বিতর নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম - Correct rules for praying witr prayer

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম কী?

বিতর (وتر) শব্দটি আরবি। অর্থ হচ্ছে বিজোড়। এ নামাজ তিন রাকাআত বিধায় এটিকে বিতর বলা হয়। কেউ কেউ বিতরের নামাজ এক রাকাআতও পড়ে থাকেন। ইশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়া ওয়াজিব। আর রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়ার পর জামাআতবদ্ধভাবে ইমামের সঙ্গে বিতর নামাজ পড়া যায়। বিতরের নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়ে বলেন, বিতরের নামাজ পড়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করবে না, আমাদের জামাআতের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ)

বিতর নামাজের সময়

বিতর নামাজের সময় হল, এশার নামাজের পর থেকে নিয়ে ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। উক্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে এ নামায আদায় করবে; যেমন ইতিপূর্বে খারেজা ইবনে হুযাফা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে শেষ রাত্রে অর্থাৎ ফজরের পূর্বে আদায় করা উত্তম। সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনাে রাতের প্রথম ভাগে কখনাে দ্বিতীয় ভাগে এবং অধিকাংশ সময় শেষ ভাগে বিতর নামায পড়েছেন।

বিতর নামাজ কত রাকাত

আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? জবাবে তিনি বলেন, রমজানে এবং রমজানের বাইরে রাসুল (সা.) ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কোরো না! এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহিহ বুখারি : ১/১৫৪, হাদিস ১১৪৭; সহিহ মুসলিম : ১/২৫৪, হাদিস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮, হাদিস ১৬৯৭)

সাদ ইবনে হিশাম (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন, রাসুল (সা.) বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। (সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮; হাদিস ১৬৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৪/৪৯৪, হাদিস ৬৯১২)।

ইমাম হাকেম (রহ.) হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ।

বিতর নামাজের নিয়ত

প্রত্যেক ইবাদাতের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হচ্ছে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই; যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে; মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।

বিতর নামাজের পদ্ধতি

বিতর নামাযের পদ্ধতি নিয়ে মুসলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। সাধারণত তিন রাকআত বিতর নামায পড়া হয়। শেষ রাকআতে রূকুর পূর্বে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়া হয়। আপনি চাইলে এক রাকাত বিতর নামায পড়তে পারবেন। ১ রাকাত বিতর সালাত আদায় করতে অন্যান্য সালাতের মত সূরা ফাতিহাসহ অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া। ওই সূরাটি সম্পূর্ণ পড়ার পর দোয়া কুনুত পাঠ করে রুকু এবং সেজদা দেওয়া। শেষে সালাম ফিরাবেন। তিন রাকাত বিতর নামাজের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।

বেতের নামাজের সূরা

উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন রাকাত বিতরের ১ম রাকাতে সূরা আ’লা, ২য় রাকাতে সূরা কাফিরুন ও ৩য় রাকাতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। ঐ সাথে ফালাক ও নাস পড়ার কথাও এসেছে।

হাকেম ১/৩০৫, আবু দাউদ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৬৯, ১২৭২।

বেতের নামাজের দোয়া

হাদিসে পাকে একাধিক দোয়া কুনুত রয়েছে। তবে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিভিন্ন বর্ণনার আলোকে বর্ণিত দোয়া কুনুতটি হলো-

اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নুমিনুবিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইরা ওয়া নাশকুরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাইয়্যাফঝুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা নাবুদু, ওয়া লাকা নুসাল্লি ওয়া নাসঝুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু, নারঝু রাহমাতাকা ও নাখশা আজাবাকা, ইন্না আজাবাকা বিল-কুফ্ফারি মুলহিক্ব।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করি। তোমার ওপর ঈমান আনি। তোমার ওপরই ভরসা করি। আর তোমার প্রশংসা করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। অকৃতজ্ঞ হই না। যে তোমার নাফরমানী করে, আমরা তাকে ত্যাগ করি, বর্জন করি।

হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং সেজদা করি। তোমারই দিকে ধাবিত হই এবং তোমারই আনুগত্য করি। তোমার রহমতের আশা রাখি আর তোমার আজাবকে ভয় করি। নিশ্চয়ই তোমার আজাব কাফেরদের ধরে ফেলবে।’

ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম - Rules for praying Eid-ul-Azha
জামায়াতে নামাজ পড়ার ফজিলত-Virtues of praying in congregation
ঘুমানোর দোয়া ও ঘুম থেকে উঠার দোয়া - Dua to sleep and dua to wake up
রমজানের দোয়া ও আমল - Prayers and deeds of Ramadan
নারী ও শিশুর হজের নিয়ম - Hajj rules for women and children
বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার পর আমল - Actions after being saved from danger
বাংলাদেশের সুফিদের তালিকা - List of Sufis of Bangladesh
জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস - History of Jamaat-e-Islami
হালাল রিজিক বৃদ্ধির আমল - Halal sustenance growth period
আল্লাহ কেন শয়তান সৃষ্টি করলেন? - Why did God create Satan?