-ফেয়ার উৎস থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করা হবে।কয়েকটি স্টেশনে স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করা হবে।স্টেশনের কাছাকাছি বিশ্বমানের বিনোদন পার্ক,দৈনন্দিন পণ্যের বাজার ও শপিং মল নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।এটা থেকে সরকারের অনেক আয় হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে সরকার।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ

মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক লোকবলের প্রয়োজন হবে।এগুলোর মধ্যে আছে,অপারেটিং রুম,টিকিট কাউন্টার,বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,এসকেলেটর,লিফট,প্রার্থনার স্থান,অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা।এসবে নতুন নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে।ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

তাছাড়া মেট্রোরেলের আশেপাশে ব্যক্তিগত ব্যবসা গড়ে উঠবে যাতে করে অনেকের কর্মসংস্থান হবে।

দুর্ভোগ প্রশমনঃ

ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াত করে।পিক আওয়ারে অনক সময় বাস পাওয়া যায় না।তাছাড়া বাসে প্রচুর ভিড় থাকে।ঠেলাঠেলি করে উঠতে হয়।ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে পড়ে থাকতে হয়।এর উপর অতিরিক্ত ভাড়া আরবাস কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার তো আছেই।মেট্রোরেল এই দুর্ভোগ প্রশমনে সহায়তা করবে।প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৬০০০০ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।দুই পাশে ১২টি করে মোট ২৪ টি ট্রেন ৪ ঘন্টা পর পর ছেড়ে যাবে। নারীরা অনেক সময় বাসে হয়রানির শিকার হয়।মেট্রোরেলে নারীদের হয়রানি কমবে।

ঢাকার উপর চাপ কমবেঃ

ঢাকা শহরে প্রায় ৪-৫ কোটি মানুষের বাস।ঢাকার আশেপাশের অঞ্চলগুলো থেকেও মানুষ এসে ঢাকায় বাসা নিয়ে থাকে।মেট্রোরেল হওয়ার ফলে ঐসব অঞ্চলের মানুষ এখন তাদের নিজ নিজ বাসা থেকেই প্রতিদিন এসে কর্মস্থলে অংশগ্রহণ করতে পারবে।এতে ঢাকা শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব কমবে।

পরিবেশগত অবদানঃ

ঢাকার রাস্তায় চলমান সব যানবাহন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে, যা পরিবেশ দূষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এ ছাড়া ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের উদ্যোগ চলছে। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে রয়েছে। মেট্রো রেল রাজধানীর পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঢাকার বায়ুদূষণ অন্যান্য মেগাসিটির তুলনায় অনেক বেশি তীব্র। যেহেতু মেট্রোরেল ‘বিদ্যুৎ চালিত’ এবং প্রতি ঘণ্টায় বেশি যাত্রী বহন করতে পারে, তাই ঢাকায় বাস ও অন্যান্য পরিবহনের মাধ্যমে যাতায়াতের প্রবণতা কমে যাবে। এতে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমবে, যা পরিবেশের জন্য উপকারী হবে। এ ছাড়া শব্দ, শক এবং কম্পন কমাতে মেট্রো রেলে ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম [এমএসএস] প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। শব্দদূষণ রোধে কংক্রিটের পাশের দেওয়ালও করা হবে। এ প্রযুক্তি পরিবেশের ওপর মেট্রোরেলের প্রভাব কমাবে।

যেভাবে চড়তে হবে মেট্রোরেলেঃ

স্টেশনের তৃতীয় তলায় প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানোর আগেই কয়েকটি ধাপ আসবে যাত্রীর সামনে। প্রথমে সড়ক থেকে সিঁড়ি বা চলন্ত সিঁড়ি কিংবা এস্কেলেটরে করে যেতে হবে দোতলায়; সেটি কনকোর্স এলাকা।

কনকোর্সের কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। মেট্রোরেলের দুই ধরনের টিকিট আছে। দীর্ঘমেয়াদি টিকিট হিসেবে এমআরটি পাস নিতে হবে। একবারের যাত্রার টিকিটও কেনা যায়। দুটোই পাওয়া যাবে কাউন্টারে। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় ‘টিকিট বিক্রয় মেশিন’ থেকে সংগ্রহ করা যাবে একবারের যাত্রার টিকিট।

টিকিট কাটার পর ট্রেন ধরতে ঢুকতে হবে পেইড জোনে। সে জন্য অটোমেটেড প্রবেশ পথে নির্ধারিত জায়গায় টিকিট ছোঁয়ালে খুলে যাবে দরজা।

মেট্রোরেল ভাড়াঃ

সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া। মেট্রো রেলের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয় বলে জানিয়েছে।

দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা,পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা,মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা,শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা।

পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা।

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট ৩০ টাকা

মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ৫০ টাকা।

মিরপুর-১০ থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে ৬০ টাকা।

উপসংহারঃ

এটা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, মেট্রোরেল বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক। স্বপ্নের এই মেট্রোরেল দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে। ঢাকা শহরের মানুষের জন্য স্বস্তির গণ পরিবহন সংযোজন করেছে এই মেট্রোরেল। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করবে এই মেট্রোরেলে। মানুষের সময়ের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি হবে অর্থের সাশ্রয়। মেট্রোরেল এদেশের সম্পদ। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার।

মেট্রোরেল সম্পর্কে প্রশ্ন,মেট্রোরেল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য,padma bridge general knowledge,মেট্রোরেল কবে উদ্বোধন করা হয়,মেট্রোরেল কি,metro rail lines,

বনানীর আগুন নেভাতে গিয়ে আহত সোহেল মারা গেছেন
বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলে যা যা করবেন
চাকমা ছেলে ও মেয়েদের নামের তালিকা - Chakma boys and girls name list
বাংলাদেশের সেরা পর্যটনকেন্দ্র-The best tourist destination in Bangladesh
ঘর নেঙটি ইঁদুর-house mouse
সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা - First aid for snake bite
সাপ তাড়ানোর উপায় - Ways to get rid of snakes
ঢাকার কোথায় বাসা ভাড়া কম - Where in Dhaka house rent is low
বাংলাদেশের সেরা ১০ টি বীমা কোম্পানি-Top 10 insurance companies in Bangladesh
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ রেংকিং ২০২৪