মোহরানা ও কাবিননামার মধ্যে পার্থক্য-Difference between Mohrana and Kabinnama

দেনমোহরনা এবং কাবিন কি একই জিনিস?- Mohrana and cabin the same thing?

অনেকেই কাবিনানামাকে ভেবে থাকেন দেনমোহর। বাস্তবে কাবিননামা ও দেনমোহর কী? এ দুটি কি এক? এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য কী? কাবিননামা ও দেনমোহরের মধ্যে পার্থক্যই বা কী?

কাবিননামা এবং দেনমোহর দুটিই সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এর পরিচয় ও কাজে পার্থক্য রয়েছে। কাবিনানামা একটি চুক্তি। আর দেনমোহর হলো স্বামীর কাছে স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। স্বামী তার স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগেই এটি পরিশোধ করতে হয়। কাবিননামা বিয়ের জন্য আবশ্যক নয় বরং দেনমোহর বিয়ের জন্য আবশ্যক।

কাবিননামা কী?

কাবিননামা একটি চুক্তি। কাবিননামা বলতে বর-কনের বিয়ে সম্পাদনের লিখিত চুক্তিকে বোঝায়। একে নিকাহনামাও বলা হয়। বিয়ে সম্পাদনের জন্য বা বিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য ‘কাবিননামা’আবশ্যক নয়। বরং কাবিননামা হচ্ছে একটি আইনি বাধ্যবাধকতা।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত ‘কাজী’ সরকার নির্ধারিত ছকে কাবিননামা সম্পাদন করে থাকেন। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর আদায়, স্ত্রীর ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো যথাযথভাবে কাবিননামায় উল্লেখ থাকে। এটি সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কাবিননামা; যা একটি আইনি দলিলও বটে। (বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ই-তথ্যকোষ)

দেনমোহর কী?

দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার। এটি বর-কনের বিয়ের অন্যতম শর্ত। ইসলামেও দেনমোহর হলো বিয়ের অন্যতম শর্ত। এই শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিয়ের সময় কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পেয়ে থাকে বা পাওয়ার অধিকার লাভ করে। বিয়ে ধার্য করার কথা এলেই প্রথমে দেনমোহর চূড়ান্ত করতে হয়। দেনমোহর চূড়ান্ত করার মাধ্যমে বিয়ের সময় ও ক্ষণ নির্ধারিত হয়। এটি স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। স্ত্রীকে ছোঁয়ার আগে এ অধিকার স্বামীকে আদায় করতে হয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে দেনমোহর প্রসঙ্গে বলেন-

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا

‘আর তোমরা স্ত্রীদের খুশি মনে তাদের মোহর দিয়ে দাও। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।’ (সুরা নিসা: আয়াত ৪)

মোহরানা ও কাবিননামার মধ্যে পার্থক্যঃ

কাবিননামা বলতে বিবাহ সম্পাদনের লিখিত চুক্তি বোঝায়। একে নিকাহনামা বলেও উল্লেখ করা হয়। মোহরানা ও কাবিননামার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

নর ও নারীর দাম্পত্য জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করিবার জন্য বিবাহের সময় পাত্র ও পাত্রী পক্ষের পরস্পরের সম্মতিতে কতিপয় শর্ত চুক্তি নামার ভিত্তিতে অর্থাৎ পাত্র-পাত্রীর পূর্ণ নাম ঠিকানা, বিবাহের তারিখ, মোহরের পরিমাণ, উকিল ও সাক্ষীগণের নামও ঠিকানা এবং আরও কতিপয় শর্তসমূহ কাজীর অফিসে সরকারী ফরমে লিপিবদ্ধ করাকে কাবিন নামা বলা হইয়া থাকে।

এই কাবিন নামা স্ত্রী জাতির মান-সম্মান, ইজ্জৎও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য রক্ষা কবজ বা দলিল হিসাবে পরিগণিত। এই কাবিন নামায় পাত্র-পাত্রী পক্ষের নামও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা হয়। ইহাতে পাত্র-পাত্রীর নাম ঠিকানা, বয়স, প্রথম বিবাহ না দ্বিতীয় বিবাহ, দ্বিতীয় বিবাহ হইলে উহার কারণসমূহ, পাত্র-পাত্রীর দস্তখত, উকিল ও সাক্ষীগণের দস্তখত এবং যে বিবাহ পড়াইয়াছেন তাহার দস্তখত দিতে হয়। ইহাতে আরও উল্লেখ থাকিবে দেনমোহরের পরিমাণ, নগদ ও বাকীর সংখ্যা, খোরপোষের পরিমাণ, স্ত্রীকে তালাক লইবার ক্ষমতা এবং অন্যান্য শর্তাদিসমূহ।

