কান্না কেন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো-Why is crying good for health
crying good for health

কান্না করা কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার নাকি ক্ষতিকর-Is crying good or bad for health?

শৈশবেই হোক বা পরিণত বয়সে হোক, আমরা কেঁদে ফেলি মূলত চারটি কারণে। খুব দুঃখ পেলে। খুব রেগে গেলে। গভীর ভালবাসায় হৃদয় টলমল করে উঠলে। আর গভীর আনন্দে। এই আনন্দের কান্নাকে আমরা বলে থাকি আনন্দাশ্রু! যে কারণেই আমরা কাঁদি না কেন, এই কান্না শরীর-স্বাস্থ্যের উপকারই করে।

'কান্নায় লাভ নেই, কান্নায় হবে না

কোনোদিন পদ্মা-মেঘনা

দিনের আলোয় শুকিয়ে যাবে সে

হবে না তো এক নদী যমুনা...'

-জেমসের এমন গানে, আবেগতাড়িত হয়ে যতই মনোবেদনা চেপে রাখুন না কেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন-কান্না একটি স্বাস্থ্যকর, স্বাভাবিক আবেগ যা ব্যথা কমাতে, চোখকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 

এবার জেনে নেই কিভাবে কান্না আমাদের উপকার করে-

১. কাঁদলে চোখ পরিষ্কার হয়

কাঁদলে আমাদের চোখ থেকে জল বের হয়। এটা এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। এই জল চোখের মণি আর চোখের পাতা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়। এটি আমাদের চোখকে শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকেও বাঁচায়। ফলে কান্না আমাদের চোখ পরিষ্কার রাখতে আর দৃষ্টি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

২.মনের চঞ্চলতা দূর হয়

ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে কাঁদার সময় আমাদের মনের চঞ্চলতা কমে যেতে শুরু করে। ফলে সুখ হোক কী দুঃখ, যে কারণেই চোখে জল আসুক না কেন, মনের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কোনও কষ্টই হয় না। তাই তো কান্নার পর আমাদের এতটা হলকা লাগে। মনে হয় বুকে আটকে থাকা একটা বড় আকারের পাথর যেন নেমে গেল।

৩. ব্যাকটেরিয়া দূর করে

চোখের পানিতে থাকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দূর করার উপাদান। রাস্তা-ঘাটে, বাসে-ট্রামের ধুলো-বালি থেকে সারা দিনে চোখের ভেতর কত ময়লাই না জমা হয়। এগুলো থেকে নানা জীবাণু আমাদের চোখের বাসা বাঁধতে পারে। কিন্তু চোখের পানি এসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংসে খুবই কার্যকর।

চোখের পানিতে থাকা আইসোজাইম মাত্র ৫-১০ মিনিটেই চোখের প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে।

৪.স্ট্রেস বা চাপ কমায়

স্যাক্রেমেন্টোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিলড্রেন্স হসপিটালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সেজ টিম্বারলিনের কথায়, দুঃখে হোক বা রাগে অথবা অনুরাগে কিংবা আনন্দে, আমাদের মনের স্বাভাবিক অবস্থার ওপর একটা চাপ (স্ট্রেস) তৈরি হয়। যা হলো বাড়তি চাপ। সেটা কমিয়ে ফেলাই তখন মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে শরীরের। চোখের পানি সেই বাড়তি চাপ কমিয়ে ফেলে আমাদের স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনে।

৫. কান্না মন ভালো করে দেয়

কান্নায় মন ভালো হয়। কারণ কান্নায় শরীরে ম্যাঙ্গানিজের মাত্রা কমে যায়। এই ম্যাঙ্গানিজ বেশি মাত্রায় জমতে থাকলে উদ্বেগ, অস্বস্তি, রাগ-ক্ষোভ বেড়ে যাওয়াসহ নানা আবেগি ঝামেলা তৈরি করতে থাকে। কিন্তু কেঁদে ফেলতে পারলে এর মাত্রা কমে গিয়ে শরীর ও মন হালকা হয়।

৬.মানসিক চাপ কমায়

কান্নাতে আমাদের মনের ওপর চাপ কমে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে আমাদের শরীরে 'লিওসিন এনকেফেলিন ও প্রোলাকটিন'-এর মতো কিছু রাসায়নিক জমা হয়। আবার কান্নার অবদমন আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কাঁদতে পারলে এই সব অতিরিক্ত চাপ কমে যায়।

৭. মাথার যন্ত্রণা কমাতে কার্যকর

কাঁদলে অতিরিক্ত এটিসিএইচ হরমোন বের হয়ে যায় এবং কর্টিসোলের পরিমাণ কমে যায়। ফলে মনে থাকা চাপ কমে। আমাদের শরীরে থাকা চাপ নিবারক আরেকটি উপাদান হচ্ছে লিউসিন এনকেফালিন। কান্নার ফলে এটি নিঃসৃত হয়। এটি ব্যথা কমায় এবং মন ভালো করে দেয়।

৮. কাঁদলে ঘুম ভালো হয়

২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁদার সময় আমাদের শরীরের ভেতরে এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে দ্রুত প্রশান্তির ঘুম আসে। তাই দেখা যায়, অনেকে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েন।

৯.নবাজাতকদের ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে

বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর তাদের জোর করে কাঁদানো হয় কেন জানা আছে? আসলে মায়ের পেটে থাকাকালীন বাচ্চার শরীরে অক্সিজেনের প্রবেশ ঘটে আম্বিলিকাল কর্ডের মাধ্যমে। কিন্তু জন্ম নেওয়ার পরে যে নিজেকেই শ্বাস নিতে হবে। আর ঠিক এই কারণেই প্রসবের পর পরই কাঁদাটা মাস্ট। কারণ কাঁদের সময় প্রচুর প্ররিমাণে অক্সিজেন বাচ্চার ফুসফুসে পৌঁছে যায়। ফলে লাং নিজে থেকেই ধীরে ধীরে কাজ করা শুরু করে দেয়। ফলে বাচ্চার শরীরে অক্সিজেন প্রবেশ করতে আর কোনও সমস্যাই হয় না।

১০.বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে

জন্ম নেওয়ার পরই নবজাতকের কান্না তার শরীরের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে প্রথম কান্নার সময়ই বাচ্চার শরীরে অক্সিজেন প্রবেশ করতে শুরু করে। সেই সঙ্গে লাং ধীরে ধীরে অক্সিজেন গ্রহণ করার পরিস্থিতিতে আসে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে শুরু হতে সময় লাগে না।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ ও প্রতিরোধ - Heart attack causes and prevention
ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা কী - What are the advantages and disadvantages of Hilsa fish?
গর্ভাবস্থায় দাঁতের মাড়ি ফোলা ও রক্ত পড়ার কারণ - Gum swelling and bleeding during pregnancy
কালমেঘ পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ
ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
ব্রহ্ম কমল এর ভেষজ গুণাগুণ - Herbal properties of Brahma Kamal