ফসলের যাকাত
ফাইল ফটো

মহান আল্লাহ আশরাফুল মাখলূকাত মানুষের জন্য জমিনকে বসবাস উপযোগী করেছেন এবং জিবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, আমরাই প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, এরপর আমরা ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর, ঘন উদ্যান, ফল এবং ঘাস তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে’(সুরা আবাসা২৪-৩২)।

আল্লাহ তা‘আলা যমীনকে যেমন মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস বানিয়েছেন, তেমনি জমিন হতে উৎপাদিত ফসলের যাকাত ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমরা যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে  দেই তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর এবং তার নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প কর না; অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত’ (সুরা বাক্বারাহ ২৬৭)। তিনি অন্যত্র বলেন,

‘তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর গাছ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিমও সৃষ্টি করেছেন; এগুলি একে অপরের সদৃশ এবং বিসদৃশও। যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল আহার করবে আর ফসল কাটার দিনে তার হক (যাকাত) প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না’ (সুরা আন‘আম ১৪১)।


কৃষিপণ্যের যাকাতের নিছাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপন্ন ফসলের যাকাত নেই’।( বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত অধ্যায়)

‘ওয়াসাক’-এর পরিমাণ : ১ ওয়াসাক সমান ৬০ ছা‘। অতএব ৫ ওয়াসাক সমান ৬০দ্ধ৫= ৩০০ ছা‘। ১ ছা‘ সমান ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হ’লে ৩০০ ছা‘ সমান ৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মন ৩০ কেজি। এই পরিমাণ শস্য বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত হ’লে ১০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয। আর নিজে পানি সেচ দিয়ে উৎপাদন করলে ২০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয। 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,‘বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ওশর’ (দশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ ওশর’ (বিশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব’।(বুখারী হা/১৪৮৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়)

যে শস্য শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি অথবা শুধুমাত্র কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় না। বরং কিছু অংশ বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু অংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়, সে শস্যের দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ কারো ২০ মণ ধান সম্পূর্ণ বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন হ’লে তার দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ দুই মণ যাকাত দিতে হবে। আর নিজে সেচ দিয়ে উৎপন্ন করলে তার বিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ এক মণ যাকাত দিতে হবে। আর কিছু অংশ বৃষ্টির পানি ও কিছু অংশ নিজের সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হলে তার দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ  এক মণ বিশ কেজি যাকাত দিতে হবে। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই। (ইবনু কুদামা, শারহুল কাবীর ২/৫৬৩ পৃঃ )

আবার কোন ব্যক্তির ১০ মণ ধান ও ১০ মণ গম উৎপন্ন হলে সে কি উভয় শস্য একত্রিত করে যাকাত আদায় করবে? না-কি পৃথকভাবে কোনটি নিছাব পরিমাণ না হওয়ায় যাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে? এ ব্যাপারে ইসলামি চিন্তাবীদদের সঠিক মত হলো, গম, যব, ধান ইত্যাদি প্রত্যেকটি পৃথক শস্য। অতএব শস্যগুলি পৃথকভাবে নিছাব পরিমাণ হলেই  কেবল যাকাত আদায় করা ফরয। অন্যথায় ফরয নয়। তবে একই শস্যের বিভিন্ন শ্রেণী একই নিছাবের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মিনিকেট, পারিজা, চায়না, স্বর্ণা সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ধান একই নিছাবের অন্তর্ভুক্ত।(ছহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৪৫ পৃঃ)

আমাদের সমাজে যাকাতের প্রচলন কিছুটা থাকলেও ফসলের যাকাত আরবীতে যাকে বলে উশর এ ব্যাপারে আমরা অনেকটা উদাসীন। এ ব্যাপারে সচেতনতাও অনেক কম। সবকিছু মিলিয়ে ফসলের যাকাত আদায় অনেকটা উপেক্ষিত। অথচ ধনদৌলতের যাকাত আদায়ের মত ফসলের যাকাত আদায় করাও অন্যতম একটি ফরজ কাজ।

লেখকঃ আমানুল্লাহ নোমান

পরকালের চিন্তা কেন করবেন?-Why worry about the afterlife?
হজ্ব কাদের উপর ফরজ - On whom is Hajj obligatory?
কারিন জ্বীন সম্পর্কে হাদিস - Hadith about Qarin Jinn
বাথরুমে অযু করা যাবে কি?
ইমামের অজু নষ্ট হয়ে গেলে কি করবে
স্ত্রীকে তালাকের পর পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে করণীয় - What to do if you want to remarry your wife after divorce
জেনে নিন কি পরিমান সম্পত্তি হলে যাকাত ফরজ
তারাবি নামাজের নিয়ত দোয়া ও মোনাজাত - The purpose of Tarawi prayer is to pray and pray
প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে কি নামাজ পড়া যাবে? - Can you pray with the speed of urine-toilet?
প্রস্রাব-পায়খানার আদব ও শিষ্টাচার - Toilet etiquette and manners