অনেক পুরুষগণ উচ্ছৃঙ্খল ও স্বেচ্ছাচারী হইয়া স্ত্রীদের উপর নানা প্রকার উৎপীড়ন ও অত্যাচার করিয়া থাকে, বিভিন্নভাবে অকথ্য নির্যাতন ও দুর্বব্যবহার করিয়া থাকে। তাই পুরুষগণ যাহাতে দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীগণের সহিত যাহা ইচ্ছা ব্যবহার করিতে না পারে সেই জন্য কাবিননামা সম্পাদন করা অতি উত্তম প্রথা বা নিয়ম। কাবিনের মধ্যে লিখা থাকিবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের কারণে মনোমালিন্য বা অবর্গতার সৃষ্টি হইলে উহা দূর করিবার জন্য ইচ্ছা করিলে স্ত্রী তাহার পিত্রালয় অবস্থান করিবে। স্বামী সেখানে স্ত্রীর জন্য বাজার দর হিসাবে তাহার খোরপোষের ব্যবস্থা করিবে।

স্বামী নিরুদ্দেশ হইলে বা স্ত্রীর খোজ খবর না লইলে ছয়মাস বা এক বৎসর অপেক্ষা করিয়া স্ত্রী তালাক নামা সম্পাদন করিবার ক্ষমতা লাভ করিবে। ইত্যাদি শর্তসমূহ কাবিন নামায় উল্লেখ থাকিবে। আবার স্ত্রী অন্য লোকের কুপরামর্শে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করিয়া স্বামীকে তালাক দিয়া অন্য পুরুষকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করা অন্যায় বা হারাম। সুতরাং প্রতিটি বিবাহের পূর্বে কাবিন নামা সম্পাদন করা প্রত্যেক কন্যার পিতার বা ওলির জন্য অবশ্য কর্তব্য কার্য। ইহা একটি শরীয়ত সম্মত সরকারী আইন বটে।

বিবাহের পূর্বে বিবাহ বন্ধনের বিনিময়ে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে যে অর্থ প্রদান করা হইয়া থাকে, তাহাকে মোহর বা দেনমোহর বলা হইয়া থাকে। বিবাহ কার্য সম্পন্ন করিবার পূর্বেই দেন মোহর ঠিক করিতে হয় এবং বিবাহ পড়াইবার পরে উহা প্রদান করা নিয়ম। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার্য করিয়া উহার অর্ধেক বাকী রাখিয়া পরে শোধ করিবার অঙ্গিকার করাইয়া বিবাহ পড়ার দুরূস্ত আছে। আর মোহরানার অর্থ কিছু পরিমাণ আদায় না করিলে বিবাহ দুরুস্ত হইবে না। মোহরানার অর্থের পরিবর্তে ঐ পরিমাণ স্বর্ণের জেওর স্ত্রীকে দেওয়া জায়েজ আছে।

মোহর ধার্য করিবার সময় পাত্রের সামর্থের প্রতি লক্ষ রাখিয়া দেনমোহর ধার্য করিতে হয়। কেননা স্ত্রীর দেনমোহর অর্থ আদায় করা স্বামীর উপর ফরজ। যদি স্বামী স্ত্রীর দেন মোহরের অর্থ পরিশোধ না করিয়া মৃত্যু মুখে পতিত হয়, তবে স্বামী ঋণী থাকিবে এবং রোজ হাশরে বিচারের সময় ইহার জন্য দোযখে যাইতে হইবে। তবে যদি স্ত্রী মাফ করিয়া দেয় তবে নাজাত পাইতে পারে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে এরশাদ করিয়াছেন- “হে নবী! আমি আপনার স্ত্রীগণকে আপনার জন্য হালাল করিয়াছি, যাহাদিগকে আপনি মোহরানা দিয়াছেন।”

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন-” তাহাদিগকে বিবাহ করিতে তোমাদের দোষ নাই যদি তাহাদের মোহরানা দিয়া থাক। তোমাদের স্ত্রীগণকে তাহাদের মোহরানা সদকা স্বরূপ দাও। কিন্তু যদি তাহারা ইহার কিছু অংশ মাফ করিয়া দেয়, তাহা সন্তুষ্ট চিত্তে উপভোগ কর। হযরত নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করিয়াছেন-”নিশ্চয়ই সেই বিবাহে বেশী বরকত হয়, যে বিবাহে মহর খুব কম হয়।” হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) আরও ফরমাইয়াছেন-”ঐ মেয়ে সব চাইতে ভাল, যে দেখিতে সুন্দরী ও যাহার মোহর খুব কম।”

ঋণ করে হজ্ব করা কি বৈধ - Is it legal to perform Hajj on loan?
বৃষ্টিতে ভেজার আগে যা জানা জরুরি-What is important to know before getting wet in the rain
মুসলিম মেয়েদের আধুনিক নাম